লাচ্ছি-মাঠা-লাবাংয়ের পার্থক্য জানেন কি

মাঠা, লাচ্ছি ও লাবাং। ছবি: সংগৃহীত

গরমের দিনে তৃপ্তি পেতে অনেকেরই পছন্দ লাচ্ছি, মাঠা ও লাবাং। এক সময় ঘরেই তৈরি হতো ঘোল ও মাঠা। তারপর লাচ্ছি ও লাবাংয়ের মতো পানীয়ও প্রচলিত হলো রসনার স্বাদ মেটাতে।

অনেক আগে থেকেই বাসা-বাড়ির পাশাপাশি পুরান ঢাকার অনেক দোকান বিক্রি করত মাঠা। এখন এর সঙ্গে লাচ্ছি, লাবাংও যুক্ত হয়েছে। লাচ্ছি জায়গা করে নিয়েছে প্রচুর কফিশপ ও জুসবারগুলোয়। এর বাইরে বাণিজ্যিকভাবেও বিভিন্ন ব্র‍্যান্ড বাজারে এনেছে এই পানীয়গুলো।

প্রাথমিকভাবে লাচ্ছি, মাঠা, লাবাং প্রতিটি পানীয়র সঙ্গেই সম্পর্ক আছে দুধের। তবে ৩টি পানীয়র প্রস্তত প্রণালিতে রয়েছে পার্থক্য। যদিও কোনোটিই ঘরে তৈরি করা তেমন কঠিন নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক এগুলোর প্রস্তুত প্রণালি। বুঝে নেওয়া যাক পার্থক্য।

লাচ্ছি

শুরু করা যাক তুমুল জনপ্রিয় পানীয় লাচ্ছি দিয়েই। লাচ্ছি বানাতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে দই। এক্ষেত্রে টক দইয়ের চেয়ে মিষ্টি দই তুলনামূলকভাবে ভালো হবে। এর সঙ্গে দিতে হবে ঠান্ডা দুধ। ইচ্ছা হলে দিতে পারেন কাঠবাদাম ও পেস্তাবাদাম বাটা।

আলাদাভাবে পানি মেশানোর প্রয়োজন নেই। তবে স্বাদে ভিন্নতা আনতে চাইলে রুহ আফজা/ গোলাপজল সামান্য পরিমাণে দিতে পারেন।

ব্লেন্ডারে ৩ কাপ মিষ্টি দই, ১ কাপ ঠান্ডা দুধ, আধা কাপ মালাই (ঐচ্ছিক), পেস্তা বাদাম ও কাঠ বাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, ১ কাপ বরফকুচি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয়ে যাবে লাচ্ছি। বেশি ভারি হয়ে গেলে ব্লেন্ড করার সময় অল্প পানি যোগ করতে পারেন। পরিবেশনের সময় যোগ করতে পারেন সামান্য জাফরান।

মাঠা

এবার আসা যাক মাঠায়। ঢাকার মাঠার রয়েছে আলাদা খ্যাতি ও পরিচিতি। এক্ষেত্রে আমাদের সবার আগে প্রয়োজন হবে টক দই। এর বাইরে পানি, বরফ কুচি, লবণ ও লেবুর রস প্রয়োজন হবে।

১ কাপ টক দই, ২ কাপ পানি, আধা চা চামচ লবণ, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ১ কাপ বরফ কুচি নিয়ে একসঙ্গে বড় কোনো বোল বা জগে নেবেন। এরপর ডালঘুটনি দিয়ে ভালো করে ঘুটলে তৈরি হয়ে যাবে মাঠা। উল্লেখ্য, ঘোল ও মাঠাকে অনেকে সমার্থক মনে করেন।

প্রস্তুত প্রণালি প্রায় একই হলেও ঘোলে বিট লবণ, কাঁচা মরিচ বাটা, পুদিনা পাতা বাঁটা লাগে। পানি ও লেবুর রসও দিতে হয় মাঠার চেয়ে বেশি পরিমাণে। এভাবে মাঠা ও ঘোলের স্বাদে পার্থক্য তৈরি হয়।

লাবাং

এই পানীয়টি মধ্যপ্রাচ্যের। তুলনামূলকভাবে মশলাদার। মধ্যপ্রাচ্যে এটি লেবেন/ লাবান নামে পরিচিত। এটি তৈরি করতে গেলে আগে তৈরি করে নিতে হবে মাঠা। কিংবা ঘোল দিয়েও কাজ হবে। এর বাইরে পেস্তা বাদাম বাটা, সামান্য পরিমাণ জিরা গুঁড়া, দারুচিনি, লবণ, চিনি প্রয়োজন হবে।

প্রথমে ৩ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে নিতে হবে। এরপর দুধে ননি বা ক্রিম সরিয়ে নিতে হবে। এরপর তাতে ১ টেবিল চামচ চিনি, ৩ টেবিল চামচ পেস্তা বাদামবাটা, স্বাদমতো লবণ, সামান্য জিরা গুঁড়া (১/৪ চা চামচ), ৩/৪ টি ছোট টুকরোর দারুচিনি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। অথবা আগে তৈরি করা মাঠা থাকলে তাতে স্বাদমতো লবণ, চিনি দিয়ে, বাদাম বাটা, জিরা গুঁড়া ও দারুচিনি যোগ করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনমতো বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন লাবাং।

পার্থক্য

  • লাচ্ছি, মাঠা, লাবাং ৩টি পানীয়ই গরমের দিনে খুব প্রশান্তিকর। তবে এর ভেতরে পার্থক্য মূলত দইয়ের ব্যবহারে। এ ছাড়া, প্রস্তুত প্রণালির পার্থক্য তো আছেই। লাচ্ছিতে ব্যবহৃত হয় মিষ্টি দই, সে জায়গায় মাঠায় প্রয়োজন হয় টক দই। আবার লাবাংয়ে প্রয়োজন হয় মাঠা/ ঘোল।
  • লাচ্ছি ও লাবাং তৈরিতে সব উপাদান মেশানোর জন্য ব্লেন্ডারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মাঠা করতে হয় হাতে কিছু সময় ধরে ঘুটিয়ে।
  • স্বাদের দিক থেকে মাঠার চেয়ে লাচ্ছিতে মিষ্টি বেশি। মাঠার চেয়ে লাচ্ছি ও লাবাং –২টিই বেশি মশলাদার। লাচ্ছি তুলনামূলকভাবে বেশি ঘন। লাবাং ও মাঠা সে তুলনায় তরল।

     

Comments

The Daily Star  | English

Bridge this year, full benefits not before 2030

The Bangabandhu Railway Bridge over the Jamuna is set to be inaugurated next month, but people will not get the full benefit of it until at least 2030.

3h ago