স্মল টকে পারদর্শী হবেন যেভাবে

সামাজিকতার খাতিরে কিংবা প্রয়োজনের তাগিদে প্রায়ই অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে হয় আমাদের। তখন অল্পবিস্তর কথাবার্তার মাধ্যমে আন্তরিকতা প্রকাশ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে, কীভাবে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে চলুন জেনে নিই তার কিছু কৌশল।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

সামাজিকতার খাতিরে কিংবা প্রয়োজনের তাগিদে প্রায়ই অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে হয় আমাদের। তখন অল্পবিস্তর কথাবার্তার মাধ্যমে আন্তরিকতা প্রকাশ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে, কীভাবে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে চলুন জেনে নিই তার কিছু কৌশল।

আগ্রহ প্রকাশ করা

অন্য কারো প্রতি আগ্রহ দেখালে আপনার প্রতিও তাদের কৌতূহল বাড়ে। তাদেরও আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগতে পারে। তাই নিজে আগ্রহী হয়ে অন্যের আকর্ষণের কারণ হওয়া যায়।

তবে অনেকে সবসময় নিজের ব্যাপারেই কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তি কী বলতে চায় সেদিকে দৃষ্টিপাত করার খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। তাই কারো সঙ্গে কথা বলার সময় মনে রাখতে হবে, আলোচ্য বিষয়ের প্রতি অন্যদের অনাগ্রহী হওয়ার বিষয়টিও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এ ক্ষেত্রে মনোযোগী শ্রোতা হওয়াই বরং শ্রেয়। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং উত্তরের মাধ্যমে সহজেই আগ্রহ প্রকাশ করা যায়। এতে ভালো আলাপচারিতার পাশাপাশি নতুন জিনিসও শেখা যায়।

সহজ বিষয়ে কথা বলা

প্রথম আলাপেই কেউ গুরুগম্ভীর বা বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তাই কারো সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় হালকা বিষয় দিয়ে কথা শুরু করতে পারলে বেশ কাজে দেবে। 

টিভি শো, সিনেমা, খেলাধুলা, আবহাওয়া ইত্যাদি দিয়ে কথা শুরু করা যেতে পারে। তবে কথোপকথনের মাঝখানে নীরবতার পরিবেশ সৃষ্টি হলেও চিন্তার কিছু নেই। নতুন বিষয়ে আবার কথা বলা যেতে পারে।

মজার পরিবেশ সৃষ্টি করা

কথা বলার সময় কাউকে হাসাতে পারলে সহজে আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। হাস্যরস এমনই এক জাদুকরী বিষয় যাতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপটও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন হয়ে ওঠে। কথোপকথন হালকা, স্মরণীয় ও মজার করতে এই গুণ থাকা ভালো।

তবে হাসিঠাট্টার ক্ষেত্রে নিজের সীমা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, যাতে মজা করতে গিয়ে আপত্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। কৌতুক করা ভালো, কিন্তু অপরিচিত ব্যক্তির সামনে নেটফ্লিক্সের স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হওয়ার চেষ্টা কিন্তু মোটেই ভালো নয়!

আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করা

কথোপকথন এক রকম শিল্প। আর একজন দক্ষ কথোপকথনকারী হওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে ভালো যোগাযোগে আদান-প্রদানের বিষয়ে। এটি স্বল্প আলাপচারিতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

মনে রাখতে হবে, কথোপকথন একপাক্ষিক নয় বরং দ্বিমুখী যোগাযোগ। তাই কথা বলার সময় অন্যের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। আর মৌখিক যোগাযোগের পাশাপাশি অ-মৌখিক সংকেত সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে।

অঙ্গভঙ্গির বিষয়ে সচেতনতা

বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল অনুসারে, আমাদের যোগাযোগের বেশিরভাগই অ-মৌখিক। কথা বলার সময় তাই অন্য ব্যক্তির শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং সেসবের সাংকেতিক বার্তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং সে অনুযায়ী নিজের অঙ্গভঙ্গি সমন্বয় করতে হবে।

যতটা সম্ভব চোখের দিকে তাকিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। আলাপচারিতা চলাকালীন বেশি হাত নড়াচড়া করা, অন্য দিকে তাকিয়ে থাকা, ফোনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার মতো বিষয় যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। নিজের আগ্রহ ও মনোযোগের প্রতিফলন ঘটাতে হবে কথোপকথনে। 

বিষয় সংক্ষিপ্ত রাখা

কথোপকথনে কোথায় থামতে হবে সেটা বোঝা জরুরি। অকারণে কোনো বিষয় বাড়ানো উচিত হয়। কথোপকথন যত সংক্ষিপ্ত ও হালকা হবে ততই ভালো। দীর্ঘ আলোচনায় অনেক সময় আত্মকেন্দ্রিকতা চলে আসে কিংবা বিরক্তির উদ্রেক ঘটে, যার ফলে পরে আর কেউ কথা বলতে চায় না।

২ জনের মিলের জায়গা খুঁজে বের করা

অল্প সময়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ২ জনের মিল আছে কোন জায়গায় বা কোন বিষয়ের সঙ্গে ২ জনেরই সম্পর্ক অথবা আগ্রহ আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এটি হতে পারে পছন্দের কোনো বই, সিনেমা কিংবা বন্ধু। এতে অন্যের মতামত সম্পর্কেও ধারণা হবে। এ ছাড়া ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো সময়ও কাটবে।

মতামত জানতে চাওয়া

যখন কোনো বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চাওয়া হয় তখন ভালোই লাগে। কারণ নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে কে না চায়? এতে কথোপকথনে ব্যক্তির গুরুত্বও বোঝা যায়।

ইতিবাচক থাকা

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। এটি না থাকলে যেমন সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় না, তেমনি অপরিচিত কারোর কাছে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারও সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

একজন মানুষ যদি অন্যের মনকে শান্ত করতে পারে কথার মাধ্যমে, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! তাই নিজেকে সতেজ রাখার চেষ্টায় থাকতে হবে ইতিবাচকতার পরশে।

অনুশীলন

আশেপাশের অনেকে সহজেই অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে, আন্তরিকতার পরিবেশে নতুন বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারে। আবার কেউ কেউ চাইলেও তা করতে ব্যর্থ হয়।

ব্যস্ত সময়ে সবসময় আড্ডা দেওয়া সম্ভব না হলেও স্বল্প কথায় ভালো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা, উদ্যম আর অনুশীলন।

এ চর্চা শুরু করতে হবে বন্ধু, সহকর্মী বা প্রিয়জনের সঙ্গে। ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে হবে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গেও। তবেই স্বল্প আলাপচারিতাও যে দারুণ মুহূর্ত হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

Comments