করলার জুস কেন খাবেন

জানুন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমানের কাছ থেকে।
করলার জুস
ছবি: সংগৃহীত

করলার তেতো স্বাদের জন্য অনেকে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে করলাকে ভালোবেসে প্রিয় খাবারের তালিকায় রেখেছেন এমন মানুষও আছেন। গাঢ় সবুজ রঙের এই সবজিটি আপনার পছন্দের হোক আর অপছন্দের, এর উপকারিতা কিন্তু অনেক।  

করলা ভাজি বা তরকারি খাওয়ার পাশাপাশি করলার রস অর্থাৎ জুসও খাওয়া হয়ে থাকে। আজ জানব এই জুসের উপকারিতা নিয়ে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমান

তাসরিয়ার রহমান জানান, করলা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি। এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। করলাতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম জিংক, আয়রন ইত্যাদি উপাদান। তবে আমরা যদি করলা প্রচুর তেল দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাজি করি বা রান্না করি, এতে করলার পুষ্টিগুণ কিছু কমে যায়। সেই হিসেবে করলার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

করলাকে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে এটির বীজ ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে নিতে পারেন। ছাকনির সাহায্যে রস আলাদা করে নিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবুর রস বা মধু যোগ করতে পারেন।

করলার রসের উপকারিতা

  • করলার রস ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। করলাতে আছে পলিপেপটাইড পি এবং চারেন্টিন নামের যৌগ, যা শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। করলার রস শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে সুগারের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে দেয় না। তাই যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা করলার জুস খেয়ে উপকার পেতে পারেন। তবে অনেকের ধারণা শুধু করলার রস পানের মাধ্যমে ডায়াবেটিস অর্থাৎ সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ধারণা সঠিক নয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি করলার রস পান করলে উপকারিতা পাবেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে নিয়মিত করলার জুস খেতে থাকলে অনেক সময় সুগার লেভেল একদম কমে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়া।
  • পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
  • করলার রসে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিহত করে।
  • সকালে করলার রস খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং হজম শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক কার্যকরী এটি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে।
  • করলার জুসে থাকা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ চোখের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • করলার রসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান, যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
  • করলার রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • করলার রস ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। করলার রস ফ্যাট সেল বার্ন করে নতুন ফ্যাট সেল তৈরিতে বাধা দেয়।
  • করলার জুস খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে।
  • করলার রস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সতর্কতা

করলার রস উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা আবশ্যক।

  • একটা করলা রস করলে যতটুকু হয়, দৈনিক ততটুকুর বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভাবস্থায় করলার জুস খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিশুরা এটি খেলে তাদের পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত করলার রস খেলে লিভারের প্রদাহ এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের করলার রস পানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  • করলার রস একাটানা না খেয়ে মাঝেমাঝে বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। ৩ মাস খাওয়ার পর ১২-১৫ দিন বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো।

     

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

7h ago