ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করবেন যেভাবে
এই সময়ে আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে হালকা মেকআপও যেন চেহারায় বেশিক্ষণ টিকে থাকতে চায় না। কিন্তু অফিস থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠান- জায়গা বুঝে কমবেশি মেকআপ তো নিতেই হয়।
পোশাকের সঙ্গে মানানসই মেকআপ যেমন সৌন্দর্য ফুটিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, তেমনি মেকআপ যদি কিছুক্ষণের মাঝেই চেহারা থেকে সরে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তাতে আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে কমে যায় এবং অস্বস্তি হতে থাকে। জেনে রাখতে হবে, দামি মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেই মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ হয়ে যায় না। মেকআপকে দীর্ঘ সময় ঠিক রাখতে এবং ওয়াটারপ্রুফ করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়।
চলুন জেনে নিই কৌশলগুলো-
ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করার জন্য সবার প্রথমে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। চেহারায় ময়লা জমে থাকলে মেকআপ কখনোই ঠিকভাবে মিশবে না। সেক্ষেত্রে মেকআপ করার আগে মুখে একটা স্ক্রাব ব্যবহার করে হালকা ম্যাসাজ করে নিতে হবে এবং ত্বক অনুযায়ী ফেসওয়াশ ব্যবহার করে ত্বককে সুন্দরভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
বরফ ঘষে নেওয়া
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করার প্রধান কৌশল বরফ ঘষে নেওয়া। ৩ থেকে ৪ মিনিট পুরো মুখে ভালোভাবে বরফ ঘষে নিলে ত্বক ঠান্ডা হবে এবং ওপেন পোরস বন্ধ করে দিতে সাহায্য করবে। এতে ত্বকের ভেতর থেকে ঘাম বের হতে পারবে না এবং মেকআপ ঠিক থাকবে।
টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
অনেকেই ভেবে থাকেন তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার দরকার নেই। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ত্বক শুষ্ক, তৈলাক্ত বা কম্বিনেশন যেরকমই হোক না কেন মেকআপ করার আগে অবশ্যই ত্বক অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিতে হবে। তার আগে টোনার ব্যবহার করে নিতে হবে।
ফাউন্ডেশনের আগে লুজ পাউডার ব্যবহার
এই কৌশলটি অনেকেরই অজানা। ফাউন্ডেশন মুখে লাগানোর আগে এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর হালকা করে একটি ওয়াটারপ্রুফ লুজ পাউডার ব্যবহার করে নেবেন। এতে ঘাম খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই কৌশলটি ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
কম প্রোডাক্ট ব্যবহার
অনেকেই ভেবে থাকেন, অতিরিক্ত বা পরিমাণে বেশি প্রোডাক্ট ব্যবহারে মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ হবে বা অনেক সময় সেট থাকবে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন,কন্সিলার বা পাউডার ব্যবহারে মেকআপ ক্র্যাক করে ,স্মাইল লাইন পড়ে বা চোখের নিচে ভাঁজ পড়ে যায়। মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ না হয়ে বরং স্মাজ হয়ে যায়। অর্থাৎ, ত্বকে হাত দিলেই মেকআপ সরে সরে যায়। তাই ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করার সময় যতটুকু সম্ভব কম প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে হাই কাভারেজের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশন
ওয়াটারপ্রুফ মেকাপের জন্য অবশ্যই এমন ফাউন্ডেশন বেছে নিতে হবে যা ওয়াটারপ্রুফ। যে ফাউন্ডেশন পানির সঙ্গে মিশে যায় না, সেটি ব্যবহার করলে ঘাম হলে বা অতিরিক্ত গরমে মেকআপ নষ্ট হয় না।
ডুরালাইন ব্যবহার করা
মেকআপ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ১ অথবা ২ ড্রপ ইংলট ডুরালাইন ব্যবহারে ফাউন্ডেশন হবে লং লাস্টিং ও ওয়াটারপ্রুফ। বলা যায়, এটি মেকআপ আর্টিস্টদের ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের একটি গোপন সূত্র। ডুরালাইন অ্যালকোহলমুক্ত, সুগন্ধিহীন এবং এসেনশেল অয়েল ফ্রি, রংবিহীন।
ওয়াটারপ্রুফ লুজ পাউডার দিয়ে মেকআপ সেটিং
পাউডার অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। মেকআপ বেকিং করার জন্য ব্যবহার করা হয় লুজ পাউডার। মেকআপ সুন্দর ভাবে সেট করার জন্য এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে সেট রাখার জন্য ওয়াটারপ্রুফ লুজ পাউডার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর লুজ পাউডার দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট সময় নিয়ে মেকআপ বেকিং করে নিতে হয়। বাজারে বিভিন্ন রকমের ভালো মানের ওয়াটারপ্রুফ লুজ পাউডার কিনতে পাওয়া যায়।
মেকআপ ফিক্সার
মেকআপ ফিক্সার দিয়ে মেকআপ ফিক্স করে নেওয়ার বিষয়টি অনেকেরই হয়তো অজানা। মেকআপ ফিক্সার মেকআপের যে কোনো ধাপে ব্যবহার করে লং লাস্টিং করে নেওয়া যায়। ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে একবার মেকআপ ফিক্সার এবং লুজ পাউডার ব্যবহার করে ও একবার মেকআপ ফিক্সার দিয়ে ২ মিনিট সময় নিয়ে শুকিয়ে নিলে মেকআপ দীর্ঘ সময় ফ্রেশ এবং সেট থাকবে।
ওয়াটারপ্রুফ মাশকারা,কাজল,লাইনার, লিপস্টিক ব্যবহার
মেকআপের সবগুলো প্রোডাক্ট যদি ওয়াটারপ্রুফ ব্যবহার করা যায় তাহলে সম্পূর্ণ মেকআপই খুব সুন্দরভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেট এবং ওয়াটারপ্রুফ থাকবে। প্রোডাক্টের গায়েই লেখা থাকবে প্রোডাক্টটি ওয়াটারপ্রুফ বা স্মাজপ্রুফ কি না।
ওয়াটারপ্রুফ সেটিং স্প্রে ব্যবহার
একটি ভালো মানের ওয়াটারপ্রুফ সেটিং স্প্রে পুরো মেকাপের প্রাণ বলা যায়। মেকআপ হালকা হোক বা ভারী, লং লাস্টিং ওয়াটারপ্রুফ সেটিং স্প্রের ব্যবহারে হয়ে উঠে সতেজ। মেকআপ দীর্ঘ সময় পর যদি নষ্ট হতে থাকে তখন একটু সেটিং স্প্রে দিয়ে পাউডার পাফের মাধ্যমে হালকা করে চেপে সেট করে নিলে আরও কিছুক্ষণ মেকআপ সুন্দরভাবে সেট হয়ে থাকবে।
এই কৌশলগুলো অবলম্বন করলে মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ ও দীর্ঘ সময় সেট থাকবে। আসলেই ওয়াটারপ্রুফ হয়েছে কি না পরীক্ষাও করে নিতে পারেন চাইলে। সেক্ষেত্রে মুখে হাল্কা একটু পানি স্প্রে করে একটা টিস্যু দিয়ে হালকা করে চেপে দেখবেন টিস্যুতে মেকআপ উঠে এসেছে কি না। যদি টিস্যুতে শুধু পানি লেগে থাকে, তবে বুঝে নেবেন আপনার মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ হয়েছে। অতিরিক্ত গরম হোক বা হাল্কা বৃষ্টি, আপনার মেকআপ থাকবে অনেকক্ষণ।
Comments