ঘরের কোন অংশে কেমন আলো

ছবি: সংগৃহীত

কাশ যে সাদা, ধেনু সাদা, আর সাদা খেয়ার পাল

সাদা যে ওই স্বপ্নমাখা রাজহংসের পাখা…

সাদার চেয়েও সাদা আছে, আবার সব সাদাই দেখতে ঠিক সাদা মনে হয় না। নরম সাদা, তীব্র সাদা, আছে সাদার মাঝেও একটু কম সাদা। আর কথা যখন হচ্ছে ঘরে থাকা বাতি নিয়ে, তখন তো সাদার বিভিন্ন রকমফের চোখে পড়ে– চোখের উপরও যার আলাদা আলাদা প্রভাব। শুধু কি চোখে? মনেও তো এর প্রভাব কম নয়।

মন-মেজাজে আলোর আমেজ

ইংরেজি ভাষায় 'মুড লাইটিং' বলে একটা কথা আছে। মূলত রোমান্টিক কোনো আবহের জন্য ঠিকঠাক আলো বেছে নেওয়াটাকেই বোঝায় এই কথাটির মাধ্যমে। এখন কথা হচ্ছে, এই 'মুড ঠিক করে দেওয়া' আলোটা কেমন হবে? অতি উজ্জ্বল, ফ্লুরোসেন্ট নাকি শীতের রাতে ঘরের কোণে জ্বলতে থাকা ফায়ারপ্লেসের আরামদায়ক আগুন? নিশ্চয়ই পরেরটাই বেশি মানানসই মনে হবে।

মানুষের মন-মেজাজের ওপর যে আলো প্রভাব ফেলে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও ব্রিঘাম অ্যান্ড উইম্যান'স হসপিটাল দ্বারা পরিচালিত 'দ্য হিউম্যান সার্কাডিয়ান সিস্টেম' শীর্ষক গবেষণা থেকে জানা যায়, মানুষের জৈব রাসায়নিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আলো সবচেয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

উষ্ণ আলোতে মনে আরামের অনুভূতি জন্ম নেয়। এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক আলস্য ঘিরে ধরে। অন্যদিকে শীতল আলোর কারণে মানুষ উত্তেজনা অনুভব করে, আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। এ কারণেই তীব্র আলোর নিচে বিশাল অফিসরুম কিংবা শপিংমলে অনেক বেশি সময় থাকলে ক্লান্তি জেঁকে ধরে। কর্মক্ষেত্রে পরিসরে শীতল আলো রাখা হয় যাতে কর্মীরা আরামে ডুব না দেন এবং তাদের মস্তিষ্ক সদা সতর্ক থাকতে পারে।

আলো শুধু যে মেজাজ-মর্জিতেই লাগাম টানতে পারে তা নয়, আলোর ক্ষমতা রয়েছে রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়ারও। এমনিতেও অনেকে একটুও আলো থাকলে ঘুমাতে পারেন না। সে অভ্যাস ছাড়াও আরেকটি পন্থায়ও আলোর কারণে নিদ্রাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 'দ্য জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি' থেকে জানা যায় যে অতিরিক্ত মাত্রার নীল আলো বা অতি উচ্চ মাত্রায় নির্গত আলো ব্যক্তির ভালো ঘুম হবার সুযোগ কেড়ে নিতে পারে। ঘুম নিয়ে একটুও দুশ্চিন্তা থাকলে শোবার ঘরের আলো নিয়ে তাই অনেক বেশি সচেতন থাকা দরকার।

শুধু ঘরের বাতির রংটা ঠিকঠাক বেছে না নেওয়ার কারণে আরামের ঘুমকে কেইবা বিদায় জানাতে চায়! শোবার ঘরে ডিমলাইটের ব্যবহার বেশ প্রচলিত। তবে ডিমলাইটের রংটা যেন এমন না হয়, যাতে অস্থিরতা তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও আলোক উষ্ণতার বিষয়টি আলাদাভাবে মাথায় রাখতে হবে।

আলো যেহেতু কাজ ও জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলতে সক্ষম, তাই বাসাবাড়ির বিভিন্ন অংশে আলো রাখলে স্বচ্ছন্দ সময় কাটানো যাবে। নান্দনিক উপস্থাপনাই শুধু নয়, কার্যকারিতার বিষয়টিও আলো বাছাইয়ের সময় খেয়াল রাখা জরুরি।

কতটুকু জায়গা জুড়ে আলো ছড়াবে, কতটুকু জায়গায় আলো দরকার এবং ঘরের কোন অংশটিতে 'আবছা' ভাবই ভালো, খুব নির্দিষ্ট করে এসব খুঁটিনাটি ঠিক করতে হবে। যেমন বসার ঘর, শোবার ঘর বা হলরুমের আরামদায়ক আবহের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যবহার করা যায় উষ্ণ থেকে উষ্ণ সাদা আলো।

অন্যদিকে রান্নাঘর, বাথরুম, কাপড়-চোপড় রাখার জায়গা ইত্যাদি কর্মব্যস্ত জায়গায় রাখা যায় সাদা বা শীতল সাদা বাতির ব্যবহার। বাণিজ্যিক অংশ, আর্ট স্টুডিওর মতো জায়গাগুলোতে 'ডে লাইট' বা 'দিনের আলো'ই বেশি ভালো। তবে সবসময় যে অনেকগুলো বিকল্প থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে, এমন সীমাবদ্ধতা রাখারও দরকার নেই। চাইলেই ভিন্ন ঘরানার আলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে নিজস্ব কাস্টমাইজেশনে তৈরি করা যায় নিজের পছন্দের আলো।

Comments

The Daily Star  | English

Top criminal Subrata Bain held in secret Rab custody since 2022: commission

The Commission of Inquiry on Enforced Disappearances submitted the findings to the chief adviser yesterday

10m ago