বাথরুমেও মোবাইল ফোন নিয়ে যান? লক্ষণ নোমোফোবিয়ার

ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল যুগে আমাদের নিত্যসঙ্গী হাতের স্মার্টফোনটি। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠা এর অ্যালার্মে, রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগেও অধিকাংশ মানুষেরই চোখের সামনে থাকা শেষ বস্তুটি তার প্রিয় মুঠোফোন।

ফোনে চার্জ না থাকলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়া, সময়ে সময়ে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই কোনো নোটিফিকেশন এসেছে কি না দেখা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিউজফিড স্ক্রল কিংবা রিলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া– সবকিছুরই সাক্ষী এবং মাধ্যম উভয়েই এই ডিজিটাল ডিভাইসটি। দিনে দিনে নিজেরই অজান্তে আমরা কখনো কখনো এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ি এটির ওপর যে, কিছুক্ষণের জন্যও ফোন থেকে দূরে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ফোন কাছে না থাকলেই এক ধরনের অনিরাপত্তা বা ভয়ে ভুগতে থাকি। তাত্ত্বিকভাবে এই ভীতিটির নাম দেওয়া হয়েছে 'নোমোফোবিয়া'। ইংরেজি পরিভাষায় 'নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া'র সংক্ষিপ্ত রূপ এই শব্দটি।

উদাহরণ হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কথাই বলা যাক। এক দল কিশোর-কিশোরী সামনাসামনি বসে আছে অথচ সবার হাতেই ফোন— এটা খুব সাধারণ দৃশ্য এখন। কেউ কারো সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগে ব্যস্ত নয়, যতটা ব্যস্ত তারা মুঠোফোনের জগতে সংযুক্ত থাকতে। এমনকি তাদের বেশিরভাগ কথাবার্তার উপাদানও এই ফোন বা ফোন বিষয়ক বিভিন্ন আলাপ নিয়েই। সমস্যাটা এই বয়সীদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি হলেও এর পরিসর ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখন আর বয়সের সীমারেখায় বাঁধা নেই নোমোফোবিয়ার মতো সমস্যা।

উপসর্গ বা লক্ষণ

●         কোনোভাবেই ফোন বন্ধ করতে না পারা

●         বারবার ম্যাসেজ, ইমেইল বা কল লিস্ট দেখতে থাকা যাতে কিছু 'মিস' হয়ে না যায়

●         ফোন সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাবার পরও একটানা চার্জ করতে থাকা

●         যেকোনো জায়গায় ফোন সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, এমনকি বাথরুমেও

●        বাইরে কোথাও গেলে ব্যাগ বা পকেটে ফোন আছে কি না, এ নিয়ে বারবার দুশ্চিন্তায় ভোগা

●         নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা

●         অনলাইন মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়

●         শুধু ফোনে সময় কাটানোর জন্য অন্য পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দেওয়ার মতো চরম আচরণ

নোমোফোবিয়ার 'বিহাইন্ড দ্য সিন'

কোনো ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের পেছনে মনস্তাত্ত্বিক অনেক বিষয়ই ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন আত্মবিশ্বাসের অভাব, অন্তর্মুখী স্বভাব ইত্যাদি। কেউ কেউ সামনের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগে দুর্বল অনুভব করলে তখন ফোনের পেছনে আশ্রয় খোঁজেন। সবার মধ্যে প্রবলভাবে একা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার বদলে বরং সবার মধ্যে মোবাইল ফোনে ডুবে থাকাই তাদের কাছে সহজতর মনে হয়। এ ধরনের অভ্যাসের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবেও ব্যক্তি নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। সামাজিক ফোবিয়ার ফলাফল হিসেবেও ব্যক্তির জীবনে এই ফোবিয়ার আবির্ভাব ঘটতে পারে।

সমাধান কী

এই জমানায় ফোন যে খুবই কাজের জিনিস এবং এ থেকে খুব একটা বিচ্ছিন্ন থাকাও বিচক্ষণের কাজ নয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নোমোফোবিয়ার মতো চূড়ান্ত পর্যায় থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনদের বাঁচিয়ে রাখতে কিছু ভালো অভ্যাসের চর্চা করা যায়। এর মধ্যে অন্যতম অবশ্যই 'ফোন এটিকেট' অনুশীলন।

আমাদের সবার মনে রাখতে হবে যে, ফোনের প্রাথমিক ও প্রধানতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দূরে থাকা অবস্থায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনদের সঙ্গে আমাদেরকে সংযুক্ত করতে পারা। তাই তারা যখন সামনে আছে, সেক্ষেত্রে দূরের দুনিয়ায় হাত না বাড়িয়ে নিজেদের চেনাজানা পরিসরে প্রত্যক্ষ সময় কাটানোই শ্রেয়। সম্ভব হলে মুখোমুখি যোগাযোগের সময় ফোন সরিয়ে রাখা এবং খুব প্রয়োজন না হলে সেদিকে মনোযোগ না দেওয়াই ফোন ব্যবহারের অনুকরণীয় শিষ্টাচার বা এটিকেট।

ছোটদের ক্ষেত্রে বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের নিজের জায়গা থেকেই খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় ফোন ব্যবহার  প্রয়োজনের মাত্রা ছাড়িয়ে নোমোফোবিয়ায় পরিণত হচ্ছে কি না।

 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago