শীতে ঘর উষ্ণ রাখার উপায়

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

প্রকৃতিতে জোরেশোরে শীত আসতে শুরু করেছে। শীতকালে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে গরম কাপড়, সোয়েটার, লেপ কম্বলের ব্যবহার তো আছেই। সেই সঙ্গে ঘরকে কীভাবে উষ্ণ রাখা যায় সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি।

শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখার অন্যতম উপায়গুলোর একটি হচ্ছে হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা বা রুম হিটার ব্যবহার করা। কিন্তু হিটিং সিস্টেম প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দিতে পারে। শীতে ঘর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পরিষেবা বিলও হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়। যেখানে ব্যয় হবে অল্প, কিন্তু শীত ঠেকাতেও যথেষ্ট কার্যকর।

চলুন দেখি সেসব পদ্ধতি—

খোলা জানালা

শীতকালে বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতেই অভ্যস্ত আমরা। অথচ ঘর গরম রাখা এবং বিশুদ্ধ বাতাস আনাগোনা জন্য দরজা-জানালা খোলা রাখা খুব দরকার। তা শীত হোক বা গ্রীষ্ম। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একটু ঠাণ্ডা লাগলেও ঘরের জানালা খুলে দিন। এতে করে সূর্যের আলো ও তাপের সর্বোচ্চ ব্যবহার পাবেন ঘরে। আপনার শরীরও বাহিরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। যদি সম্ভব হয় জানালার যে অংশ দিয়ে সূর্যের আলো ঢোকে, তার বিপরীত দেয়ালে একটা আয়না বসান। সূর্যের আলো আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে। তবে বিকেলের মধ্যে জানালা বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম। বিকেলে সূর্যের আলো কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে, বাড়তে থাকে ঠাণ্ডা। সেই সঙ্গে মশাও ঢুকতে থাকে ঘরে। তাই বিকালে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন।

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

ব্যবহার করুন ভারী পর্দা

শুধু ঘরের সৌন্দর্য নয়, গরমে সূর্যের আলোর তীব্রতা আর শীতে ঠাণ্ডা বাতাসের ছোবল থেকে বাঁচতেও দরজা জানালার পর্দা খুবই কার্যকর। রোদ থাকার সময়ে পর্দা খুলে রাখলে ঘরে আলো ঢুকবে, কিন্তু রাতে পর্দা দিয়ে রাখাই ভালো। রাতে পর্দা বন্ধ করে দিলে দিনের এই উষ্ণতা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না। ফলে ঘর গরম থাকবে। পর্দার রঙ উজ্জ্বল হলে ভালো হয়। যেমন- লাল, কমলা, নীল, এসব রঙ তাপ কুপরিবাহী। তাপ পর্দার মধ্য থেকে বের হতে পারে না। অনেকের কাছেই ব্যবহারের জন্য ২-৩ ধরনের পর্দা থাকে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে এক জোড়া পর্দা আলাদা রাখাই যায়।

উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার

উজ্জ্বল রঙ তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম। তাই শীতকালে যদি উজ্জ্বল রঙ দিয়ে দেয়াল রঙ করানো যায়, তবে তা তাপমাত্রা আবদ্ধ করে রাখতে সক্ষম হবে। কারণ, উজ্জ্বল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি।

ঘর রঙ করানো কষ্টসাধ্য মনে হলে বাড়ির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে পরিবর্তন আনতে পারেন। বিছানার চাদর, সোফার কভার ও জানালার পর্দায় নিয়ে আসুন উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। ঘরে একটি বড় লাইট দেবার পরিবর্তে ছোট ছোট এলইডি বা বাল্ব লাগাতে পারেন। এতে করে ঘরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ঘরের তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে।

কার্পেটের কার্যকারিতা

শীতকালে দেখবেন সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা ভোগায় তাহলো, হিমশীতল পা গরম হতে চায় না। এমনকি কম্বলের নিচে পা ঢুকিয়ে রাখলেও না। শীতকালে ঘরের মেঝেতে যতই স্যান্ডেল পায়ে হাঁটি না কেন, পা ঠাণ্ডা হবেই।

শীতের সময় মেঝে ঢেকে দিন কার্পেট বা শতরঞ্জি দিয়ে। এটি ঘরের মেঝে ঠাণ্ডা হওয়া থেকে রক্ষা করে। বর্তমানে পাটের তৈরি নানা আধুনিক কারুকাজের চাটাই পাওয়া যায়। যা ঠাণ্ডা ছড়াতে বাধা দেয়। এগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল শীতে ঘরের উষ্ণতা রক্ষায় অন্যতম কার্যকরী উপায়। অ্যালুমিনিয়াম খুব ভালো তাপ পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। এমনকি তাপ প্রতিফলনের ক্ষেত্রেও এটা দারুণভাবে কাজে আসে। শীতকালে ঘর গরম রাখতে ফয়েল পেপার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। শীতে রান্নাঘরের দেয়ালে বিশেষ করে চুলার আশেপাশে কিছু ফয়েল পেপার লাগিয়ে রাখুন। অ্যালুমিনিয়ামের প্রতিফলন ক্ষমতার কারণে দেয়ালের মধ্যে দিয়ে তাপ চলে যেতে পারে না। বরং ঘরে প্রতিফলিত হতে বাধ্য হয়। যার দরুন ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, ঘর উষ্ণ হয়।

বাবল র‍্যাপ ব্যবহার

শীতে ঘর উষ্ণ রাখতে বাবল র‍্যাপকে সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন। শুধু প্যাকিংয়ের কাজে নয় কিংবা বাচ্চাদের খেলার কাজে নয়, বাবল র‍্যাপ শীতকালে ঘর গরম রাখার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বাতাসের যেহেতু তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা আছে, বাবল র‍্যাপও তাই ঘর উষ্ণ রাখতে দারুণভাবে কাজে আসতে পারে। তাই ঘরে তাপমাত্রা ধরে রাখতে চাইলে আপনার জানালাগুলোয় একটি করে বাবল র‍্যাপের শিট ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।

বিছানায় গরম পানির বোতল

রাতের বেলা ঠাণ্ডা বিছানায় ঘুমোতে কার ভালো লাগে বলুন? শীতকালে বিছানা কিছুক্ষণ খালি থাকলে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কিন্তু বিছানা আরামদায়ক এবং উষ্ণ রাখতে একটা গরম পানির বোতল কম্বলের নিচে রেখে দিতে পারেন। চাইলে হট ওয়াটার ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে বিছানা উষ্ণ থাকবে, আপনার ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতেও অস্বস্তি হবে না।

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares August 5 as ‘July Mass Uprising Day’

It also declared August 8 as "New Bangladesh Day" and July 16 as "Shaheed Abu Sayed Day"

1h ago