সাংস্কৃতিক ভিন্নতা কি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে?

সম্পর্কে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা
ছবি: সংগৃহীত

'আমি কফি খেতে ভালোবাসি, ও-ও কফির জন্য পাগল।'

ব্যস, মিলে গেল একটা 'কমন গ্রাউন্ড', যেখানে দুজনে মিলে ঢুঁ মেরে বেড়ালেন ঢাকার আনাচে-কানাচে থাকা কফিশপগুলোয়। দুজন মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়তে গেলে বেশিরভাগ মানুষই জোর দেন একে অন্যের সঙ্গে থাকা সাদৃশ্যগুলোর ওপর। কিন্তু এমন বহু মিল-টিল খুঁজে পেয়ে, অনেকগুলো কফি ডেটের পর একসঙ্গে দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময়টায় ঝামেলা বাঁধতে পারে। ভাবছেন, কীভাবে?

ধরুন, একজনের বাড়ি চট্টগ্রাম। তার পছন্দের খাবারের পাতে স্বাভাবিকভাবেই থাকবে শুঁটকির হরেক পদ, অন্যদিকে অপরজন হয়তো শুঁটকির গন্ধও নিতে পারেন না— আবার ঝালটালও তার অত সয় না। এক পক্ষ যখন লাল লাল ঝাল চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা দিয়ে ভাত মাখাচ্ছেন, তখন অপর পক্ষের খাবারে মনই বসছে না।

সংস্কৃতির এই ফারাকটা কীভাবে ধীরে ধীরে খাবার টেবিল থেকে চলন-বলন, ভাষা, কথাবার্তা, পছন্দ-অপছন্দের বহু জায়গায় ছড়িয়ে যায়, তা হয়তো ঠিকভাবে বোঝাও যায় না। তবে এই ফারাকের প্রভাব পড়ে দুজনের সম্পর্কে। তখন মনের মিল হলেও, জীবনের মিলটা ঘটাতে একটু ঝক্কি পোহাতে হয় দুই পক্ষেরই।

কাপল কাউন্সেলিং বিশেষজ্ঞ তাতিয়া রিভেরা ক্রুজের মতে, সংস্কৃতি শুধু নিজস্ব একটি পরিচয়ই গড়ে তোলে না, একটি বিশাল সামাজিক পরিসর তৈরি করে। যার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের জন্য ঐতিহ্য ও জীবনের উদ্দেশ্যের একটি আলাদা চেতনা তৈরি করি।

সেই জীবনযাপনের ধরন ও গঠনে যখন অন্য একটি ব্যক্তি যুক্ত হতে যায়, তখন অবচেতনভাবেই প্রত্যাশা আসে যে সেই মানুষটিও যেন একই ধরনের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের হয়। অনেকক্ষেত্রে তা না হলেও প্রেমিক যুগল বা দম্পতিরা খুব ভালোভাবে জীবনে এগিয়ে যান। কিন্তু সেজন্য কিছু মানসিক ও সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করতে হয়।

সংস্কৃতির জানাশোনা

সংস্কৃতির ফারাক মেটানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে একে অন্যকে বুঝতে পারা। কোনো প্রথা বা রীতিনীতি নিয়ে মনে প্রশ্ন থাকলে সেটি নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা যায়। সঙ্গীর পরিবার, তার অঞ্চলের সম্পর্কে আরো জেনে নেওয়া গেলে জীবনযাপন সহজ হয়। আমাদের সমাজে পরিবার যেহেতু অনেক বড় একটি ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কাটাতে গেলে তার পরিবারের রীতিনীতি সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিলে এর একটি দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব থাকবে।

যোগাযোগই মূলকথা

দুটো মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের সমস্যাগুলো যে সবসময় বাইরের ফারাক থেকে আসে, তা নয়। বরং অধিকাংশ ঝামেলার শেকড়টা গাঁথা থাকে যোগাযোগহীনতায়। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে সৎ থাকুন। কোথায় সমস্যা হচ্ছে— তার জীবনের কোন বিষয়টি আপনার মেনে নিতে কিংবা মনে নিতে সমস্যা হচ্ছে, সেটি জানান। এমনও হতে পারে আপনার সঙ্গী যৌথ পরিবারে থেকে মানুষ আর আপনি হয়তো অণু পরিবার থেকে আসা কেউ। সেক্ষেত্রে বিয়ের পর যদি সঙ্গী আশা করে থাকেন যে আপনি যৌথ পরিবারে থাকবেন আর আপনার সেটি নিয়ে সমস্যা থেকে থাকে— তবে বিয়ের আগের প্রাথমিক আলাপগুলোর মধ্যে সেটি রাখুন। ঝগড়া নয়, আলাপের মাধ্যমে সমাধান বের করে আনুন।

একে অন্যের রীতিনীতিকে সম্মান করুন

একে অন্যের সংস্কৃতির উৎসব, অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের উদযাপনে অংশ নিন। একে অন্যের কাছ থেকে তাদের ভাষা শিখুন। নিজেদের মধ্যে সংস্কৃতিকে কোনো দেয়াল না ভেবে সেতুর মতো করে যুক্ত হোন। এভাবেই পারস্পরিক সম্মান ও অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পাবে এবং সম্পর্ক দিনে দিনে আরো মজবুত হবে। নিজেদের আদি পরিচয়গুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে বন্ধুভাবাপন্ন জীবন কাটানোর চেষ্টা করুন।

চেতন ভগতের 'টু স্টেটস' বইয়ের নায়ক-নায়িকার প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের দুই আলাদা আলাদা সংস্কৃতি। তবে শেষমেশ তারা সেই ফারাকগুলোকে কাটিয়ে একে অন্যের জীবনকে গ্রহণ করতে শিখেছিল— তাদের পরিবারও পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনটা ঘটতে পারে যে কারো জীবনে, শুধু সঙ্গীর হাতটা ভালো করে ধরে রাখতে হবে। আর তা করতে পারলে কোনো বাধা-বিপত্তিই বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না।

বৈচিত্র্য মানে খারাপ কিছু নয়। সবসময় সব বিষয়ে সাদৃশ্যই সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কখনো কখনো প্রিয়জনের মধ্যে থাকা, তার জীবনের রং-বেরঙের বৈচিত্র্যগুলোকে আপন করে নিতে পারলে তবেই জীবন আরো রঙিন হয়ে ওঠে। তাই বৈচিত্র্যকে উদযাপন করুন, ভালোবাসায় বেঁচে থাকুন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Housing, food may top the manifestos

Panels contesting Ducsu election are signalling key reform priorities in their upcoming manifestos

12h ago