মসৃণ ত্বক পেতে ঘরেই বানান রাইস ওয়াটার টোনার, জেনে নিন ব্যবহারের নিয়ম

ত্বকে চাল ধোয়া পানি
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

আমাদের আগের প্রজন্ম, মানে মা-খালা, দাদি-নানিরা কিন্তু এত শত বাজারি পণ্যের দেখা পেতেন না। কিন্তু তবু তাদের ত্বকের সুস্থতা আর রূপের চর্চা— দুইই ছিল আকাশছোঁয়া। এর কারণটা লুকিয়ে ছিল তাদের নিজস্ব ঘরোয়া বিভিন্ন টোটকার মধ্যে। যেহেতু বাজারজাত পণ্য তাদের হাতের অত নাগালে ছিল না, সেহেতু তারা নিজেরাই ঘরে থাকা বিভিন্ন দ্রব্য দিয়ে রূপচর্চার সামগ্রী তৈরি করে নিতেন। এরই মধ্যে একটি ছিল চালধোয়া পানি।

কীভাবে তৈরি করবেন

রাইস ওয়াটার টোনার, মানে চালধোয়া পানি থেকে টোনার তৈরি করা আদতে একেবারে পানির মতোই সহজ। ঠান্ডা পানিতে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা কিছু চাল ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে চালটা ছেঁকে নিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি সংরক্ষণ করুন। দুধেল রঙের এই পানিটিই আপনার ত্বকের জন্য ঘরোয়া টোনারের কাজ করবে। ত্বককে দিন দিন আরো সজীব, আরো উজ্জ্বল এবং আরো মসৃণ করে তুলবে এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান।

টোনার হিসেবে চালের পানি যেভাবে ব্যবহার করবেন

যাদের ত্বকে পিম্পল বা অ্যাকনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই টোনারটি খুবই কার্যকর। চার ঘণ্টার মতো চাল ভিজিয়ে রেখে যে পানিটা পাওয়া যাবে, সেটি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। কটন প্যাড এই পানিতে ভিজিয়ে রেখে আস্তে আস্তে মুখে মাখতে হবে। কে-ড্রামার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ত্বকে যে গ্লাস ইফেক্টটা সাধারণত দেখা যায়, সেটি পেতে গেলেও এই ধরনের প্রক্রিয়ায় টোনার তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত ত্বক পরিষ্কার করা বা টোনিংয়ের ক্ষেত্রে ভাত রেখে দিয়ে একটি জলীয় দ্রবণ তৈরি করা হয়।

টোনারের বদলে হতে পারে ফেস মাস্কও

কেউ চাইলে বাজারের ফেস মাস্কগুলো ব্যবহার না করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চালধোয়া পানি ব্যবহার করেই বানিয়ে নিতে পারেন 'রাইস ওয়াটার ফেস মাস্ক'। এজন্য ফ্রিজে জমানো চালধোয়া পানিতে কটন প্যাড ভিজিয়ে নিতে হবে। আর ঘরোয়া মাস্কে পেশাদারি ভাব আনতে চোখ-নাক— এসব অংশের স্থানে কটন প্যাডটা কেটে নিতে হবে। তাহলেই খুব সহজে তৈরি হয়ে যাবে নিজস্ব ফেস মাস্ক, যা ত্বককে দেবে অন্যরকম আর্দ্রতা। ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই মাস্কটি ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে একেবারে 'বেবি সফট'।

উপকারিতা

'ডার্মাটোলজিক্যাল ইউজেস অফ রাইস প্রোডাক্টস: ট্রেন্ড অর ট্রু?' শীর্ষক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ত্বকের যত্ন এবং বিবিধ কসমেটিক পণ্যের ক্ষেত্রে চাল থেকে নিঃসৃত উপাদানগুলোর বেশ ভালো প্রভাব রয়েছে। এতে থাকা ফেনোলিক কম্পাউন্ড, বিটেইন, স্কোয়ালিন, ট্রাইসিন ও রাইস ব্র্যানের আলাদা আলাদা উপস্থিতির ফলে ত্বকের অযাচিত বয়স বৃদ্ধি রোধ করা যায়।

এছাড়াও ত্বককে আর্দ্র রাখতে এই উপাদানগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। রেডিয়েশন থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেওয়া, এমনকি ত্বকে কোনোরূপ ক্ষতের সৃষ্টি হলেও চালের গুঁড়া ব্যবহার করা যায়। ত্বক সংক্রান্ত বিভিন্ন চিকিৎসায় ঘরোয়া টোটকা হিসেবে চালধোয়া পানি বেশ কার্যকর। চালধোয়া পানির ফেনা ত্বকের আনাচ-কানাচ পরিষ্কার করে, বিভিন্ন স্থানে থাকা গর্তগুলোর আকারও কমিয়ে দেয়।

ডার্মাটোলজিস্ট অ্যানা ক্লডিয়া বলেন যে, সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য আমাদের উচিত একেবারেই প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি, এমন চাল ব্যবহার করা। কারণ এতে সব ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে। সাদা চালের চাইতে এই চালগুলো গাঁজন প্রক্রিয়ায় ত্বকের জন্য অধিকতর কার্যকর ভিটামিনের জোগান দিয়ে থাকে।

রেডি-মেড ফর্মুলা

এমনিতে যদিও ঘরে তৈরি করে নেওয়া টোনারই বেশি ভালো, তবে কারো কাছে যদি নিজে থেকে এতকিছু করে চালধোয়া পানি, ফেসমাস্ক বা টোনার তৈরি করাটা ঝক্কির কাজ মনে হয়— তিনি চাইলে বিভিন্ন দোকান থেকেও রাইস ওয়াটার টোনার কিনে নিতে পারেন। ভালো ব্র্যান্ডের টোনারগুলোতে নায়াসিনামাইড, ভিটামিন বি-৩ এবং হোয়াইট উইলো বার্ক এক্সট্রাক্টের মতো উপকারী উপাদান বিদ্যমান থাকে।

প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে চালধোয়া পানি, কিংবা রাইস ওয়াটার ব্যবহার করলে ত্বকে থাকা মেকআপ পণ্যের পরত, সারাদিনের ক্লান্তি, রোদেপোড়া ভাব, ঘাম, ধুলাবালি— সবই ধুয়েমুছে ঝরঝরে লাগবে। বহু বছর পুরোনো ত্বকের যত্নের এই টোটকাটির মাধ্যমে ত্বকের বাড়তি ঝামেলাগুলো থেকে যেমন সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে, তেমনি অ্যান্টি এজিং ক্রিম ছাড়াই ত্বকের বয়সে লাগাম পরাতে পারবেন।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Why landscape-based knowledge is critical for Bangladesh

How will we build the country without landscaping knowledge?

14h ago