১৩ হাজার কিমি হেঁটে কেপটাউন থেকে লন্ডন

কেপটাউন থেকে লন্ডন। দুই শহর দুই মহাদেশে। শহর দুইটির ব্যবধান প্রায় ১৩ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার বা আট হাজার ২৬২ মাইল। এই দীর্ঘ পথ হেঁটে চলার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন উগান্ডার অ্যাথলেট ডিও কাটো। উদ্দেশ্য—বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো।
সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিটেনের লন্ডনে পৌঁছান অ্যাথলেট কাটো।
কেপটাউন থেকে প্রায় ১৩ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে লন্ডন পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৫১৮ দিন। দেড় বছরের এই যাত্রাপথে তিনি ২১ দেশে প্রায় ২০০ বার ম্যারাথন দৌড় দেন।

ডিও কাটো ২০২৩ সালের জুলাইয়ে কেপ টাউন থেকে রওনা হন। যাত্রাপথে অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধপ্রবণ অঞ্চল পাড়ি দেওয়াসহ কয়েক সপ্তাহ জেলও খাটতে হয় তাকে।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর লন্ডনে পৌঁছান কাটো। সেখানে ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে শত শত মানুষ তার সঙ্গে যোগ দেন। পরে তিনি পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথে তার যাত্রা শেষ হয়।
লন্ডনে পৌঁছে তিনি তার এই দীর্ঘ যাত্রার অভিজ্ঞতা ও সংকট নিয়ে কথা বলেন। যাত্রাপথে কঠিন মুহূর্ত থাকলেও পুরো অভিজ্ঞতাই মানবতার প্রতি তার বিশ্বাসকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।
ডিও কাটোর এই হাঁটার পরিকল্পনা করেছিলেন মানব অভিবাসনের ইতিহাস ও কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য।
গণমাধ্যমকে বলেন, 'যখন কেউ বলে তুমি যেখান থেকে এসেছো, সেখানেই চলে যাও। তারা বুঝাতে চায় কৃষ্ণাঙ্গদের আফ্রিকায় ফেরত যেতে হবে।'
'আমরা সবাই একজায়গা থেকেই এসেছি। আমি দেখাতে চেয়েছি আমরা কিভাবে অভিবাসী হলাম।'
ইউরোপের কয়েকটি অঞ্চলে হাঁটার সময় প্রতিদিনই পুলিশ ও পথচারীদের কাছ থেকে বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার ঘটনা তার সেই যাত্রাকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
প্রায় আট হাজার কিলোমিটার পার হওয়ার পর আরও কঠিন মুহূর্ত আসে যখন ইউরোপে অন্যান্য আফ্রিকানদের মতো তিনিও বর্ণবৈষম্যের শিকার হন।
কাটো বলেন, 'আমি ৩১৫ দিন হাঁটার পর থামতে বাধ্য হয়েছি। সেসময় আমি দক্ষিণ সুদানে ছিলাম। সেখানে বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে আমাকে তিন সপ্তাহ জেলে থাকতে হয়।'
এ ছাড়া, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সুদান ও ইথিওপিয়াসহ কয়েকটি সংঘাতময় এলাকা পার করতে হয়েছিল তাকে।
সংকটের পাশাপাশি স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে ছিল বোতসোয়ানার কালাহারি হাইওয়েতে ১৫ বছর বয়সী এক ছেলে সঙ্গে হাঁটা। কাটো বলেন, 'ছেলেটিকে দেখে নিজের কৈশোরের কথা মনে পড়ে যায়।'

আরেকটি অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা আসে জানুয়ারিতে, কেনিয়ায়। তখন স্কুলে যাওয়ার পথে একদল শিশু তার সঙ্গে প্রায় আট কিলোমিটার হেঁটে যায়।'
চলার পথের অভিজ্ঞতাগুলো তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তার বিশ্বাস, বিদ্বেষের ওপর মানবতা বিজয়ী হবে। 'মনে হয় ভবিষ্যতে আমরা এমন পৃথিবী তৈরি করব যা হবে বর্ণবৈষম্য মুক্ত।'
কাটো আরও বলেন, 'যদিও এটি আমার জীবদ্দশায় ঘটবে না, আমি বিশ্বাস করি আমার প্রচেষ্টা ও এই লক্ষ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে দেবে।'
Comments