পাঙাশ মাছের পুষ্টিগুণ কি আসলেই কম?

পাঙাশ মাছের পুষ্টি
ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

মাছ প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস। দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্যতালিকায় যে কোনো ধরনের মাছ রাখা উচিত। এ ছাড়া মাছে প্রোটিন ছাড়াও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।

মাছের মধ্যে পাঙাশ একটি সহজলভ্য মাছ। সহজলভ্য হওয়ায় এ মাছটি প্রায় সবাই কিনতে পারেন এবং কম কাটা থাকায় বাচ্চারাও এই মাছ সহজে খেতে পারে। তবে অনেকেই আছেন চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় এ মাছটি খেতে পছন্দ করেন না। আবার অনেকে বলেন পাঙাশ মাছের পুষ্টিগুণ কম। কিন্তু আসলেই কি তাই? 

পাঙাশ মাছের পুষ্টি কম নাকি এটা মিথ- এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন হলিক্রস মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস

পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস জানান, পাঙাশ মাছ অনেক পুষ্টিকর একটি খাদ্য। আমাদের দেশের নদীতে পাওয়া যায় এই মাছ। পুকুরেও চাষ করা হয় পাঙাশ মাছ। নদীতে পাওয়া বা সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করা পাঙাশ মাছের থেকে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

আসুন জেনে নিই পাঙাশ মাছ খেলে কী কী পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

পুষ্টি উপাদান

পাঙাশ মাছে রয়েছে একটি বিশেষ পুষ্টিগুণ। পাঙাশে থাকা প্রোটিনের মান অনেক উন্নত। কারণ এই মাছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া এই মাছে থাকা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি উপাদান শরীরের বিভিন্ন উন্নতি সাধনে ভূমিকা রাখে।

উপকারিতা

  • পাঙাশ মাছের একটি বড় স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো এটি খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ হয়। কার্ডিওভাস্কুলার রোগ অর্থাৎ হার্টের নানাবিধ সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • আমাদের শরীর গঠনের জন্য উন্নত মানের প্রোটিন আবশ্যক। পাঙাশ মাছ থেকে এই উন্নত মানের প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। এই প্রোটিন কোষের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধনে ভূমিকা রাখে।
  • পাঙাশ মাছে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। শরীরের জন্য উপকারী একটি উপাদান হলো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি, যা পাঙাশ মাছে পাওয়া যায়। অসম্পৃক্ত চর্বির উপাদান শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যাদের হাই কোলেস্টেরল আছে তারা এই মাছটি তাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
  • পাঙাশ মাছ খেলে পেশি শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে আরও শক্তিশালী করে।
  • আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়াম। পাঙাশ মাছে অনেক পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সক্ষম। হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে চাইলে খাদ্যতালিকায় পাঙাশ মাছ রাখা উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় জন্য এই মাছ উপকারী। এটি ভ্রুণের স্বাস্থ্য এবং এর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কারণ এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। ভ্রুণের বৃদ্ধি ছাড়াও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে।

পাঙাশ মাছের এ সব উপকারিতা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। পাঙাশ মাছে চর্বির পরিমাণ অতিরিক্ত থাকায় কম-বেশি সবাই এটা ধারণা করেন যে পাঙাশ মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বা এটির পুষ্টিগুণ কম। কিন্তু এটি ভ্রান্ত ধারণা। তবে প্রতিদিন অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত পাঙাশ মাছ খেতে থাকলে শরীর অসুস্থ হতে পারে। 

পাঙাশ মাছ শরীরের জন্য কখন ক্ষতিকর

বর্তমান পাঙাশ মাছ কৃত্রিমভাবে পুকুরে চাষ করা হয়। চাষের সময় যে খাবার দেওয়া হয় সেগুলোর কারণে পাঙাশ মাছ ক্ষতিকর হতে পারে। আবার মাছ দীর্ঘক্ষণ ভালো রাখতে প্রচুর প্রিজারভেটিভস, কীটনাশক বা রাসায়নিক যেসব পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। অন্য মাছের তুলনায় পাঙাশ মাছে প্রিজারভেটিভস বেশি ব্যবহার করা হয়। আর এই সংরক্ষণ করে রাখা পাঙাশ মাছ হতে পারে শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

এ ছাড়া রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত না হলে তখন উপকারের থেকে অপকার বেশি হয়।

কিন্তু নদীতে পাওয়া পাঙাশ মাছ, প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করে চাষকৃত পাঙাশ মাছ যেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ, প্রিজারভেটিভস দেওয়া হয় না সেগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী। এ ছাড়া এই মাছ কেনার সময় চেষ্টা করতে হবে তাজা মাছ কেনার। কারণ সংরক্ষণ করে রাখা মাছে অতিরিক্ত প্রিজারভেটিভস থাকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘For 15 years I fought for BNP leaders and activists, today they pushed me’

Rumeen Farhana says she was almost knocked down during clash at EC over Brahmanbaria boundaries

2h ago