বাচ্চা নিচ্ছ না কেন? প্রশ্নটি করার আগে

বাচ্চা নিচ্ছ না কেন
ছবি: সংগৃহীত

বিয়ের বছর পেরোতে না পেরোতেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীর মুখে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় যে প্রশ্নটি, সেটি হলো 'বাচ্চা নিচ্ছ না কেন?'

আর বিয়ের বয়স কয়েক বছর হয়ে গেলে তো কথাই নেই। কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়, দম্পতির হয়তো কোনো সমস্যা আছে। তাই তাদের বাচ্চা 'হচ্ছে না'।

অথচ অত্যন্ত ব্যক্তিগত এই প্রশ্নটি করার অধিকার যেমন সবার থাকে না, তেমনি এটি দম্পতির জন্য বিব্রতকরও বটে। এমনও দেখা যায় যে অনেকেই শুধু সামাজিক চাপে, লোকে কী মনে করবে ভেবে সময়ের আগেই সন্তান নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করে দেন।

এই ধরনের প্রশ্ন করার পেছনে যে সবসময় কাউকে কষ্ট দেওয়াই উদ্দেশ্য থাকে, তা নয়। অনেক সময় দম্পতির মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি করতে বা ভালোবাসা প্রকাশের উপায় হিসেবেও অনেকে এ জাতীয় প্রশ্ন করে থাকেন। কিন্তু এটি যে বিব্রতকর হতে পারে, কোনো সংসারে অশান্তির কারণ হতে পারে এবং অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ হতে পারে, এভাবে অনেকেই বিষয়টি ভেবে দেখেন না।  

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ দান কেন্দ্রের উপপরিচালক ইফরাত জাহান (মনোবিজ্ঞান) বলেন, 'সাধারণত আমাদের পূর্ববর্তী জেনারেশন অর্থাৎ মা-খালা-চাচি-ফুফু-মামিরা ''বাচ্চা নিচ্ছ না কেন?'' এ ধরনের প্রশ্ন বেশি করে থাকেন। তারা মনে করেন, দম্পতিকে বাচ্চা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অনেকে আবার কৌতূহলের বশে এই প্রশ্ন করেন, যার ফলে দম্পতি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। এটা প্রশ্নকর্তার কাছে এক ধরনের বিনোদনের মতো ব্যাপার।

আগেকার দিনে সংসার কী বুঝে ওঠার আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। তাই একটি নির্দিষ্ট সময় পর বাড়ির বড়দেরই দায়িত্ব ছিল, মেয়েকে সন্তান নেওয়ার কথা বলা। যুগ যুগ ধরে চলমান এই সংস্কৃতি থেকে এখনও বের হতে পারছেন না অনেকে।'

এ ধরনের প্রশ্ন করা কেন উচিত নয়?

মনোবিদ ইফরাত জাহান বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে চর্চা করার প্রবণতা অনেক বেশি। অনেকে জানেনই না কোন বিষয়টি ব্যক্তিগত আর কোনটি ব্যক্তিগত নয়। তাই একটি পরিবারে কবে সন্তান আসবে এ ধরনের প্রশ্ন করার অনধিকার চর্চা এদেশে খুবই সাধারণ ঘটনা। অনেক দম্পতি আছে যারা পরিকল্পনামাফিক দেরি করে বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছে। তাদের জন্য এই প্রশ্নগুলো বিব্রতকর। কিন্তু যে দম্পতি আসলেই সন্তান জন্ম দিতে পারছেন না বা জটিলতার মুখে পড়েছেন, তাদের জন্য এই প্রশ্নগুলো যতটা না বিব্রতকর তার চেয়েও বেশি কষ্টদায়ক।

আপনি হয়তো নিছক জিজ্ঞাসার ছলে কাউকে এমন প্রশ্ন করে বসলেন। কিন্তু এই প্রশ্নের প্রভাব সেই ব্যক্তির মনে কীভাবে পড়বে আপনি জানেন না। সবার জীবন আলাদা, জীবনের লক্ষ্য আলাদা, তাই আগ বাড়িয়ে কাউকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা, পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়। সে যত কাছের মানুষই হোক না কেন।'

এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে কী করবেন?

মনোবিদ ইফরাত জাহান বলেন, 'বাচ্চা কবে হবে, বিয়ে কবে করবে, চাকরি হচ্ছে না কেন, বেতন কত- এ জাতীয় প্রশ্ন এই সমাজে নতুন কিছু নয়। সবসময় যে কাউকে বিব্রত করতেই এমন প্রশ্ন করা হয়, তাও না। কেউ কেউ অধিকারবোধ থেকে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে এ জাতীয় প্রশ্ন করে থাকেন।

তবে প্রশ্নকর্তা যা ভেবেই প্রশ্ন করুন না কেন, উত্তরদাতার জন্য প্রশ্নটি অনেক সময়ই অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়।

মনে রাখতে হবে, প্রশ্নকর্তাকে আপনি হয়তো সবসময় শুধরে দিতে পারবেন না। কিন্তু তার কথায় কষ্ট পাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত আপনার। তাছাড়া যিনি এ প্রশ্ন করছেন তার উদ্দেশ্য যদি ভালো হয়, সেক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। সবার দৃষ্টিভঙ্গি, অতীত ইতিহাস, পারিবারিক শিক্ষা সমান না। তাই অন্যের প্রশ্নে প্রভাবিত না হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনের সিদ্ধান্তই এখানে মুখ্য হওয়া উচিত, অন্য কারো নয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Air purifiers for Dhaka: hope or hype?

DNCC to set up 25-30 such industrial devices in public places to curb pollution; experts skeptical

12h ago