কোন সাইজের চিংড়িতে কত কোলেস্টেরল, কারা খাবেন না

জেনে নিন পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মীর কাছ থেকে।
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশে চিংড়ি অতি জনপ্রিয় একটি খাবার। চিংড়ির পুষ্টি উপাদান রয়েছে, আছে বিভিন্ন উপকারিতা। কিন্তু চিংড়ি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এতে থাকা কোলেস্টেরল শরীরের ক্ষতি করে থাকে।

চিংড়িতে কী পরিমাণে কোলেস্টেরল আছে এবং কাদের জন্য এটি ক্ষতিকর এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, 'চিংড়ি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। এটি প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিনের চাহিদার প্রায় ৪২ শতাংশ চিংড়ি পূরণ করতে পারে। এটির মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যেটি শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ও ভীষণ উপকারী। এটিতে ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলক কম। ভিটামিন ও মিনারেলসের পরিমাণও অনেক। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে চিংড়িতে।'

চিংড়ি খাওয়ার উপকারিতা

  • মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
  • ক্ষত বা আঘাতের চিহ্ন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে
  • ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে
  • আয়োডিনের ঘাটতি কমায়
  • হাড় মজবুত করে। চিংড়িতে আছে প্রায় ১৪ শতাংশ ফসফরাস। ফলে চিংড়ি খেলে হাড়ের ক্ষয়রোধ হওয়ার পাশাপাশি হাড় হয় মজবুত ও শক্ত
  • রক্তস্বল্পতা মেটাতে পারে। চিংড়ি মানুষের শরীরের ভিটামিন বি ১২ এর চাহিদা দূর করে। পাশাপাশি রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়

চিংড়ি থেকে এসব উপকারিতা পাওয়া গেলেও অনেক ক্ষেত্রে চিংড়ি খাওয়া পরিহার করতে বলা হয়। কারণ চিংড়িতে রয়েছে কোলেস্টেরল। চিংড়ির কোলেস্টেরল শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ালেও, যাদের হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে তাদের জন্য ক্ষতিকর।

আমেরিকার ন্যাশনাল কোলেস্টেরল এডুকেশন প্রোগ্রামের এডাল্ট ট্রিটমেন্ট প্যানেলের সাম্প্রতিক গাইডলাইন অনুসারে, শরীরে এলডিএলের পরিমাণ ১০০ এর বেশি থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ। যারা হাই কোলেস্টেরলের রোগী তারা চিংড়ি মাছ খেলে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইল হওয়ায় ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

কোন সাইজের চিংড়িতে কতটুকু কোলেস্টেরল

আমাদের দেশে অনেক প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে গলদা, বাগদা, হরিণা বেশি পাওয়া যায়। তবে পুষ্টিমান বিবেচনার ক্ষেত্রে এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের চিংড়ি।

বড় আকারের:  বড় মাপের একটা চিংড়িতে থাকে ১১ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।

মাঝারি আকারের : মাঝারি আকারের একটি চিংড়িতে প্রায় ৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে।

ছোট আকারের: ১০০ গ্রাম ছোট আকারের চিংড়ি থেকে প্রায় ১৯৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়।

প্রজাতিভেদে এ পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

কারা চিংড়ি খাবেন না

চিংড়িতে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে, যা অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারের কোলেস্টেরলের পরিমাণের চেয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ বেশি। উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবারগুলো রক্তে কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগ বাড়ায়। যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের জন্য ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল ক্ষতিকর। তাই হাই কোলেস্টেরল, হার্টের বিভিন্ন সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের চিংড়ি না খাওয়াই ভালো।

চিংড়িতে অনেকের অ্যালার্জি আছে। চিংড়িতে ট্রপোমায়োসিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চিংড়ির অ্যালার্জির লক্ষণ হচ্ছে, এটি খাওয়ার পরে খিঁচুনি, অজ্ঞানতা, হজমের সমস্যা, নাক বন্ধ হওয়া বা ত্বকের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনার যদি অ্যালার্জি থাকে, তবে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল চিংড়ি না খাওয়া।

Comments