জিলাপির সাত সতেরো

ঠান্ডা বা গরম যেকোনো অবস্থাতেই খাওয়া যায় জিলাপি। এমনকি একদিন পুরোনো হলেও অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়!
জিলাপি
ছবি: প্রবীর দাশ

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে #জিলাপি (হ্যাশট্যাগ জিলাপি) ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর পাবেই না বা কেন? চলছে রমজান, আর ইফতারে জিলাপির সঙ্গে অন্য কোনো খাবারের তুলনাই যে হয় না! 

ঠান্ডা বা গরম যেকোনো অবস্থাতেই খাওয়া যায় জিলাপি। এমনকি একদিন পুরোনো হলেও অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়! মিষ্টি জাতীয় এই খাবারটি রমজানের সময় ইফতারে দারুণ জনপ্রিয়।  চারপাশে জিলাপির এত ভক্ত, তারপরও ঢাকার কোন জিলাপিটি সেরা এ বিষয়ে দুজন ব্যক্তিকে একমত করা মুশকিল।

সুপ্রীতি সরকার ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের জয়পুর সুইটসের চিকন জিলাপির ভক্ত।

তিনি বলেন, 'মহাখালীর খাবারদাবার রেস্তোরাঁয় তিল ছড়ানো বেশ মোটা ও টসটসে জিলাপি পাওয়া যায়। এ ছাড়া, প্রিমিয়াম সুইটসে ছানা দিয়ে বানানো ভীষণ মজাদার ছানার জিলাপি পাওয়া যায়।'

জিলাপি
ছবি: প্রবীর দাশ

'এগুলো শহরের বেশ নামকরা সব জিলাপি। তবে আমার মতে, জিলাপির মধ্যে সেরা হলো মিঠাইওয়ালার রাবড়ি দেওয়া চিকন জিলাপি', যোগ করেন তিনি।

আবার তার বন্ধু আল-হাসান মনে করেন, গুড়ের জিলাপির কাছে চিনির সিরায় ডুবানো জিলাপি কিছুই না।

তিনি বলেন, 'ঢাকায় গুড়ের জিলাপি আজকাল বেশ চোখে পড়ছে। আমার মতো কিছু মানুষ এই জিলাপির বিশাল ভক্ত।'

ঘিয়ে ভাজা চিকন জিলাপিও ভীষণ পছন্দ করেন হাসান।

অন্যদিকে তাদের বন্ধু মাশরুরের পছন্দ মৌচাক সুপারমার্কেটের এক কোণার এক ছোট্ট দোকানের শাহী জিলাপি।

জিলাপি
ছবি: প্রবীর দাশ

জিলাপির কথা যখন হচ্ছে, তখন চকবাজারের বিশাল শাহী জিলাপির কথা ভুললে চলবে না। এই জিলাপি এতই বিশাল যে একটি জিলাপি পুরো পরিবার মিলে খেতে পারবেন। যদিও এই তিন বন্ধুর কেউই এই শাহী জিলাপির ভক্ত নন।

জিলাপি বানানোর রয়েছে নানা রকমের কায়দা। এখন আর বানানো না হলেও নবাবী কিচেনে এক সময় স্পেশাল জিলাপি তৈরি হতো। এগুলো ডোবানো হতো মধুতে। সুঘ্রাণের জন্য ব্যবহৃত হতো গোলাপজল এবং বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধী।

জিলাপি কারিগরদের মতে, জিলাপির স্বাদে পরিবর্তন আনে ঘির ব্যবহার। সিগনেচার বাই খাজানা একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা প্রতি রমজানে ক্রেতাদের জন্য অনেক রকমের ইফতার আয়োজন করে থাকে।

রেস্টুরেন্টটির সিইও অভিষেক সিনহা বলেন, 'আমরা আমাদের জিলাপিতে ঈশ্বরদী থেকে বিশেষভাবে বানিয়ে নিয়ে আসা দেশি ঘি এবং কাশ্মীরের জাফরান ব্যবহার করে থাকি। জিলাপি বানানোর জন্য আমাদের তিন জন শেফ আছেন, যারা প্রতিদিন ১০০ কেজি জিলাপি বানান।'

রমজান মাসে উত্তরার রাস্তায় জিলাপি বিক্রি করা আলতাফ মিয়া জানান, এ সময় তার ব্যবসাও খুব ভালো চলে। তার দোকানের মোটা জিলাপি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি জিলাপির দাম ১০ টাকা।

এই নবাবী খাবারটি খেতে যতোই মজা হোক, খাওয়ার সময় ডাক্তারের কিছু পরামর্শ অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের হরমোন ও থাইরয়েড বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, 'ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য জিলাপি ভীষণ ক্ষতিকর। কারণ জিলাপি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় চিনির সিরা, ময়দা এবং কখনো কখনো ঘি। এমনকি সুস্থ মানুষদেরও কিছুটা বুঝেশুনে হিসাব করে জিলাপি খাওয়া উচিত।'

'একটা ছোট জিলাপিতে ১৫০ ক্যালরি এবং বড় জিলাপিতে ৩০০ ক্যালরি পর্যন্ত থাকতে পারে। জিলাপি তেলে ভাজা হয় এবং এই তেলটি অনেকদিন অনেকবার করে ব্যবহার করা হয়। তেল বারবার গরম করা হলে এতে ট্রান্স-ফ্যাট সৃষ্টি হয়। অক্সিডেশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই ট্রান্স-ফ্যাট ক্যানসারের মতো রোগের কারণ', যোগ করেন তিনি।

জিলাপির বিকল্পও জানিয়ে দিলেন তিনি।

'ইফতারে ডেজার্ট হিসেবে দুধ জাতীয় খাবার যেমন পায়েস, সেমাই খেতে পারেন। সঙ্গে থাকতে পারে ফল। সারাদিন রোজার ক্লান্তি দূর করে এটি আপনাকে শক্তি যোগাবে। ডায়াবেটিক এবং নন-ডায়াবেটিক সব মানুষের জন্যই এ ধরনের খাবার খুবই ভালো', যোগ করেন তিনি।  

জিলাপি খাওয়ার সময় ডাক্তারের কথা মাথায় রেখে 'বুঝেশুনে হিসাব করে' খেতে হবে। কিন্তু যেদিন আপনি জিলাপি খাবেন সেদিন কিছুটা আয়েশ করে এক প্লেট গরম জিলাপি নিয়ে তার মাঝে রাবড়ি (ঘন দুধ) দিয়ে খেতে পারেন। খেতে খেতেই আপনি বুঝতে পারবেন, কেন এই খাবারটি অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন!

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments