বিয়ের আগে বিবেচ্য ১০ বিষয়

বিয়ে সফল করতে এবং সারাজীবন স্থায়ী করার জন্য দম্পতিকে বিয়ের আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভাবতে হয়
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

যে কোনো ব্যক্তির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো বিয়ে। বিয়ে এমন একটি ধাপ যেখানে একে অপরের ভালো সময় এবং খারাপ সময়ের মধ্যে ভালবাসার আর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ে সফল করতে এবং সারাজীবন এটিকে স্থায়ী করার জন্য, দম্পতিকে বিয়ের আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভাবতে হয়।

তাই বিয়ের আগে নিম্নলিখিত ১০টি বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত।

সামঞ্জস্যতা

সামঞ্জস্যতা প্রতিটি সফল বিবাহের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। বিয়ের গাঁটছড়া বাঁধার আগে দম্পতিকে অবশ্যই তাদের সামঞ্জস্যতা বিশ্লেষণ করতে হবে। সামঞ্জস্যতা মূল্যবোধ, বিশ্বাস, আগ্রহ এবং উদ্দেশ্যগুলোর মতো জিনিসগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন সঙ্গী সততা এবং বিশুদ্ধতাকে মূল্য দেয় কিন্তু অপরজন সেই নীতিগুলি সম্পর্কে উদাসীন আর নমনীয় থাকেন তাহলে সেটি সম্পর্কে মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

যোগাযোগ

সুস্থ যোগাযোগ মানেই সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক। জীবনে যেখানেই দাঁড়ান না কেন, দম্পতিকে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে, স্বাধীনভাবে এবং সৎ থেকে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মতবিরোধ এবং ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে উঠতে এবং দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে যোগাযোগ একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি রাগান্বিত হন বা কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে তাদের উচিত সঙ্গীর কাছে তা প্রকাশ করা যেন সঙ্গী বুঝতে পারে। সেটি তার যেকোনো সমস্যাই হোক না কেন।

আর্থিক সামঞ্জস্য

অনেক সম্পর্কের মতো দাম্পত্য জীবনে আর্থিক সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দম্পতির বিয়ের আগে তাদের আর্থিক সামঞ্জস্য বিশ্লেষণ করা উচিত। এতে ঋণ, সঞ্চয় এবং ব্যয়ের ধরণ জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন খরচে স্বভাবের হয়ে থাকেন এবং অন্যজনের সঞ্চয় করার প্রবণতা থাকে, তাহলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এখানে দুজনকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পারিবারিক পটভূমি

ব্যক্তির পারিবারিক পটভূমি তাদের ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস এবং দৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিয়ের আগে একে অপরের পারিবারিক পটভূমি এবং তারা কীভাবে বিবাহকে প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝা অপরিহার্য। যেমন, একজন যদি কঠোর, রক্ষণশীল পরিবারের বেড়ে উঠেন এবং অপরজন উদারপন্থী পরিবারে বেড়ে উঠে তবে এটি দ্বন্দ্বের কারণ হতে পারে।

দ্বন্দ্ব সমাধান

দাম্পত্য সম্পর্কে বিবাদ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। দম্পতিকে অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে বিরোধগুলো সমাধান করতে হবে। একে অপরের সমস্যা শোনা ও বিভিন্ন চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে আপস করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি একজন শহরে থাকতে চান এবং অপরজন গ্রামে থাকতে চায়, তাহলে তাদের একটি সমঝোতায় আসতে হবে যাতে উভয়ের উপকারে আসে।

জীবনধারা

জীবনধারা একে অপরের সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। শখ, অবসর সময় এবং সামাজিকীকরণের মতো জিনিসগুলো দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বাইরে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং অপরজন বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন তবে এটি পারস্পারিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।

লক্ষ্যে অন্তর্মিল

দম্পতিদের মাঝে তাদের ভবিষ্যতের জন্য অভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা থাকতে হবে। চাকরি, পরিবার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের মতো উদ্দেশ্যগুলি এর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ হিসেবে, যদি একজন সন্তান নিতে আগ্রহী কিন্তু অপরজন তাতে উৎসাহী না হলে সেটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

মানসিক সামঞ্জস্য

প্রতিটি বিয়েতেই মানসিক সামঞ্জস্য অত্যাবশ্যক। জীবনে উত্থান পতনের প্রতিটি মুহূর্তেই একে অপরের পাশে থাকা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন একটি কঠিন সময় পার করতে থাকেন, তবে অপরজনকে মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে থাকা উচিত।

ধর্মীয় বিশ্বাস

ধর্ম একজন ব্যক্তির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। বিয়ের আগে ধর্মীয় সামঞ্জস্যতা বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং রীতিনীতির মতো বিষয় নিয়ে কথা বলা জড়িত। যেমন, যদি একজন যদি খুব ধার্মিক হন এবং অপরজন যদি সেটিকে হালকা ভাবে নিয়ে থাকেন, তবে তা সর্বদা বিবাদের কারণ হতে পারে।

ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি

বিবাহ ব্যক্তিগত বিকাশ এবং অগ্রগতির একটি প্রক্রিয়া। সংসারে একে অপরের ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর মধ্যে জড়িত থাকে তাদের স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনের জন্য একে অপরকে সমর্থন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চায়, তবে অন্য সদস্যকেও সেটিতে সম্মত হতে হবে।

বিয়ে যে কারো জীবনেই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিয়ে করার আগে বিভিন্ন পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো যাচাই করা আবশ্যক। বিয়ে একটি সমন্বয়। উভয় পক্ষকে অবশ্যই একে অপরকে সমর্থন খোলামেলা কথা এবং উদ্ভূত যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

অনুবাদ করেছেন আসিয়া আফরিন চৌধুরী    

Comments