কখন বুঝবেন সম্পর্কে ভাঙনের সুর

কখন বুঝবেন সম্পর্কে ভাঙনের সুর

যোগাযোগবিজ্ঞানের মতে, প্রতিটি সম্পর্কের মোট ১০টি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ৫টি গড়ে ওঠার, পরের ৫টি সম্পর্ক ভাঙার। ভাঙা-গাড়ার এই ধাপগুলোতে একটু সচেতনভাবে নজর দিলে খুব সহজেই বোঝা যায় কখন কোন সম্পর্কে ইতি টানা দরকার। 

বেশিরভাগ সময় কোনো সম্পর্ক গড়ার চাইতে ভাঙা বেশি কঠিন মনে হয়। শুরুর সময় যে ঔৎসুক্য, আগ্রহ আর উত্তেজনা কাজ করে– একটা সময় পর সেসব যেন অতলে হারায়। কখনো কখনো হয়তো সম্পর্কটাকে বোঝা বলে মনে হয়। দুজন মিলে, নয়তো কেউ কেউ একাই টেনে নিয়ে চলেন সে দায়ভার। এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে থাকা সমস্যাগুলোর যথাসাধ্য সমাধান করা দরকার অবশ্যই, কিন্তু কোনো বিষয়কেই টেনে নেওয়ার দরকার কি আছে আদৌ? তবে কীভাবে বোঝা যায়, সম্পর্ক কখন এমন অবস্থানে এসে পৌঁছেছে? 

সমঝোতার মনোভাব না থাকা

যেকোনো সম্পর্কেই মানিয়ে চলার বা মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। সব সময় যে তা পরিমাণে দু পক্ষেই সমান হয়, তা হয়তো নয়– তবে নিজেদের মতো করে সমঝোতার একটা ভারসাম্য থাকলে সম্পর্ক সুন্দর গতিতে এগোয়। এই ভারসাম্য বিগড়ে গেলেই যত সমস্যা। তখন শুধু মনে হয়, 'আমাকেই কেন মানিয়ে নিতে হবে?' আর যখন থেকে এ প্রশ্নের মেঘ ঘন-কালো করে তুলবে নিজের কিংবা সঙ্গীটির মনের আকাশ, তখন সম্পর্কের অবস্থা আর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা দরকার। 

অবিশ্বাস-সন্দেহ

বলা হয়, বিশ্বাসই যেকোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তিপ্রস্তর। বিশ্বাসের ইটের উপর গড়ে তোলা হয় একেকটি সম্পর্কের ইমারত। কিন্তু যদি সেই মূল বিষয়টিতেই কখনো গোলমাল দেখা যায়, ফাটল ধরে ভিত্তিপ্রস্তরে; একে অপরকে আর আগের মতো বিশ্বাস না করা যায়, তবে একবার ভেবে দেখা জরুরি, সম্পর্কের গ্রাফটা আদতে কোনদিকে যাচ্ছে?

অনির্ভরতা

একটি সুস্থ সম্পর্কে সঙ্গীর ওপর পরিমিত মাত্রায় নির্ভরতা সম্পর্ককে সুন্দর করে তোলে। এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে এককভাবে ব্যক্তিটি স্বাবলম্বী নন। বরং কিছুটা নির্ভরতার চর্চা একে অপরের সঙ্গে বসবাস, জীবন ভাগ করে নেওয়ার প্রবণতাকে সমৃদ্ধ করে। কখনো যদি মনে হয়, 'এই সঙ্গীটি না হলেও আমার চলবে' বা 'ওকে তো আমার জীবনে আসলে দরকারই নেই' – তবে বোধহয়, সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই। 

নিয়মিত দ্বন্দ্ব

খুনসুটি, ঝগড়াঝাঁটি প্রায় সব ধরনের মানব সম্পর্ক– বিশেষত ভালোবাসার সম্পর্কে তো প্রায় নিয়মিত ঘটনা। অনেকে এও বিশ্বাস করেন, একটুখানি ঝগড়া হলে ভালোবাসা বাড়ে। কিন্তু ঝগড়াগুলো কি এখনো মিষ্টতার পর্যায়ে রয়েছে নাকি একে অপরকে সহ্যই করতে পারছেন না প্রতিদিনের খাবার টেবিলে, সে ফারাকটা নিজেকেই নির্ণয় করতে হবে। ঝগড়াগুলো দিনে দিনে আরও বেশি তিক্ত হয়ে উঠলে, দ্বন্দ্বের পরিমাণ কথোপকথনের সিংহভাগ জুড়ে নিলে সম্পর্কটাকে নিয়ে আরেকবার ভালো করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। 

ভালোবাসার অভাব

যদি ভালোবাসা নাই থাকে, শুধু একা একা লাগে– কোথায় শান্তি পাব, বলো কোথায় গিয়ে? মৌসুমী ভৌমিকের এই পরিচিত গানটির মতো কারও সম্পর্কে যদি আর ভালোবাসাও অনুভব না করা যায়, তবে শান্তির খোঁজ অন্য কোথাও করার আগে বিদ্যমান সম্পর্কটির ইতি টানা দরকার। 

প্রসঙ্গত মনে পড়ে যায় সাহির লুধিয়ানভির একটি কবিতার লাইন– 'ওঁ আফসানা যিসে আনজাম তাক লানা না হো মুমকিন, উসে এক খুবসুরাত মোড় দে কে ছোড়না আচ্ছা।' এর মোটমাট অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে, যে গল্পের কোনো পরিণতি নেই– তাকে একটা সুন্দর মোড়ে এনে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। আমাদের সম্পর্কগুলোও অনেকসময় এমন কিছু গল্প হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে থাকে না কোনো 'রিফ্রেশ' বাটন, যেখানে থাকে না কোনো এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা– আমরা একে অপরের সঙ্গে আটকে থাকি, শুধু আটকেই থাকি। সেই আটকে থাকা গল্পগুলোকে শুধু অভ্যাসের বশে আটকে না রেখে প্রয়োজন মুক্ত বাতাসে ছেড়ে দেওয়ার আর সেই সঙ্গে নিজেদেরকেও মুক্ত করে নেওয়া। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হয়তো এমন সময়ের জন্যই বলে দিয়েছেন।'
 
'আঁকড়ে থেকো না কিছু।
যে যাবার তাকে যেতে দাও
যে ফেরার সেতো ফিরবেই-
কলমিলতার ফ্ল্যাটে ফিরে যাবে হলুদাভ হাঁস।'

 

তথ্যসূত্র: লাইফহ্যাকস, গটম্যান, সাইকোলোজি ডুটে
 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago