স্টেডিয়াম মার্কেটে ভরপেট সুস্বাদু খাবার, মিলবে ১০০ টাকার মধ্যেই

স্টেডিয়াম মার্কেটের খাবার
ছবি: জাওয়াদ সামি নিওগি

যখনই আমরা গুলিস্তানের জাতীয় স্টেডিয়ামের কথা ভাবি, আমাদের চোখে ভাসে সারি সারি খেলার সরঞ্জাম আর ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকানের দৃশ্য। এখানে বেশ সুলভ দামেই বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গেজেট ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়, জায়গাটি বেশ ব্যস্তও। তবে আমরা খুব কম মানুষই জানি যে, এই মার্কেট কেবল আপনার কেনাকাটার চাহিদাই পূরণ করবে না, পেটের ক্ষুধাও মেটাবে।

আপনি যদি দুপুরের দিকে মার্কেটের ভেতর দিয়ে হেঁটে যান তাহলে দেখবেন খাবারের দোকানের বিক্রেতারা উচ্চস্বরে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বড় বড় রান্নার পাত্রের ঢাকনায় আওয়াজ করেও দৃষ্টি কাড়ছেন। এই মার্কেটে বেশকিছু খাবারের দোকান আছে যেখানে সাশ্রয়ী দামে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। যা যেকোনো বয়সী বা পেশার মানুষ খুব সহজেই উপভোগ করতে পারেন।

এর মধ্যে আলাদা করে একটি দোকানের কথা বলতেই হয়। দোকানটির নাম রূপসা ফুড। যার ঠিকানা জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেটের সুইমিং পুল মার্কেটের ১৭/১ নম্বর দোকান। এটি খুব ছোট্ট আর সাধারণ দেখতে, অন্য দোকানগুলোর সঙ্গে সহজে একে আলাদাও করা যায় না। কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে বাজেটবান্ধব আর চমৎকার স্বাদের সব খাবার।

রূপসা ফুডের খাবারের মেন্যু খুবই সাধারণ, কিন্তু অত্যন্ত সুস্বাদু। ডিম-খিচুড়ির দাম মাত্র ৬০ টাকা, মুরগি-খিচুড়ির দাম ১০০ টাকা, মুরগির কাচ্চি বিরিয়ানির দামও ১০০ টাকা। আরও আছে ভাত-আলু ভর্তা আর ডালের সেট মেন্যু, যেটা এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

এই দোকানটিকে সবচেয়ে অনন্য করে তুলেছে এর খাবারের দাম। এমনকি সম্প্রতি যখন বাইরে খাবার খাওয়া ভীষণ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে তখনও রূপসা ফুড সাশ্রয়ী দামে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে চলেছে। তেল চুপচুপে অস্বাস্থ্যকম খাবারের পরিবর্তে এখানে আপনি পেট ভরে আরামদায়ক খাবার উপভোগ করতে পারবেন। আর যে পরিমাণে খাবার পরিবেশন করা হবে তার পরিমাণও যথাযথ। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই আপনি যে অর্থ দিয়ে খাবার কিনছেন তার সঠিক ব্যবহার হবে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সী এস এম শফি তার অভিজ্ঞতা জানালেন।

তিনি বলেন, 'দ্বিতীয়বারের মতো এখানে ডিম-খিচুড়ি খাচ্ছি। এটি এতটাই সুস্বাদু এবং তৃপ্তিদায়ক যে এর স্বাদ ভোলা যায় না। দামও মাত্র ৬০ টাকা, দাম হিসেবে খাবারটি অত্যন্ত ভালো। আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট এবং রূপসা ফুডের জন্য শুভকামনা জানাই।'

যাওয়ার আগে স্টেডিয়াম মার্কেটে আসা মানুষদের জন্য পরামর্শ দিতে ভুললেন না। আর সেটি হলো, এই মার্কেটে কেউ এলে রূপসা ফুডের ডিম-খিচুড়ি অবশ্যই চেখে দেখতে।

তবে এখানে শুধু দুপুরের খাবারই জনপ্রিয় নয়।

দোকানটির কর্মচারী মুবিন বললেন, 'বিকেলের নাশতা হিসেবে আমরা ৩৫ টাকায় লুচি-ডাল বিক্রি করি, হালিম বিক্রি করি ৬০ টাকায় এবং স্যুপ বিক্রি করি ৩০ থেকে ৬০ টাকায়। এক্ষেত্রে দামটি নির্ভর করে স্যুপে মুরগির মাংস দেওয়া হচ্ছে কি না তার ওপর। আমাদের স্যুপগুলো গ্রাহকরা খুবই পছন্দ করেন।'

খাবারের বাইরেও দীর্ঘদিনের গ্রাহকসেবার অভিজ্ঞতাও রূপসা ফুডকে বিশেষ করে তুলেছে। জায়গাটি ছোট হতে পারে কিন্তু এখানে বসে খাওয়ার সময় আপনি অনায়াসে গল্প চালিয়ে যেতে পারেন কিংবা চুপচাপ বসে খাবার উপভোগ করতে পারে। কেউ আপনার কথা বা কাজ নিয়ে বিচার করতে বসবে না। আপনি কে, কোথা থেকে এলেন বা কী করেন, কোনও কিছুই এখানে মুখ্য নয়। আপনি যেই হন না কেন, রূপসা ফুডের মজাদার খাবারের জগৎ সবসময়ই আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

রূপসা ফুড যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৩ সালে। দোকানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মঞ্জু নানা গল্প বললেন।

তিনি বলেন, 'এখানে আপনি যা যা দেখছেন সবকিছু ঘরে তৈরি। আমরা খিলগাঁওয়ের বাড়িতে সব খাবার তৈরি করে এখানে নিয়ে এসে সরাসরি গ্রাহকদের প্লেটে পরিবেশন করি। আপনি চাকরিজীবী হন বা নির্মাণ শ্রমিক, আমাদের এখানকার খাবার আপনাকে বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেবে।'

ঢাকা এমন একটি শহর যেখানে সাশ্রয়ী দামে ভালো খাওয়ার পাওয়া খুব কঠিন। সেখানে রূপসা ফুডের মতো ছোট দোকান প্রমাণ করেছে যে, তৃপ্তিদায়ক খাবার খাওয়ার জন্য সবসময় আপনাকে খুব বেশি খরচ করতে হবে না। তাই আপনি যদি জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেটের দিকে যান, তাহলে রূপসা ফুডে যেতে ভুলবেন না। সেখানে যান, খাবার নিয়ে বসে পড়ুন এবং উপভোগ করুন। আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনার দিনটি সুন্দর হয়ে যাবে।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Ordinance to be announced this week: law adviser

Nine sections have been scrapped from the Cyber Security Act 2023, he says

56m ago