বৈশাখের সাজসজ্জায় স্টাইল আর স্বাচ্ছন্দ্যের মেলবন্ধন

বৈশাখের সাজ

বৈশাখ এলেই মন কেমন করে ওঠে। হালখাতার নতুন পাতার মতো, মনে হয় সব শুরু হোক আবার। আর সেই নতুন শুরুর প্রথম চাবিকাঠি—সাজ। বছরের এই একটা দিন আমরা সবাই একটু ব্যতিক্রমী হতে চাই। কেউ পোশাকে, কেউ সাজে, কেউ বা আচরণেই। অনেকটা যেন পুরোনো দিনের খোলস ছেড়ে নতুন কোনো পরিচয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা। সকালবেলা রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে রঙিন জামাকাপড় পরা মানুষজন। কেউ হাসছে, কেউ গানের সঙ্গে পা মেলাচ্ছে, কেউ আবার আম মাখা খেয়ে গরমের স্বস্তি খুঁজছে।

আর এইসব দৃশ্যের মাঝখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে চোখে পড়ে, সেটা হলো পোশাক আর সাজসজ্জা। এই সাজ কিন্তু কেবল একটা দিনের জন্য নয়, এটা যেন একটা মনের প্রস্তুতি। নতুন বছরের প্রথম দিনে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার ইচ্ছেটাই মুখ্য।

পোশাকের রঙে বৈশাখের প্রাণ

পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা রঙের আবেদন এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রঙে এসেছে বৈচিত্র্য। সাদা শাড়ির লাল পাড় এখন জায়গা করে নিচ্ছে মেরুন, কমলা, আসমানি, খয়েরি কিংবা গাঢ় নীলের মতো গাঢ় রংগুলো। গরমের দিনে যারা সুতির শাড়ি পছন্দ করেন, তাদের জন্য মণিপুরি বা জামদানি হতে পারে চমৎকার এক বিকল্প। শুধু আরামই নয়, এই শাড়িগুলোতে থাকে এক ধরনের বাঙালিয়ানার শৈল্পিক ছাপ।

আর শাড়ি মানেই তো ব্লাউজের গল্পও আসবে। হালকা সুতির শাড়ির সঙ্গে একটু ফিউশন ব্লাউজ—কখনো হাতে সূচিকর্ম, কখনো পিঠ খোলা নকশা—এই বৈশাখে নতুন ট্রেন্ড গড়তে পারে। তবে হ্যাঁ, আরামটাই কিন্তু সবার আগে।

সালোয়ার কামিজেও চলছে রঙের খেলা। লাল আর মেরুনের সঙ্গে গোল্ডেন কম্বিনেশন এই বৈশাখে বেশ জমবে। কেউ কেউ একটু হালকা কাজের কামিজ পরেই গয়নার ঝলকে নজর কাড়েন।

ছেলেদের পোশাকে নান্দনিকতার ছোঁয়া

ছেলেদের সাজ মানেই কি শুধু সাদা পাঞ্জাবি? মোটেও না। এবার বৈশাখে ছেলেদের পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য। পাঞ্জাবির রঙে যেমন এসেছে মেরুন, পার্পেল, গাঢ় নীলের ছোঁয়া, তেমনি এসেছে হালকা সুতার কাজ বা রং-তুলির স্টাইলে আঁকা ডিজাইন। যারা একটু আলাদা কিছু চায়, তাদের জন্য ফতুয়া বা টি-শার্টও হতে পারে বিকল্প।

বৈশাখে অনেকে পরিবারের সবাই মিলে একই ডিজাইনের বা একই রঙের পোশাক পরে ঘুরতে পছন্দ করেন। অনলাইনে পছন্দমতো পোশাক বানিয়ে নেওয়া যাচ্ছে, বৈশাখকে ঘিরে এখন তা যেন উৎসবেরই অংশ।

ছোটদের সাজে উৎসবের রং

বাচ্চাদের সাজে বৈশাখ যেন আরও রঙিন। ছোট মেয়েদের জন্য রেডি শাড়ি কিনতে পারেন। আবার ঘাগড়া, ফ্রক, রঙিন কামিজে দিব্যি মানিয়ে যাবে। হাতের তালুতে লাল আলতার ছাপ কিংবা কপালে টুকটুকে টিপ—সবমিলিয়ে বৈশাখ যেন তাদের জন্যও এক অনন্য খুশির দিন। ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি আর আরামের কথা চিন্তা করলে ফতুয়া হতে পারে সেরা পছন্দ।

সাজসজ্জায় হালকা ছোঁয়া, গাঢ় আবেদন

এই সময়টাতে যেহেতু গরম থাকে, তাই মেকআপে ভারিক্কি ভাব না রাখাই ভালো। একটু হালকা বেইজ, কাজল, হালকা পিংক বা মভ লিপস্টিক, আর চোখে একটু ব্রাউন শ্যাডো—এইটুকুই যথেষ্ট। সাজে যেন স্বস্তি থাকে, সেটাই মুখ্য।

চুলের সাজেও রয়েছে বৈচিত্র্য। খোঁপা করে তাতে গুঁজে দেওয়া যায় গাঁদা বা রজনীগন্ধা ফুল। আর কেউ চাইলে বেণিতে গাঁথতে পারেন বেলির মালা। মাটির গয়না এখনো জনপ্রিয়, তবে কেউ কেউ রুপা, মুক্তা বা কাঠের তৈরি অ্যান্টিক গয়নায় নিজের আলাদা স্বাদটা তুলে ধরতে পারেন।

চুড়ির বিষয়েও এসেছে ফারাক। এখন অনেকেই কাঁচের চুড়ির পাশাপাশি অ্যান্টিক বালা কিংবা কাঠের মোটা চুড়ি পরে থাকেন। সেইসঙ্গে টপস বা দুলেও বেছে নেওয়া যায় মাটির, বাঁশের বা বিডসের তৈরি গয়না।

বছরের এই প্রথম দিনটিতে সাজ শুধুই বাহ্যিক ব্যাপার নয়, এটি যেন এক আত্মিক প্রকাশও। আমরা আমাদের রঙে, পোশাকে, হাসিতে, চুলে গুঁজে দেওয়া ফুলে, গলায় পরা হার কিংবা চোখে পরা কাজলে বলে দিই—হ্যাঁ, আমরা বাঙালি।

এই বৈশাখে পোশাকের ব্র্যান্ড, ডিজাইন বা দাম নয়—মূল কথা হলো আপনি নিজেকে কতটা ভালোবাসছেন, কেমন আরাম পাচ্ছেন, আর কতটা আপন হয়ে উঠতে পারছেন। তাই অন্যদের মতো না হয়ে, নিজের মতো করে সাজুন। যে রঙ আপনাকে মানায়, তাই পরুন। নিজের ভেতরের বাঙালিয়ানাকে উসকে দিন এই উৎসবের দিনে।

নববর্ষ আসুক খুশির বার্তা নিয়ে, নতুন রঙে রাঙিয়ে দিক আমাদের জীবনের পাতা। শুভ নববর্ষ!

 

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

8h ago