ঈদের সাজে মেহেদির রঙিন ছোঁয়া

ছবি: সংগৃহীত

ঈদ মানেই আনন্দ, নতুন পোশাক, সুগন্ধি আতর, মজার মজার খাবার আর প্রিয়জনের সঙ্গে হাসি-আড্ডা। এই আনন্দের মাঝে আরও একটি জিনিস ঈদের আমেজকে বিশেষ করে তোলে—মেহেদি।

হাতে মেহেদির লালচে আভা না থাকলে যেন ঈদের আনন্দটাই অপূর্ণ রয়ে যায়!

ছোটবেলার ঈদের আগের রাত মানেই ছিল এক অদ্ভুত উত্তেজনা। মা, চাচি, দাদি—সবাই একসঙ্গে রান্নাঘরে ব্যস্ত সেমাই-পায়েস, কোরমা-পোলাও রান্নায়; আর অন্যদিকে ভাইবোনেরা গোল হয়ে বসে থাকতাম হাতে মেহেদি লাগানোর জন্য। মা গাছ থেকে মেহেদি পাতা এনে বাটতেন, তারপর একে একে আমাদের হাতে লাগিয়ে দিতেন। কেবল তালুতে গোল করে একটু মেহেদি লাগিয়ে দিলেও খুশি থাকতে হতো।

ছবি: সংগৃহীত

এরপর শুরু হতো অপেক্ষার পালা—কার হাতে সবচেয়ে গাঢ় রং হয়।

এখন আর গাছ থেকে মেহেদি পাতা এনে বাটার দিন নেই। মেহেদি টিউবের সহজলভ্যতার সঙ্গে আছে নানারকম ডিজাইনের ট্রেন্ড। সময় বদলেছে, ফ্যাশনের ধরন বদলেছে, কিন্তু ঈদের সঙ্গে মেহেদির সম্পর্কটা আজও অটুট।

মেহেদি এখন শুধু সাধারণভাবে হাত ভরে দেওয়া নয়, বরং একেকজনের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়।

এবারের ঈদে কোন ডিজাইন বেশি চলছে, দ্য ডেইলি স্টারকে সেটাই জানিয়েছেন মেহেদি আর্টিস্ট ও উনজিলা ডিজাইনের স্বত্বাধিকার দেওয়ান উনজিলা।

তিনি জানান, এবার জনপ্রিয় হয়েছে অ্যারাবিক ডিজাইন। পাশাপাশি ম্যান্ডেলা ও ইন্ডিয়ান ডিজাইনও চলছে।

তিনি বলেন, 'আগে মেহেদি মানেই ছিল হাতে ঘন করে লাগানো, তালু আর আঙুল ভরে দেওয়া। এখন সেই ধারা বদলেছে। ছোট ছোট মোটিফ, সরল নকশা, ফাঁকা জায়গা রেখে আঁকা ডিজাইন—এগুলোই এখন বেশি পছন্দের।'

তিনি আরও বলেন, 'হাতের আঙুলের পাশ দিয়ে রেখা টানা, লম্বা লতার মতো আঁকা, তালুর মাঝে গোল ডিজাইন—এসবই এখনকার ট্রেন্ড। তবে অনেকেই আর্টিস্টের অভিরুচির ওপর ছেড়ে দেন।'

শুধু মেহেদি লাগালেই হবে না, সেটা যেন গাঢ় রংয়ের হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

উনজিলা বলেন, 'অনেকেই মেহেদি শুকানোর আগেই ধুয়ে ফেলেন, এতে রং ঠিকভাবে বসে না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে মেহেদির শুকনো খোসা ঝেরে ফেলতে হবে। এরপর লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে হাতে লাগালে রং আরও গাঢ় হয়। মেহেদির রঙ গাঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী করতে লবঙ্গের ধোঁয়ায় হাত সেঁকে নিতে পারেন।'

বাজারে নানা ধরনের মেহেদি পাওয়া যায়। কিন্তু কেমিক্যাল মেশানো মেহেদি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে অর্গানিক মেহেদি, যা কোনো কেমিক্যাল ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি।

অনেকে ঈদের আগে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মেহেদি উৎসবের আয়োজন করেন। একসঙ্গে বসে সবাই মেহেদি লাগান, গল্প করেন। এমন আয়োজন ঈদের আনন্দকে যেন দ্বিগুণ করে দেয়।

তবে পার্লারে গিয়ে মেহেদি লাগানোর প্রবণতাও বেড়েছে। অনেকে আবার বাসায় মেহেদি আর্টিস্ট ডেকে নেন, যাতে তাদের ইচ্ছামতো ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন।

চাইলেই ঘরোয়া পরিবেশে নিজেই বা কাছের কাউকে দিয়ে মেহেদি লাগিয়ে নেওয়া যায়। এতে বাড়তি খরচও হয় না, আর ঈদের আনন্দও ভাগাভাগি করা যায়।

যত আধুনিক ডিজাইনই আসুক, পাটায় বাটা মেহেদির আবেদন আজও ফিকে হয়নি। সারা দিনের কোলাহল শেষে রাতের বেলা যখন হাতের মেহেদি শুকিয়ে ওঠে, তখন মনে হয় এটাই তো ঈদের আসল আমেজ!

ঈদের সকাল মানেই লালচে মেহেদির রঙিন হাত, নতুন পোশাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখা, আর মনে মনে ভাবা—এই তো, ঈদ এসে গেছে!

 

Comments

The Daily Star  | English
yunus calls on youth to join politics

Yunus urges young people to engage more in politics

Yunus made the call when a group of young political activists from different political parties of Norway called on him at the state guest house Jamuna today

1h ago