প্রথম পরিচয়ে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করবেন যেভাবে

ছোটবেলা থেকেই বাইরে থেকে দেখে কারো গুণাগুণ ধরে না নিতে শেখানো হয় আমাদের। তবে বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম পরিচয়ে কারও প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হলে তা পরিবর্তন করার জন্য ৮টি ইতিবাচক কাজ প্রয়োজন। সুতরাং অন্যের মধ্যে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির জন্য প্রথম দেখাতেই নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।

এই লেখায় কিছু বাস্তবসম্মত পরামর্শ থাকবে, যেগুলো অনুসরণ করে নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করা সম্ভব।

শরীরী ভাষার দিকে নজর রাখুন

মনোবিজ্ঞানের একটি গবেষণা অনুসারে, কারও প্রতি প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে মানুষ মাত্র ৩৩ মিলি সেকেন্ডের মতো সময় নেয়। তাই এমন সম্ভাবনা আছে যে, আপনি কথা বলতে শুরু করার আগেই মানুষ নিজের মনে আপনার সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে ফেলে। এই মনোভাব তৈরি হয় মূলত আপনার অঙ্গভঙ্গি থেকে। তাই শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাস আনতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ইস্ত্রি করা এবং অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত পোশাক পরুন। দাঁড়ানো এবং বসা উভয় অবস্থানে পিঠ সোজা রাখার চেষ্টা করুন। হাসিমুখে থাকুন। যার সঙ্গে কথা বলছেন, তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন। পরিষ্কার উচ্চারণে ও মৃদু কণ্ঠে কথা বলতে ভুলবেন না।

কী বলবেন আগেই ঠিক করে নিন

নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপনের একটি ভালো উপায় হচ্ছে কী বলবেন, সেটি আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া বা ভেবে রাখা, যাতে আপনার কথায় কোনো ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়। সবসময় বর্তমানে কী করছেন, তা দিয়ে শুরু করুন। এরপর এই কাজের সঙ্গে অতীতের কাজ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনাকে যুক্ত করুন। যেমন- চাকরির সাক্ষাৎকারে নিজের সম্পর্কে বলতে বলা হলে নাম, ছোট করে নিজের কাজ সম্পর্কে কিছু বলে শুরু করা যেতে পারে।

পরিস্থিতি ও শ্রোতার কথা বিবেচনা করে এরপর আরও বিস্তারিত বলতে পারেন। যেমন- চাকরিতে আপনার দায়িত্ব কী, যেসব প্রজেক্টে কাজ করেছেন বা করছেন ইত্যাদি। নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে অতীতের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে পারেন। এ ছাড়া আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, আগের চাকরি এবং সেসব চাকরিতে নিজের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে ভুলবেন না। নিজের সম্পর্কে বর্ণনার শেষ ধাপে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও উদ্যম সম্পর্কে বলতে পারেন।

কথা সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট রাখুন

দীর্ঘ বর্ণনা ও অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা এড়িয়ে চলুন। শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখতে ভূমিকা সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট রাখুন। দীর্ঘ বর্ণনার তুলনায় সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্টভাবে নিজের পরিচিতি দেওয়াটা অনেক বেশি স্মরণীয় ও প্রভাবক হতে পারে। বিশেষত পেশাদার ক্ষেত্রে এই ধরনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশাদারিত্ব, কার্যকর যোগাযোগ ও সময়ানুবর্তিতার দক্ষতা প্রমাণ করে।

পরিস্থিতি অনুসারে কথা বলুন

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নিজের সম্পর্কে বলার ক্ষেত্রে কীভাবে বর্তমান-অতীত-ভবিষ্যতের সমন্বয় করতে হবে। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শ্রোতার কথা মাথায় রেখে নিজের বর্ণনা দেওয়া। নিজেকে আরও ভালভাবে উপস্থাপনের জন্য পরিবেশ, অনুষ্ঠানের প্রকৃতি, পরিচয়ের উদ্দেশ্য বিবেচনায় রাখতে পারেন।

যেমন- চাকরির সাক্ষাৎকারে নিজের বর্ণনায় আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ থাকবে। আবার সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় অপনার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে।

শ্রোতার কথা শুনুন

নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় সবসময় যে আপনাকেই কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। যত্ন নিয়ে শ্রোতার কথাও শুনতে হবে। শ্রোতাদের প্রতি মনোযোগ দিন এবং তাদের ওপর আপনার প্রভাব বোঝার চেষ্টা করুন। দৃঢ় সম্পর্কের জন্য শ্রোতার আগ্রহের দিকে গুরুত্ব দিন এবং সে অনুসারে জবাব দিন। শ্রোতাদের দিকে আপনার পূর্ণ মনোযোগ আছে, এমনটি বোঝান এবং তারা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাদেরকে বুঝতে দিন।

কথা শেষ করুন উদ্দীপনা রেখে

নিজের সম্পর্কে ভূমিকা দেওয়া এমনভাবে শেষ করা উচিত, যাতে শ্রোতা সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশে যাওয়ার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন। কথোপকথনকে পরবর্তী ধাপে বা সম্ভাব্য গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার এটি একটি মোক্ষম উপায়। একটা দারুণ বিবৃতি কিংবা চিন্তা-উদ্দীপক প্রশ্নের মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। অথবা ভবিষ্যতে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েও ভূমিকা শেষ করা যেতে পারে।

যা করবেন না

নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় কী করা উচিত নয়, তা জানাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে একইভাবে পরিচয় দেওয়া উচিত নয়। বসের কাছে নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করবেন, সহকর্মীদের কাছে সেভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়। এ সময় অভিযোগ করা, অজুহাত দেওয়া বা নেতিবাচক মনোভাব এড়িয়ে চলুন।  আরেকটি কথা, পরিচয়ের সময় কারও সামনে বারবার ফোনের দিকে তাকাবেন না। এটা মোটেই ভালো নয়। 

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

How frequent policy shifts deter firms from going public

If a company gets listed, it will enjoy tax benefits, and this is one of the major incentives for them to go public..However, the government’s frequent policy changes have disheartened listed firms many times, as they faced higher tax rates once they got listed..It gave a clear, nega

39m ago