গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত

নিত্যদিন যেভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, সেক্ষেত্রে আমাদের বাসস্থান বা কর্মস্থলে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার যে একেকটি টাইম বোমা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত
ছবি: সংগৃহীত

বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) হোক বা যানবাহনে ব্যবহৃত কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি), গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার এড়ানোর খুব একটা উপায় আমাদের হাতে নেই।

এসব সিলিন্ডারে সাধারণত এলপিজি ও সিএনজির মতো অতি দাহ্য গ্যাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এতে ঝুঁকি তো রয়েছেই। এ ছাড়া নিত্যদিন যেভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, সেক্ষেত্রে আমাদের বাসস্থান বা কর্মস্থলে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার যে একেকটি টাইম বোমা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক থাকার জন্য চলুন জানি গ্যাস সিলিন্ডার কীভাবে নিরাপদে ব্যবহার করা যায়।

উপরের দিকে মুখ করে রাখুন

যদি ভিন্ন কোনো নির্দেশনা লেখা না থাকে সেক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডার উপরের দিকে মুখ করে রাখা উচিত। সিলিন্ডার খালি হোক আর ব্যবহারের মধ্যে থাকুক, দুইক্ষেত্রেই এভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে এলপিজি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে উপরের দিকে মুখ করে রাখলে তরল গ্যাস লিক করবে না এবং আগুন লাগার ঝুঁকিও থাকবে না।

ভেন্টিলেশনের সুব্যবস্থা

গ্যাস সিলিন্ডারগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে গ্যাস লিক হলেও কোনো একটি জায়গায় আবদ্ধ হয়ে থাকার আশঙ্কা কমে যাবে। যেমন ছাউনিসহ কোনো স্থান, বড় জানালা আছে এমন রুম, প্রবেশদ্বার এবং যান্ত্রিক ভেন্টিলেশন আছে এমন ঘরগুলো এক্ষেত্রে ভালো স্থান। এ ছাড়াও সিলিন্ডারগুলো যাতে কোনো ধরনের তাপের উৎস, জলীয় উৎস এবং দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে একই স্থানে সংরক্ষিত দুটি গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে অন্তত ৩ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। ভবন বা সিঁড়ির সামনের খোলা জায়গাতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা খুবই বিপজ্জনক। কারণ এতে আপদকালীন সময়ে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মাটির নিচে রাখা যাবে না

অনেক স্থানেই গাড়ির পার্কিং বা বেসমেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এটি একটি বড় রকমের ভুল। কারণ মাটির নিচের স্থানে গ্যাস লিক হলে এক জায়গায় জমাট বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। ফলে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

সিলিন্ডার গড়িয়ে নেওয়া যাবে না

গ্যাস সিলিন্ডার ওজনে বেশ ভারি হয়ে থাকে। তাই বহনের সময় কিছু নিরাপত্তা শর্ত মেনে চলা জরুরি। কোনোভাবেই যেন সিলিন্ডার মাটিতে গড়িয়ে বা টেনে না নেওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমনটা করলে সিলিন্ডারের ক্ষতি হতে পারে এবং তা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতর সৃষ্টি হতে পারে। শুধু উপযোগী ট্রলি, কার্ট বা ট্রাকেই গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহন করা উচিত।

সঠিক ও উপযুক্ত লেবেল ব্যবহার

গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত বিভিন্ন লেবেল ও মার্কিংসহ বিক্রি করা হয়। এতে ভালোভাবে লেখা থাকে যে এই সিলিন্ডারে কী ধরনের গ্যাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এটি কতটুকু নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন নিরাপত্তা শর্তও গ্যাস সিলিন্ডারের বাইরে লিখে দেওয়া হয়। কোনোভাবেই এই চিহ্ন বা লেবেলগুলো সরানো যাবে না। সরিয়ে ফেললে সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরা এ বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন না। সম্ভব হলে ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডারে আলাদা করে নিজস্ব চিহ্ন বা বার্তাও জুড়ে দেওয়া যেতে পারে, যাতে করে অন্যরা আগে থেকেই সতর্ক থাকে।

ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সিলিন্ডার আলাদা রাখতে হবে

ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত– দুই ধরনের সিলিন্ডারই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এগুলো আলাদা রাখতে হবে। এ ছাড়াও ভিন্ন ধরনের গ্যাস আছে এমন সিলিন্ডারও আলাদা রাখতে হবে। কারণ একসঙ্গে রাখলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

যত্ন ও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে গ্যাস সিলিন্ডার একটি বিপজ্জনক বস্তু। তাই সিলিন্ডারের আশপাশে থাকা অবস্থায় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যারা এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন, শুধু তারাই এগুলোর দায়িত্বে থাকবেন। যারা এই যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের দিয়ে কোনোভাবেই সিলিন্ডার সংক্রান্ত কাজ করানো যাবে না।

এ ছাড়াও গ্যাস সিলিন্ডার ধরার সময় গ্লাভস এবং অ্যান্টি-ফ্লেমেবল পোশাক পরা জরুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সিলিন্ডার ধরাছোঁয়া বা ব্যবহারের সময়ে নিরাপত্তাই যেন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, এক্ষেত্রে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। কোনো ধরনের ঝুঁকি দেখা গেলে, অন্য যেকোনো কিছুর আগে অবশ্যই নিজের ও অন্যের প্রাণ বাঁচানোর প্রতি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments