গাজায় ফিলিস্তিনিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের দায় স্বীকার করল ইসরায়েল, তদন্ত শুরু

ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য দুই ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে আইডিএফের সদস্যরা। ছবি: ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সৌজন্যে
ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য দুই ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে আইডিএফের সদস্যরা। ছবি: ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সৌজন্যে

গাজায় অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনারা বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন—এমন অভিযোগ অনেকবার এলেও তা বরাবরই অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।

তবে অবশেষে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ স্বীকার করেছে, এই অভিযোগে সত্যতা থাকতে পারে এবং তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।

এবারই প্রথম ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে, সেনারা বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক অভিযানে যোগ দিতে বল প্রয়োগ করে থাকতে পারে। 

এর আগে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সুরঙ্গে ও 'বোমা পেতে রাখা আছে' এমন বাড়িতে ফিলিস্তিনিদের জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়ার নজির রয়েছে।

আইডিএফ জানিয়েছে, সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনিদের ব্যবহারের করা হয়েছে, এটা বিশ্বাস করার মতো গ্রহণযোগ্য তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। যার ফলে বেশ কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে পুলিশের ফৌজদারি অপরাধ তদন্ত বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। 

কয়টি ঘটনা নিয়ে বা কাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সেটা নিশ্চিত করেনি সেনাবাহিনী।

ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে আইডিএফের সদস্যরা। ছবি: ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সৌজন্যে/মূল ছবি ব্লার করা
ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে আইডিএফের সদস্যরা। ছবি: ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সৌজন্যে/মূল ছবি ব্লার করা

আইডিএফ বলেছে, 'চলমান তদন্তের বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব নয়।'

গত বছরের শেষের দিকে সিএনএনের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক ইসরায়েলি সেনা জানান, তার ইউনিট এক ফিলিস্তিনিকে সেনাদের আগে একটি ভবনে প্রবেশ করতে বাধ্য করে।

'যদি সেখানে কোনো বোমা পেতে রাখা হয়, তাহলে "তারা" (ফিলিস্তিনি) বিস্ফোরিত হবে, আমরা নয়', ব্যাখ্যা দেয় ওই সৈনিক।

তিনি দাবি করেন, এই চর্চা এতোটাই বহুল প্রচলিত ছিল যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে এটি 'মশা প্রটোকল' নামে পরিচিতি পায়।

তবে ঠিক কোন মাত্রায় এবং কীভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই কার্যক্রম চালাচ্ছিল, সেটা জানা যায়নি।

তবে গত বছর ওই সেনা ও পাঁচ বেসামরিক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি এটাই ইঙ্গিত করেছে যে এটা পুরো গাজাজুড়েই চলছিল—উত্তর গাজা, গাজা সিটি, খান ইউনিস ও রাফা।

মোহাম্মদ সাদ (২০) নামের এক বেসামরিক ফিলিস্তিনি সিএনএনকে জানান, আইডিএফের সেনারা তা রাফায় আটক করে।

তিনি বলেন, 'তারা আমাদেরকে অনেক কিছু করতে বলত। 

কোথাও কোনো কার্পেট দেখলে সেটা সরাতে বলে নিচে কোনো সুড়ঙ্গ আছে নাকি খুঁজে দেখতে বলত, জানান তিনি।

তারপর বলত, 'সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছবি তুলে নিয়ে আসো'।

'তারপর বাসা থেকে বিভিন্ন জিনিস সরিয়ে আনা, পরিষ্কার করা, সোফা সরানো, ফ্রিজের দরজা খোলা, কাবার্ড খোলা—এরকম অনেক কাজ তারা আমাকে দিয়ে করাত', যোগ করেন তিনি।

অক্টোবরে সিএনএনকে আইডিএফ জানায়, তাদের সামরিক প্রটোকল মতে, 'গাজার আটককৃত বেসামরিক ব্যক্তিদের কোনো ধরনের সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা একেবারেই নিষিদ্ধ।'

Comments