যে কারণে ইহুদি যাজকদের সমর্থন পাচ্ছেন ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ জোহরান

জোহরান মামদানি
নিউইয়র্কের ব্রডওয়েতে ডেমোক্র্যেট নেতা ইহুদি ধর্মাম্বলী ব্র্যাড ল্যান্ডারকে (ডান) সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

নিউইয়র্ক শহরের বেশ কয়েকজন ইহুদি ধর্মযাজক (র‌্যাবাই) আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইপর্বে মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ভোট দিয়েছিলেন। তারা জোহরানকে আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী করতে চান।

এক যৌথ নিবন্ধে নিউইয়র্ক শহরের ইহুদি ধর্মযাজক অ্যান্ডি কাহন, অ্যাবি স্টেইন বারাত ইলমান, এলিন লিপমান ন্যান্সি এইচ ভেইনার ও মিরিয়াম গ্রসম্যান মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।

গত শনিবার তাদের নিবন্ধটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, ইহুদি ধর্মের ঐতিহ্য হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ইহুদিদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই ন্যায়বিচার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া। ইহুদিদের সেই বাণী মেয়রপ্রার্থী জোহরানের প্রচারণায় দেখা গেছে। তাই নিউইয়র্ক শহরের অনেক ইহুদি যাজক চান জোহরান সেই সর্বজনীন মূল্যবোধ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাক।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মেয়র প্রার্থিতার প্রতিযোগিতায় ইহুদি নেতা ব্র্যাড ল্যান্ডার তৃতীয় অবস্থানে থাকায় তিনি প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরানের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় ল্যান্ডার 'বন্ধু' জোহরানকে নিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে এটা তুলে ধরা হচ্ছে যে, ফিলিস্তিনপন্থি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও জোহরান মামদানির প্রতি নিউইয়র্ক শহরের অনেক ইহুদি বাসিন্দার সমর্থন আছে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, নিউইয়র্ক শহরের ইহুদিরা সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি সম্মান জানায়। এসব গর্বিত ইহুদি বহু প্রজন্ম ধরে প্রগতিশীল চিন্তার ঐতিহ্য বহন করে আসছে। ইহুদি পোশাককর্মী থেকে শুরু করে শ্রমিক আন্দোলনের নেতা অথবা সমাজবাদী ও মানবাধিকারকর্মীরা মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির মতো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সেই ঐতিহ্য সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায়।

জরিপে দেখা গেছে—অধিকাংশ আমেরিকান ইহুদি সবার সমান অধিকার ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সবার জন্য শিক্ষা, অভিবাসী ও শ্রমিকদের অধিকার তাদের রাজনৈতিক মূল্যবোধের মূলমন্ত্র। তারা চান সব মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক। সবাই সবার হাতে হাত রেখে ন্যায়বিচারের আওয়াজ তুলুক।

নিবন্ধের লেখকরা মুসলিম হওয়ার কারণে জোহরান মামদানির ওপর তার বিরোধীদের আক্রমণের নিন্দা করেছেন। জোহরানকে ইহুদিবিরোধী হিসেবে প্রচারের নিন্দাও করেছেন তারা।

ওই ইহুদি ধর্মযাজকরা আরও বলেন, জোহরান নিউইয়র্ক শহর থেকে ইহুদিবিদ্বেষ দূর করতে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ। তিনি বিশ্বাস করেন, নিউইয়র্ক শহরে বাড়ি ভাড়া অনেক বেশি। এখানকার বাসগুলো খুব ধীরে চলে।

জোহরান মানুষে মানুষে বিভেদ পছন্দ করেন না। তিনি নিউইয়র্ক শহরের অনেক ইহুদির মতো অভিবাসীদের সমর্থন দেন। তিনি মানবতার কথা বলেন। তিনি চান, নিউইয়র্ক সব অভিবাসীকে স্বাগত জানাক। কে কোথা থেকে এসেছে তা বিষয় নয়।

ওই ইহুদি যাজকরা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলি সরকার ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীরে যা করছে তা ভয়াবহ। তা কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যায় না।

আর এসব কারণে জোহরানকে জোরালো সমর্থন দেওয়া যায় বলে মনে করেন তারা।

সবাই জানেন যে, ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের বাইরে সবচেয়ে ইহুদি বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। পিউ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের তথ্য বলছে—নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ খ্রিস্টান, আট শতাংশ ইহুদি এবং মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাম্বলী তিন শতাংশ করে। কোনো ধর্মই বিশ্বাস করেন না প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জনজরিপ বিভাগের ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে—নিউইয়র্ক শহরে বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ প্রায় ৩৪ শতাংশ, হিস্পানিক বা লাতিনো সাড়ে ২৮ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গ ২২ শতাংশ ও এশীয় ১৫ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago