বিশ্বজুড়ে ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবার

ছবি: রয়টার্স

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানেই খাবারের নানা আয়োজন। ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে উদযাপন করা হয় ঈদ। ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দেয় সুস্বাদু সব খাবার। একেক দেশের খাবারের স্বাদ একেক রকম।

আসুন তবে জেনে নেই বিশ্বের কয়েকটি দেশের ঈদের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার সম্পর্কে।

মরক্কো: লাসিদা, তাজিন

'লাসিদা' দিয়ে ঈদের সকাল শুরু হয় মরক্কো'তে। এটি এমন একটি খাবার যা দেখতে চালের পুডিংয়ের মতো কিন্তু এতে থাকে কুসকুস, মাখন, মধু এবং মশলা। এটা মিষ্টি হয় খেতে। শুরু মিষ্টি দিয়ে হলেও শেষ হয় ঈদের বিশেষ খাবার 'তাজিন' দিয়ে। সবজির সঙ্গে মাছ, মাংস ভাপে দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবার। মরক্কোর বিশেষ এই খাবারটি শুধু মরক্কোতেই নয়, পুরো আফ্রিকাতেই বেশ জনপ্রিয়।

দক্ষিণ এশিয়া: সেমাই, শির খরমা

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশগুলোতে সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবারে ঈদের সকাল শুরু হয়। ঘি, চিনি দিয়ে বিভিন্ন স্বাদের তৈরি সুস্বাদু সেমাই রান্না করা হয়। অনেকে আবার ঘন দুধ ও নারকেলের ঝুরি দিয়ে তৈরি করে থাকে সেমাই। পাকিস্তানে 'শির খুরমা' নামে এক বিশেষ ধরনের সেমাই তৈরি করা হয়। এটি তাদের দেশে ঈদের জনপ্রিয় খাবার।

ইন্দোনেশিয়া: কেটুপাত

সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস ইন্দোনেশিয়ায়। এখানে ঈদের ঐতিহত্যবাহী খাবারের নাম হলো 'কেটুপাত'। পাম গাছের পাতায় মোড়া চালের আটার পিঠার মতো দেখতে এটি। মাংসের বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে (ওপর আয়াম- নারকেল দুধ দিয়ে রান্না মুরগি অথবা সাম্বাল গোরেং কেনটাং- বিফ এবং আলুর ডিশ) কেটুপাট পরিবেশন করা হয়।

আফগানিস্তান: বোলানি

আফগানিস্তানে ঈদের সকালে বিশেষ এক খাবার রান্না করা হয়, যার নাম 'বোলানি'। পাতলা রুটির ভেতরে সবজি, আলু, ডাল বা কুমড়ার পুর দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এই মুখরোচক খাবারটি। পরিবেশন করা হয় টক দই দিয়ে। আফগানিস্তানের মুসলিমদের কাছে এই খাবারটি ঈদ ছাড়াও অন্যান্য সময় খুবই জনপ্রিয়।

মধ্যপ্রাচ্য: ল্যাম্ব রোস্ট, বাটার কুকিজ

ঈদ উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মাংসজাতীয় খাবার 'ল্যাম্ব রোস্ট' ভীষণ জনপ্রিয়। তবে এখানে মাখন দিয়ে তৈরি করা হয় এক বিশেষ ধরনের বিশেষ কুকি বা বিস্কুট। বিশেষ এই বিস্কুটের মধ্যে খেঁজুর বা আখরোটের পুর দিয়ে ওপরে বাদাম ও হাল্কা চিনির গুঁড়া মিশিয়ে ঈদের খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই কুকির নামও ভিন্ন। সিরিয়ায় মামুল, ইরাকে ক্লাইচা ও মিশরে কাহাম নামে এই কুকিজ পরিচিত।

যুক্তরাজ্য: বিরিয়ানি

যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের কাছে ঈদের দিনে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার এখন 'বিরিয়ানি'। চাল, মাংস এবং সবজি দিয়ে তৈরি এই মুখরোচক খাবারের সঙ্গে থাকে রাইতা (শসা, পুদিনা এবং দই ডিপ), সালাদ এবং আচার।

চীন: শানজি

চীনের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার 'শানজি'। ময়দার লেই দিয়ে মোটা করে নুডলস বানিয়ে তা ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হয়। তারপর তা পিরামিডের মতো করে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। চীনের মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের খুবই জনপ্রিয় খাবার এটি। ঈদের আগে তাদের দোকানে ঢুকলে মুচমুচে শানজির দেখা মিলবেই মিলবে।

রাশিয়া: মানতি

রাশিয়ানদের কাছে ঈদের দিন সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার 'মানতি'। এটি মূলত এক ধরনের ডাম্পলিং বা পুলি পিঠা। আটার ভেতর ভেড়া বা গরুর মাংসের কিমার পুর দিয়ে তা ভাপ দেওয়া হয়। রেডি হয়ে গেলে মাখন এবং টক ক্রিম দিয়ে পরিবেশন করা হয়। রাশিয়ায় অঞ্চল ভেদে মানতির রেসিপি একটু এদিক ওদিক হয় তবে মূল ব্যাপারটা একই।

মালয়েশিয়া: রেনডাং

যেকোনো উৎসবে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার 'রেনডাং'। এটি খেতে আমাদের দেশের ঝাল মাংসের মতো। রান্না করা হয় নারিকেল দুধ দিয়ে। ঈদে রেন্দাং চাই-ই চাই। এটি ছাড়া কেমন যেন অপূর্ণ থেকে যায় আয়োজন। ভাত অথবা রুটির সঙ্গেও বেশ আয়েশ করে খাওয়া যায় রেনডাং।

লিবিয়া: আসিদা

জেলি জাতীয় এক ধরনের ডেজার্ট হলো 'আসিদা'। আপনি যদি কখনো লিবিয়ায় ঈদ উদযাপন করেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সুস্বাদু এই জেলি জাতীয় ডেজার্ট পরিবেশন করা হবে। লিবিয়ানরা গমের ময়দা এবং মধু ব্যবহার করে তৈরি করেন আসিদা।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

7h ago