শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণের নিয়ম ও সঠিক সময় নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ

জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুবাইয়াত আলম রুবার কাছ থেকে।
শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণ
ছবি: সংগৃহীত

টয়লেট প্রশিক্ষণ আপনার শিশুর বেড়ে উঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সম্পর্কে জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুবাইয়াত আলম রুবার কাছ থেকে।

শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণ কী ও কখন দেবেন

ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, সাধারণত দেখা যায় আমাদের দেশে শিশুর ৭ মাস কিংবা ১০ মাস বয়স হলেই অনেক পরিবার তাদের শিশুকে পটিতে বসিয়ে দেন, এটা কিন্তু টয়লেট প্রশিক্ষণ না।

শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণ কমপক্ষে ৩ বছর বয়সে শুরু করা উচিত। কখনোই এটা তাড়াতাড়ি শুরু করা যাবে না। যদিও একটা শিশু ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস বয়সের মধ্যেই পায়খানা-প্রস্রাব করার আগে বলে।

ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, একটা শিশুকে তখনই টয়লেট প্রশিক্ষণ দিতে হবে যখন শিশুটি শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত হবে। অর্থাৎ বাবা-মা, অভিভাবক যা বলছেন তা বুঝতে পারবে এবং শারীরিকভাবেও পারবে। টয়লেট প্রশিক্ষণের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেমন-

১. পায়খানা-প্রস্রাব করবে কি করবে না এই জিনিসগুলো যখন শিশু বলতে পারছে অর্থাৎ শরীরের সংকেত বুঝতে পারছে যে পায়খানা বা প্রস্রাব হবে কি হবে না। পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় দেওয়া নির্দেশনা বুঝতে পারছে।

২. শিশু হেঁটে টয়লেটে বা পটি পর্যন্ত যেতে পারছে।

৩. যে কাপড় পরিধান করেছে অর্থাৎ প্যান্ট নিজে নিজে খুলতে পারছে।

৪. কমোড বা পটিতে বসতে পারছে।

৫. শিশু নিজে নিজেই পরিষ্কার করতে পারে এবং নিজেকে পরিষ্কার করে আবার সে কাপড় পরতে পারছে।

৬. কমোডে ফ্লাশ করতে পারে এবং সবশেষে নিজের হাত ধুতে পারছে।

এসব কিছু মিলিয়েই টয়লেট প্রশিক্ষণ। যখন এই বিষয়গুলো শিশু বুঝতে পারবে এবং সে প্রস্তুত, তখনই তার টয়লেট প্রশিক্ষণ শুরু করা উচিত। জোর করে সময়ের আগে টয়লেট প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে অনেক শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হচ্ছে।

শিশুর টয়লেট প্রশিক্ষণের কৌশল

ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, শিশুকে টয়লেটে অভ্যাস করাতে কিছু বিষয় অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

১. পায়খানা বা প্রস্রাবের চাপ অনুভব করলে শিশু যখন বলবে তখন তাকে টয়লেটে নিয়ে যেতে হবে, কমোড বা পটিতে বসাতে হবে।

২. সকালের খাবারের পরে অথবা রাতের খাবারের পরে শিশুকে টয়লেটে নেওয়া যেতে পারে। কারণ খাওয়ার পরে গ্যাস্ট্রোকলিক রিফ্লেক্স হয়। এই রিফ্লেক্স কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে ওই সময় শিশুকে পটিতে বসানো যেতে পারে।

৩. শিশুকে পটিতে বসার ব্যাপারে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে যে, সে পটিতে বসেছে তাতেই সবাই খুশি। পায়খানা-প্রস্রাব না আসলেও অসুবিধে নেই। পটিতে বসার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। অথবা শিশুকে বোঝাতে হবে সে যদি টয়লেটে নিজে নিজে পায়খানা বা প্রস্রাব করতে পারে তাহলে কোনো একটা খেলনা বা উপহার দেওয়া হবে। আর এভাবে বসতে বসতেই দেখা যাবে গ্যাস্ট্রোকলিক রিফ্লেক্স মলত্যাগের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে এবং তা অভ্যাসে পরিণত হবে আস্তে আস্তে।

৪. পটিতে বসার জন্য বা বসতে না চাইলে শিশুকে কখনই জোর করা যাবে না, রাগ দেখানো, বকা দেওয়া, ধমক দেওয়া যাবেনা।

৫. টয়লেট প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হলে অনেক সময় দেখা যায় শিশু কাপড়েই পায়খানা করে ফেলছে, প্রস্রাব করে কাপড় ভিজিয়ে ফেলছে। সেটার জন্য শিশুকে কখনই কোনো ধরনের শাস্তি বা ভয় দেখানো যাবে না।

৬. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পটিতে বসানোর অভ্যাস করাতে হবে। টয়লেটের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

৭. শিশুকে ঢিলেঢালা কাপড় পরাতে হবে। আঁটসাঁট, প্যান্টে চেইন আছে, বিভিন্ন বোতাম আছে এই রকম কাপড় না বরং সহজে খোলা যায় এমন পোশাক পরাতে হবে।

৮. বাইরে কোথাও গেলে শিশুর জন্য অতিরিক্ত পোশাক সঙ্গে রাখতে হবে তাকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার জন্য। কোনো কারণে কাপড় নষ্ট হয়ে গেলেও যাতে সে ভয় না পায়।

ডা. রুবাইয়াত আলম বলেন, জোর করে সময়ের আগে টয়লেট প্রশিক্ষণ দিলে যেমন শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, আবার টয়লেট প্রশিক্ষণ বা অভ্যাসের ভেতরে না আসলেও পায়খানা আটকে রাখলে সেখান থেকে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বর্তমানে শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা অনেকে বেশি দেখা যায়। তাই বাবা-মাকে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে শিশুকে টয়লেট প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

 

Comments