ভালো বক্তা হতে হলে

কোথাও বক্তব্য দেওয়ার আগে কিছু বিষয় মেনে চললে শ্রোতার সঙ্গে আপনারও সুবিধা হবে। 
ভালো বক্তা
ছবি: সংগৃহীত

আজকাল খুব বেকায়দায় না পড়লে আলোচনা শুনতে চায় না কেউ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে অনীহা নিয়েই যেতে হয়। কানকে রীতিমত অনুরোধ করতে হয় কথা শোনার জন্য। শ্রোতা কী ই বা করবেন, বক্তা যদি মনোযোগ ধরে রাখতে না পারেন? কোথাও বক্তব্য দেওয়ার আগে কিছু বিষয় মেনে চললে শ্রোতার সঙ্গে আপনারও সুবিধা হবে। 

সাদামাটা ভূমিকা নয়, গল্প দিয়ে শুরু করুন

মনে করুন, আপনি বসে আছেন একটি কনফারেন্স রুমে। যেখানে একেকজন বক্তা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে 'ফ্যাক্ট চেকিং' নিয়ে বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় উপস্থাপন করবেন একেক করে। শুরুতেই এক উপস্থাপক এসে নিজের পরিচয় দিলেন, উপস্থিত শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানালেন। তারপর ফ্যাক্ট চেকিং কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ, ফ্যাক্ট চেক না করলে কী কী ক্ষতি হয় তা উল্লেখ করে এটির নানাদিক নিয়ে কথা বলতে থাকলেন একনাগারে।

অন্যদিকে আরেকজন বক্তা এসে প্রথমেই বলে বসলেন, বিখ্যাত একজন ব্যক্তি মারা গেছেন একটু আগে। আপনি শোনামাত্রই নড়েচড়ে বসলেন। সংবাদটি সত্য কিনা তা যাচাই না করেই বিশ্বাস করে বসলেন তো বোকা বনে গেলেন। এটিই হলো ফ্যাক্ট চেকিং নামক খেলা।

আপনি বলুন এবার, কোনটি আপনার মনোযোগ কাড়বে? সাধারণ কথাবার্তা দিয়ে বক্তব্য শুরু না করে একটু ভিন্ন তরিকায় হেঁটে দেখুন তাহলে। শ্রোতা মনোযোগ না দিয়ে পালাবে কোথায়!

 

ধীরে ধীরে মূল প্রসঙ্গের দিকে এগিয়ে যান

বক্তব্য শুরুর কয়েক লাইন শ্রোতার  ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। পরবর্তী কথাবার্তা শুনবেন কি না শ্রোতা ঠিক করে ফেলেন তখনই। এমন কোনোকিছু বলা যাবে না, যার কারণে শ্রোতা আপনার কথা শুনতে আগ্রহ হারাতে পারেন। তাই প্রথমেই ভারী কথাবার্তা না বলাই ভালো। আবার মোটামুটি সবারই জানা এমন কোনো তথ্য বলবেন কিনা তাও ভেবে দেখবেন।

যতটা পারেন, নতুন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন সহজ করে। কঠিন শব্দ এড়িয়ে মনে রাখা যায় এমনভাবে কথা বলতে হবে। এতে আপনারও বক্তব্য দিতে বেগ পেতে হবে না, শ্রোতাও মনোযোগ হারাবে না। ভালো হয় যদি শুরুতে স্টার্টার, এরপর মেইন মিল, শেষে ডেজার্টের মতো তথ্য উপস্থাপন করতে পারেন। অনেকটা বুফের খাবারের মতো আর কি!

বক্তব্যের সঙ্গে নিজের অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তন করুন

বেশ বলছেন কৌতুক, কিন্তু মুখ করে রেখেছেন হাড়ির মতোন। শ্রোতা তো মুখ ঘোরাবেই, সঙ্গে কানকেও বলবে আপনার কথায় পাত্তা না দিতে। বক্তব্য শুরুর আগে হাবভাব ঠিক রাখার কথা ভুলে গেলে চলবে না। কারণ শ্রোতা-দর্শকের ভূমিকায় থেকেও দেখবে আপনাকে। ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়ার পরও সব পরিকল্পনা অনুযায়ী নাও হতে পারে। তখন ঘাবড়ে গেলে চলবে না। অস্বস্তি লাগলেও চেহারায় প্রকাশ করতে দেওয়া যাবে না। বক্তব্যের ওপর দখল থাকলে আপনার হাত পা এমনিতেই সাড়া দেবে। গম্ভীর কণ্ঠস্বর থেকে বেরিয়ে সারল্য বজায় রেখে কথা বলতে পারেন কি না দেখুন। স্মার্ট বক্তার কদর কতখানি, বুঝে যাবেন আপনাআপনি।

বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য ভিন্নভাবে উপস্থাপন করুন

কোন শিক্ষকের ক্লাস বেশি উপভোগ করতেন আর কোনটিতে বিরক্ত হতেন মনে করে দেখুন তো। পছন্দের শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার ধরন স্মরণে রেখে বক্তব্য দিলেও ভালো সাড়া পাবেন। বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা তথ্য তুলে ধরতে হতে পারে। সেজন্য স্লাইড ব্যবহার যদি অপরিহার্য হয় তবে সেগুলো বানাতে হবে এমনভাবে শ্রোতার চোখ যেন সেখানে আটকে না থাকে। স্লাইড ব্যবহার ছাড়াও কিছু প্রপস ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সেটা হতে পারে কাগজ, স্মাইলি বল, খেলার সরঞ্জাম ইত্যাদি। এতে আপনার প্রতি শ্রোতা মনোযোগীও হবে, বক্তব্য শেষে আপনার নামখানাও মনে রাখবে৷

মাঝেমধ্যে শ্রোতার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিন

একা বকবক করে ক্লান্ত হয়ে যাবেন ভাবছেন? মজার ছলে শ্রোতার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে নিতে পারেন। নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কারো মিল আছে কি না জিজ্ঞেস করতে পারেন। শ্রোতার প্রশংসা করতে পারেন। শ্রোতা খুশি না হয়ে যাবে কোথায়! এ ছাড়া বক্তব্যের শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে অনেক ক্ষেত্রে। আপনি চাইলে আলোচনার মাঝেও শ্রোতাকে প্রশ্ন করতে পারেন। সবাই জানে এমন উত্তর নিজে না বলে জেনে নিতে পারেন। এতে কোনো শ্রোতা মনোযোগী না থাকলেও আপনার কথা শুনবে যদি তাকে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসেন ভেবে। একটু চালাক না হলে, ভালো বক্তা হবেন কী করে?

 

Comments

The Daily Star  | English

Saber Hossain Chowdhury arrested

The Detective Branch of police today arrested Saber Hossain Chowdhury, former environment forest and climate change minister and Dhaka-9 lawmaker, at the capital’s Gulshan

3h ago