লালশাক ও পালংশাকের পুষ্টিগুণ

জানিয়েছেন মিরপুর জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তারানা জান্নাত মুমু।
লালশাক ও পালংশাকের পুষ্টিগুণ
ছবি: সংগৃহীত

দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা পূরণে শাক একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। শাক ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন শাকের মধ্যে লালশাক ও পালংশাক অন্যতম। এগুলো খেতেও যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর।

লালশাক ও পালংশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন মিরপুর জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তারানা জান্নাত মুমু।

পালংশাকের পুষ্টি উপাদান

পালংশাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য।

১০০ গ্রাম পালংশাকে রয়েছে-

শক্তি - ২৩ কিলোক্যালরি

কার্বোহাইড্রেট - ৩.৬ গ্রাম

প্রোটিন - ২.২ গ্রাম

ফাইবার - ২.২ গ্রাম

ভিটামিন সি - ২৮ মি.গ্রা.

ভিটামিন ই - ২ মি.গ্রা.

ক্যালসিয়াম - ৯৯ মি.গ্রা.

লৌহ - ২.৭ মিগ্রা

এ ছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, মাঙ্গানিজ, জিংক, ফলিক এসিড ইত্যাদি উপাদান খুব ভালো পরিমাণে রয়েছে। পালংশাক দৈনিক ফাইবার চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে।

পালংশাকের পুষ্টিগুণ

  • পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধ করে।
  • এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ব্লাড প্রেশার কমায়। রক্তে শ্বেত কণিকার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পালংশাকে রয়েছে ফোলেট বা ফলিক এসিড। এটি অন্তঃসত্ত্বা এবং স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  • আয়রন, রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
  • পালংশাকে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। হাত-পায়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
  • পালংশাক ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, লাবণ্য বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে।
  • প্রচুর পরিমাণে ডায়েটেরি ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
  • এতে জিয়াজ্যান্থিন ও ক্যারোটিনয়েডস রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন মাউথ ক্যান্সার, ইসোফ্যাগাস ক্যান্সার, স্টোমাক ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

লালশাকের পুষ্টি উপাদান

১০০ গ্রাম লালশাকে রয়েছে-

জলীয় অংশ - ৮৮ গ্রাম

শক্তি -৪৩ কিলোক্যালরি

কার্বোহাইড্রেট- ৫ মিগ্রা

প্রোটিন- ৫.৩ মিগ্রা

ভিটামিন সি- ৪৩ মিগ্রা

ক্যালসিয়াম- ৩৭৪ মিগ্রা

এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং আয়রন, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান।

উপকারিতা

  • লালশাক ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
  • ভিটামিন সির অভাবজনিত রোগ স্কার্ভি প্রতিরোধ করে।
  • লালশাকের আঁশজাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
  • লালশাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন। লালশাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়ায়। তাই অ্যানিমিয়া রোগী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এ শাক খুবই উপকারী।
  • নিয়মিত লালশাক খাওয়া হলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
  • শরীরের টক্সিক উপাদান দূর করে এবং ক্যানসার কোষ উৎপন্ন হতে দেয় না।
  • লালশাকে থাকা ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
  • লালশাকের বিটা ক্যারোটিন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেগুলো প্রতিরোধ করে লালশাক।

Comments