‘আমি এখন আমেরিকা চালাই, পৃথিবীও চালাই’

ট্রাম্পের প্রথম ১০০ ছিল নজিরবিহীন সব ঘটনায় পূর্ণ। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের প্রথম ১০০ ছিল নজিরবিহীন সব ঘটনায় পূর্ণ। ছবি: এএফপি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই সময়টিকে বিশ্লেষকরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গোলযোগের সময় বলে অভিহিত করলেও ট্রাম্প সময়টুকু পুরোপুরি উপভোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ১০০ দিন পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে আটলান্টিক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'প্রথমবার, আমাকে দুটি কাজ করতে হয়েছিল—দেশ পরিচালনা করা ও টিকে থাকা; আমার চারপাশে তখন অসংখ্য দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ ছিল।'

ট্রাম্প বরাবরই দাবি করে এসেছেন, প্রথম মেয়াদে তার উপদেষ্টা ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা হয় অযোগ্য ছিলেন আর নয়তো তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না। এই বক্তব্যে সেই ধারণার প্রতিফল ঘটেছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

ট্রাম্প গর্বের সঙ্গে বলেন, 'দ্বিতীয় মেয়াদে আমি দেশ চালাচ্ছি, পৃথিবীও চালাচ্ছি।'

'অনেক মজা পাচ্ছি', বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প

ট্রাম্পের নিত্যদিনের সঙ্গী এয়ারফোর্স ওয়ান। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের নিত্যদিনের সঙ্গী এয়ারফোর্স ওয়ান। ছবি: এএফপি

গত সোমবার পূর্বসূরি জো বাইডেনের অর্থনৈতিক নীতিমালার সমালোচনা করে সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশালে পোস্ট করেন ট্রাম্প জানান, তিনি আমেরিকার সুদিন ফিরিয়ে আনবেন।

ট্রাম্প বলেন, 'স্লিপি (ঘুমকাতুরে) জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র একদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার হারিয়েছিল। আমি সেই স্রোতের গতি পরিবর্তন করেছি এবং খুব শিগগির আমরা অনেক বিত্তশালী হতে পারব।'

মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন শেষেও জনমত জরিপে দেখা গেছে, সাবেক আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ভোটারদের অনেকেই এখনো তার ওপর ভরসা রাখছেন। এ বিষয়টিও তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদের এই প্রতীকী মাইলফলক উদযাপনের জন্য দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগান সফর করছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। সেখানেই ভোটের আগে প্রচারণার জন্য গিয়েছিলেন তিনি।

অতীতে বহুবার মিশিগান ডেমোক্র্যাটদের করায়ত্ত হলেও গত নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষেই রায় দিয়েছেন ওই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা।

বিশ্বস্তদের কাছে এখনো জনপ্রিয় ট্রাম্প

নেভাদায় এক দোকান মালিক ক্যারেন মাইনার (৫৭) বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, 'তিনি জানেন তিনি কী করছেন।'

নিউ হ্যাম্পশায়ারের অবসরপ্রাপ্ত মেশিন অপারেটর ফ্র্যাঙ্ক টুওটি (৭২) বলেন, 'এখন পর্যন্ত তিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট।'

তবে তিনি জানান, শুল্ক সংশ্লিষ্ট অস্থিতিশীলতায় তিনি 'অর্থনীতি নিয়ে সামান্য হলেও উদ্বিগ্ন।'

ট্রাম্পের প্রধান মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানান, গতকাল সোমবার প্রশাসনের অভিবাসননীতি নিয়ে ব্রিফিং দেওয়ার পর আজ অর্থনীতির ওপর ব্রিফিং দেওয়া হবে।

ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বিতারণ কার্যক্রমের প্রধান কুশীলব টম হোমান বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে দক্ষ কেউ নেই। তার সমকক্ষ কেউ তো নেই-ই, তার ধারেকাছে আসার মতোও কেউ নেই।'

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ট্রাম্পের চারপাশে এখন তার প্রতি বিশ্বস্ত মানুষরাই ঘুরপাক খাচ্ছেন। গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তিনি শুল্ক, পররাষ্ট্র নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিশোধের অপ্রতিরোধ্য খেলায় মেতেছেন।

নিজের জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতার চিহ্ন দেখাতে হোয়াইট হাউস থেকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ছবি সরিয়ে 'নিজের কানে গুলি খেয়েও বেঁচে যাওয়ার' তৈলচিত্র ঝুলিয়েছেন এই খেয়ালী নেতা।

হোয়াইট হাউজে ওবামার এই পোরট্রেট সরিয়ে নিজের তৈলচিত্র ঝুলিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: এক্স থেকে নেয়া
হোয়াইট হাউজে ওবামার এই পোরট্রেট সরিয়ে নিজের তৈলচিত্র ঝুলিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: এক্স থেকে নেয়া

নিজের রুচির প্রতিফলন ঘটাতে স্বর্ণের গহনা দিয়ে ওভাল অফিসকে সজ্জিত করেছেন তিনি।

কমছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সূচক

ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ১০০ দিনে ১৪০টিরও বেশি নির্বাহী আদেশে সই দিয়েছেন ট্রাম্প।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনজীবীদের সংগঠনের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছেন, পরিবেশবান্ধব নীতিমালা বাতিল করেছেন, ইলন মাস্ককে কেন্দ্রীয় সরকারের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধের কাজ দিয়েছেন এবং বহু দেশের আমদানি পণ্যে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করেছেন।

পরে আংশিকভাবে সেই শুল্ক তুলেও নিয়েছেন তিনি।

এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছে।

হোয়াইট হাউজের সামনে ট্রাম্প ও মেলানিয়া। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউজের সামনে ট্রাম্প ও মেলানিয়া। ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি আদেশ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। এর ফলে, সরকার এক নজিরবিহীন আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে এর প্রতিফল ঘটেছে।

বেশ কয়েকটি জরিপে তার জনপ্রিয়তা কমার আভাস পাওয়া গেছে।

গত রোববার ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজের জরিপে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ মার্কিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কার্যক্রমকে সমর্থন করেন।

বিল ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে (অ্যাপ্রুভাল রেটিং) ৫০ শতাংশের নিচে নামেনি। এই তথ্য জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ।

গত সোমবার ট্রাম্প এই জরিপের ফলকে 'ভুয়া সংবাদ' বলে আখ্যা দেন।

ট্রুথ সোশালের পোস্টে গর্ব করে তিনি বলেন, 'আমরা খুব ভালো করছি, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমরা ভালো আছি।'

অপরদিকে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন—ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে 'বাড়াবাড়ি' করে ফেলেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প তার মেয়াদের শুরুতে যেরকম দ্রুততার সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছেন, তা কতদিন চলমান রাখতে পারবেন, তা দেখার বিষয়।

আমেরিকার ইতিহাসে বর্তমানে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হেরে গেলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হতেন সবচেয়ে প্রবীণ।

তিনি প্রচারণার সময় দাবি করেছিলেন, নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জটিল কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরে প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন।

টাইম ম্যাগাজিন ট্রাম্পকে সেই ২৪ ঘণ্টার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, 'অবশ্যই, মানুষ জানে যে ওই সময় আমি যেটা বলেছিলাম, তা মজা করেই বলেছিলাম।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus on july charter 2025

Yunus rules out referendum over July Charter

Chief adviser insists party agreement key to polls; vows justice, reform ahead of election

5h ago