ফল সেমিস্টার: আবেদন প্রক্রিয়ায় জেনে রাখা প্রয়োজন যে বিষয়গুলো

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক ইয়ারে সাধারণত স্প্রিং এবং ফল দুটো সেমিস্টার। মূলত ফল বা অগাস্টের সেমিস্টারেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ফান্ডিং সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে সেমিস্টার অগাস্টে শুরু হলেও ফান্ডিং সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। আর তাই পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে তার আগের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই।

ল্যাংগুয়েজ টেস্ট আর এসওপি

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কলেজ বা বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী একেক ল্যাংগুয়েজ টেস্ট প্রয়োজন। তবে কোভিডের সময় থেকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিআরই বাধ্যতামূলক নেই। তবে এটা একেবারেই নির্ভর করে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আর তাদের বিভাগগুলোর উপরে। যেমন- নিজ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ইউনিভার্সিটি অফ মিজোরিতে ওয়েবসাইটে সরাসরি জিআরই বাধ্যতামূলক নয় বলা থাকলেও সেখানকার অনেক বিভাগই জিআরই বাধ্যতামূলক হিসেবে রেখেছে। সেটা বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের উভয় বিষয়েই। তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই এই নিয়ম থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাই ল্যাংগুয়েজ টেস্ট, আইইএলটিএস বা টোফেল পরীক্ষার পর্ব জুলাই থেকে অগাস্টের মধ্যেই সেরে ফেলা প্রয়োজন। এতে স্কোর পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করতে সুবিধা হয়।

এরপর যেখানে আবেদন করবেন সেখানকার কিংবা সেই বিভাগের শিক্ষক, তাদের গবেষণা, কী বিষয় পড়ানো হয়, সবকিছুর সঙ্গে মিলিয়ে স্টেটমেন্ট অফ পারপাস বা এসওপি গুছিয়ে নিতে হবে। সাধারণত এসওপি আবেদন প্রক্রিয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং কিছুটা সময়সাপেক্ষও। তাই এ সময় নিজের গবেষণার নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আগ্রহ আছে বা ইতোমধ্যে আপনার কোন পেপার বা আর্টিকেল আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই-নির্বাচন

আমেরিকায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ই সমানভাবে যেমন ভালো নয়, তেমনি আপনার নিজের প্রোফাইল, গবেষণার ধরন অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও সঠিক নয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই শুনেছি এ পর্যায়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পরে। হয়তো আপনার পছন্দের কোনো স্টেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি পড়তে চাইছেন কিন্তু সেখানে লিভিং কস্ট অনেক বেশি। আবার আবহাওয়া হয়তো বিশেষ সুবিধের না আপনার জন্য। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোন ক্যাম্পাসে আপনার ফান্ডিং হবে এবং সেখানে আয়ের তুলনায় ব্যয় কেমন হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের সময়ে সাধারণত ৪টি তালিকা করা যেতে পারে। একেবারে টপ র‍্যাঙ্ক থেকে শুরু করে, মধ্য মানের, কিছুটা ভাল এবং সব শেষে আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী যেখানে ফান্ড পাবার সম্ভাবনা থাকবে। এরপর প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র গুছিয়ে আবেদন করার সময় এই তালিকা থেকেও আরও বাছাই করুন। কারণ প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদনের ফি রয়েছে যা বেশ ব্যয়বহুল। তাই চাইলেও অনেক বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে আবেদন করা সম্ভব হয় না।

অধ্যাপক কিংবা ডিরেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ

কিছু ক্ষেত্রে ফান্ডিংয়ের জন্য অধ্যাপককে সরাসরি গবেষণার কথা বা কাজের আগ্রহ জানাতে হয়, বিশেষ করে বিজ্ঞান বা সায়েন্সের বিষয়গুলোতে। তবে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ফান্ডিং বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে হয়ে থাকে, তাই অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে এমন নয়। তারপরেও যেখানে আপনি আবেদন করছেন, তার বিস্তারিত জানতে কোন অধ্যাপক কিংবা গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিরেক্টরের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। কারণ ওয়েবসাইটে অনেক তথ্যই সাধারণ ভাবে দেওয়া থাকে, কিন্তু গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিরেক্টর এর প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে থাকে। তাই ফান্ডিং থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস, বিভাগের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীসহ যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে ডিজিএসের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।

রেফারেন্স লেটার

আবেদন প্রক্রিয়ার অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই রেফারেন্স লেটার। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই সাধারণত ৩টি লেটার চেয়ে থাকে। তাই যেই শিক্ষককেই বলবেন তাকে অন্তত এক মাস আগে থেকে জানিয়ে রাখুন। রেফারি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোর্সের নম্বর, শিক্ষকের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, সেই সময়ে তার ব্যস্ততা আছে কি না, সবকিছু ঠিক করে নিন। এই পুরোটা সময় আপনার নিজেরই দায়িত্ব হবে শিক্ষককে মনে করিয়ে দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল, লিংক ঠিকমত দেখে নেওয়া।

যাবতীয় কাজগপত্র গুছিয়ে নেওয়া

এসবের পাশাপাশি সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক সব গুছিয়ে নির্দিষ্ট ডেডলাইনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেহেতু সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনের সময়সীমা প্রায় একই সময়ে থাকে, তাই ডেডলাইন নোট করে রাখাটাই ভালো। শুধু আবেদনের সময়সীমা নয়, পুরো আবেদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সব কিছুই নোট করে রাখতে হবে। এতে সময়ের মধ্যে কাজ যেমন এগুনো যায়, তেমনি কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়। ডিজিএসের ই-মেইল, ক্যাম্পাস-বিভাগের ঠিকানা, ট্রান্সক্রিপ্টের সময় আছে কি না, যদি হার্ডকপি কিছু সেখানে পাঠাতে হয় সে জন্য কতদিন লাগতে পারে সব কিছু গুছিয়ে সময়সীমার এক-দু সপ্তাহ আগে আবেদন করাটা ভাল। এতে যদি পরে কোনো ভুলও হয়, সেটা সংশোধনের সুযোগ থাকে।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Comments