আমি কেন এখনও বিয়ে করিনি এবং এটি যে কারণে আপনার চিন্তার বিষয় নয়

বিয়ে

'তো, কেমন ছেলে খুঁজছ?' এই প্রশ্ন দিয়েই এসব কথার শুরু হয়। সারা ঘর চুপচাপ হয়ে যায়। আর যাকে এইমাত্র প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেওয়া হলো, যিনি একটু আগেও অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন — তিনি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হাসেন।

তিনি জানেন, এরপর প্রশ্নগুলো কোন কোন পথে ঘুরবে আর কথার ঘুরপাক কোথায় গিয়ে থামবে। কিন্তু বেয়াদবির তকমা যাতে গায়ে না জোটে, তাই তাকে একটু পাত্তা দিতেই হয়। আর 'কেমন ছেলে চাই' এর জবাবে তিনি যা-ই বলেন, তাতেই সবার চোখের ভ্রু কপালে গিয়ে ওঠে। উত্তরদাতার এইবেলা বরং ওদের জন্য একটু মায়াই হয়, কী হতাশ সবাই! 

কারণটা সবাই জানি। সবাই আসলে এই প্রশ্নের উত্তরে আসল কথাটা জানতে চান। মূল বিষয়টা শুনতে চান না। তারা শুধু চান, সবাই 'সেটল' করুক। কিন্তু এই সেটল করার বিষয়টিতে যে মানুষের পছন্দ-অপছন্দও গুরুত্ব পেতে পারে, সেকথা কেউ শুনতে চান না। তারা নিজের কথা শেষ করতেই বেশি ব্যস্ত।

'তুমি একটু বেশিই দিবাস্বপ্ন দেখছ না?', 'জীবন কি সিনেমা নাকি! এভাবে তো কেউ নিজে যেচে পড়ে তোমার দরজায় কড়া নাড়বে না। দশে দশ কি আর সত্যিই পাওয়া যায়?' এমন প্রশ্ন আসে।

আর এই মুহূর্তে মেয়েটির মাথায় চলতে থাকে, কেন নয়? যদি সবই ভাগ্যের খেলা হয়, তবে তারা কীভাবে তার ভাগ্যটি লিখে দিচ্ছেন?

এ সমাজে মেয়েদের স্বাধীনতাতেও কিছুটা দাগ টেনে দেওয়া হয়। এইটুকুর মধ্যে তিনি বেছে নিতে পারবেন তার পছন্দের বস্তু কিংবা বিষয়। এর বাইরে গেলেই জাত যাবে। স্বাবলম্বী হওয়ার উৎসাহ তিনি পাবেন ঠিকই, গড়তে পারবেন ক্যারিয়ারও। কিন্তু যদি একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরও বিয়ে না করা হয়, তবে তাকে নিয়ে বসে যাবে রাজ্যের সালিশ। এমনটা নাও হতে পারে যে মেয়েটির বিয়ে অপছন্দ, হয়তো তিনি নিজের যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পাননি— কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন, সমাজের নজরদারি থেকে রেহাই মেলে না।

তখন মেয়েটির স্বপ্নই যেন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আত্মসম্মানকে অহমের নাম দেওয়া হয়। তার বেছে নেওয়ার ইচ্ছা, পছন্দকে জেদ বলা হয়। আর একটি পরিপূর্ণ অর্থবহ সম্পর্কের তার যে চাহিদা— সেটিকে 'লোভ' বলে থামিয়ে দেওয়া হয়।

বাইরের লোকজন থেকে এমন কথা তো আসতেই থাকে। কিন্তু দুঃখটা তখন লাগে, যখন নিজেদের মানুষই তাতে গলা মেলান।

এই মানুষগুলো আবার জোর গলার অন্যসব মানুষ থেকে আলাদা। তারা খুব মন দিয়ে মেয়েটির কথা শোনেন, মাথা নেড়ে সায় দেন, কখনো বা তাকে সমর্থন যুগিয়ে একথাও বলেন, 'তুমি ঠিকই করছ।' কিছুক্ষণের জন্য মেয়েটির মনে হয়, এই বুঝি কেউ তাকে বুঝতে পারল। কিন্তু তখনই তারা টুপ করে অযাচিত দুয়েকটা 'পরামর্শ' দিয়ে বসেন। সে পরামর্শে থাকে বিয়ের প্রস্তাব। এমন কোনো ব্যক্তি নিয়ে সেই প্রস্তাবটি দেওয়া হয়, যার সঙ্গে হয়তো মেয়েটির দেওয়া সেই তালিকার কিছুই মেলে না। এরপরও যখন খুব মিষ্টি করে বলা হয়, 'ছেলেটা ভালো। পরিবারও অনেক ভালো। যে কোনো মেয়ে খুশি থাকবে', তখন সেই মেয়েটির কী হাল হয়?

এসব শুনে মনে হয়, সুখ যেন একই পায়ের জুতোর মতো– সবার জন্য এক মাপের। আরো মনে হয়, এতক্ষণ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনাটা শুধু ভান ছিল— তার নিজের কথাটা বলার জন্য। তখন হতাশা ছাড়া আর কিছু আসে না, মনটাই ভেঙে যায়।

কিন্তু এরা কেউই বুঝতে চান না, মেয়েটি অপেক্ষা করছেন, কারণ তিনি জানেন এ ধরনের 'আদর্শ সঙ্গী'র বদলে যাওয়া চেহারার বাস্তবতা।

সহৃদয়, মানানসই সঙ্গীর চাহিদা খুবই মৌলিক একটি বিষয়। সম্পর্কে নিজের জায়গা খুঁজে পাওয়াটাও অবাস্তব কোনো চাওয়া নয়। আর যে মেয়েটি তা চান, তিনি কারো ওপর বোঝা চাপাতেও চান না। তিনি বরং জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে নিজের আকাঙ্ক্ষিত সঙ্গীটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তাই পরের বার যদি কোনো আত্মবিশ্বাসী ও অবিবাহিত নারীর সঙ্গে দেখা হয়, তবে ভুলেও করুণা করবেন না। নাক গলাবেন না। অযাচিত কোনো পরামর্শের কথা ভাবার দরকারও নেই। কারণ তার কথাগুলো শোনার ভান করে সবকিছু এড়িয়ে যাওয়াটা সেই ব্যক্তির জন্য অপমানজনক।

কারণ তিনি 'যেকোনো কারো' জন্য পথ চেয়ে নেই। তিনি অপেক্ষা করছেন তার সঙ্গে মেলে, এমন কারো। যার সঙ্গে তিনি যৌথ জীবন যাপনে স্বচ্ছন্দ অনুভব করবেন। তার চাওয়াটা কোনো ভ্রম নয়, বরং স্পষ্টতা। আর যে জগতে তাকে সারাক্ষণ  তার মতামত এড়িয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তার নিজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকাটা সম্মানজনক— শোধরানোর মতো কিছু নয়।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Sada Pathor Looting: Admin officials, law enforcers involved

Some government officials  including members of law enforcement agencies were involved in the rampant looting of stones from Bholaganj’s Sada Pathor area, found a probe committee of the Sylhet district administration.

7h ago