ডেঙ্গু হলে যা খাবেন
শহরাঞ্চলে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক প্রকোপ গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সেড়ে উঠার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সুষম ডায়েটের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব, পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির মতো গুরুতর জটিলতা রোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ এবং যে ভাইরাসের কারণে রোগটি হয়, তার নাম ডিইএনভি। আক্রান্ত হওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলোর স্পষ্ট হয়, যার মধ্যে আছে ব্যাপক জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি, মাংসপেশিতে ব্যাথা, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যাথা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে ত্বকে র্যাশ হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিনে ভরপুর খাবার দিয়ে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো অত্যাবশ্যক।
রোগের প্রাথমিক ধাপে তরল খাবার গ্রহণ করাটাই শ্রেয়, যেহেতু শক্ত খাবারের তুলনায় শরীর এই খাবার সহজে গ্রহণ করতে পারে। অল্প অল্প করে তরল খাবার গ্রহণ করলে শরীর থেকে চলে যাওয়া পানির শূন্যস্থাণ পূরণ হতে পারে, একইসঙ্গে শরীরে তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রোগী যখন ডেঙ্গু থেকে উত্তরণের ধাপে থাকে তখন দ্বিতীয় ধাপে সহজে হজমযোগ্য খাবার, যেমন- খিচুড়ি, দই, ভাত, পোরিজ, সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ শাকসবজি যেমন পেঁপে, কুমড়ো, সবুজ মটর ইত্যাদি খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে।
স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। নরম ডায়েটের পাশাপাশি ফলের রস, স্যুপ এবং ডাবের পানির মতো প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা প্রয়োজন। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
পাকা কলা, পাকা পেঁপে এবং তরমুজের মতো ফলগুলোও খাওয়াতে পারেন এবং রোগী যখন ধীরে ধীরে আরও সুস্থতা অর্জন করবেন, তখন তৃতীয় ধাপে তাকে স্বাভাবিক সময়ের মতো পুষ্টিকর খাবার দিতে পারেন।
যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে
শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ডেঙ্গু হলে অনেক সময় শরীরে প্রচুর পানির ঘাটতি তৈরি হয়। ডাবের পানি এক্ষেত্রে অনেক উপকারী হতে পারে। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট ও পুষ্টি থাকে। লেবুর পানি ভিটামিন সির খুব ভালো উৎস। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে আদা পানি গ্রহণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এটি অনেক ডেঙ্গু রোগীর বমি বমি ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে। কখনও কখনও শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) গ্রহণের পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এটি শরীরে অত্যাবশ্যক পটাসিয়াম সরবরাহ করে।
প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্রোকলি ভিটামিন কের খুব ভালো একটি উৎস, যা রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে ভূমিকা রাখে। যদি হঠাৎ করে প্লাটিলেট অনেক কমে যায়, তাহলে ব্রোকলি খাওয়ানো যেতে পারে। এই খাবারটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজে পরিপূর্ণ।
পালং শাক আয়রন, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই খাবারটি প্লাটিলেট বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়।
ডালিম খুবই পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ ফল, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং ক্লান্তির অনুভূতি হ্রাস করে। আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় ডালিমকে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়।
গরুর দুধের পরিবর্তে ছাগলের দুধ পান করাও এক্ষেত্রে উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
হলুদ একটি এন্টিসেপটিকসমৃদ্ধ খাবার এবং এটি শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে ভূমিকা রাখে। দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠা সম্ভব। মেথি সহজে ঘুমানো এবং যন্ত্রণা হ্রাসের ক্ষেত্রে উপকারী। জ্বর অনেক বাড়তে থাকলে সেটিকে স্থিতিশীল করার জন্যও মেথি গ্রহণ করা যেতে পারে।
কালো আঙুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং রক্তের গঠনের জন্য সহায়ক একটি ফল। পেয়ারাও প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়াতে কার্যকরী।
ডেঙ্গু রোগীরা বিটরুটের স্যুপ খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন (বি৯, ভিটামিন সি), খনিজ পদার্থ (ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন) রয়েছে। এগুলো রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে খুব সহায়ক। টমেটো স্যুপ ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
প্রক্রিয়াজাত খাবারের পাশাপাশি তৈলাক্ত, মশলাদার ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খাবারের ফলে পেটে অ্যাসিড জমতে পারে, পিএইচ স্তর নেমে যেতে পারে যার ফলে আলসার ও অন্ত্রের দেয়ালের ক্ষতি হতে পারে।
ক্যাফিনেটেড পানীয় দ্রুত হৃদস্পন্দন বাড়ায়। ফলে এসব পানীয় ক্লান্তি এবং পেশীর ক্ষতি করতে পারে। এটি আমাদের শরীরে পানিশূন্যতাও সৃষ্টি করে।
চৌধুরী তাসনিম হাসিন ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান।
অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল
Comments