পছন্দের মানুষকে বিয়েতে পরিবারের ‘না’, কী করবেন

পছন্দের মানুষকে বিয়েতে পরিবারের না
ছবি: সংগৃহীত

সায়রা ও মামুনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবে পরিচয়। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রণয়ে। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেছেন মামুন। অন্যদিকে সায়রা সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সায়রা মামুনের কথা পরিবারের জানালে তার পরিবার কিছুতেই বেসরকারি কর্মজীবী ছেলে মেনে নিতে চায় না।

শ্রেয়াস ও বৃষ্টির ফেসবুকে পরিচয়, সেখানেই টুকটাক কথাবার্তা। আস্তে আস্তে সেই পরিচয় রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। বিয়ের পরে ছোট্ট সংসার সাজানোর পরিকল্পনা তাদের। শ্রেয়াস তার পরিবারে জানান বৃষ্টির কথা। ভিন্ন ধরনের পরিবার, ভিন্ন জেলা এরকম অনেক কারণ দেখিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি চায় না শ্রেয়াসের পরিবার।

এরকম ঘটনা আশপাশে হরহামেশাই চোখে পড়ে। আত্মীয়-স্বজনের থেকে এমন অনেক ঘটনাই শুনে থাকতে পারেন, দেখে থাকতে পারেন। বিয়ের আগে যদি আপনার পরিবার আপনার সঙ্গীকে যদি পছন্দ না করে থাকে, সেক্ষেত্রে কী করণীয় সে বিষয়েই পরামর্শ রইল কিছু।

বিয়ে জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিয়ে কিছু সময় দেখা, কথা বলার ব্যাপার নয়। তাই যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে বিয়ে করা উচিত। শুধু 'পছন্দ' বিয়ের জন্যে যথেষ্ট নয়। সম-সামাজিক, সম-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের কী না তা দেখতে হবে, পরিবার একমত হচ্ছে কি না তাও দেখতে হবে। পছন্দ দুজনের হতে পারে, কিন্তু ছেলে হোক বা মেয়ে, পরিবারের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। আবার এটাও ঠিক যে, মা-বাবা অনেকসময় তুচ্ছ কারণেও অমত করেন। সেক্ষেত্রে বাবা মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও বুঝতে হবে।

আপনি যখন কাউকে ভালবাসেন তার প্রতি সবসময় ইতিবাচক থাকেন। পরিবার থেকে যখন আপনার সঙ্গীকে মেনে নেওয়া হয় না তখন রাগ, অভিমান হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় দেখা যায় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেন। অনেকেই আবার পরিবারের কাছ থেকে গোপন রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যান। এগুলো আসলে পরিবার থেকে 'না' শোনার পর আপনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। 

বিয়ে করার জন্য আপনি যাকে পছন্দ করেছেন তাকে নিশ্চয়ই আপনি ভালোবাসেন। তাই পরিবারকে বোঝাতে হবে। তবে অবশ্যই রাগ বা ঝগড়া করে নয়। সঙ্গীর ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন। আপনি কেন তাকে নির্বাচন করেছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। তাদের কাছে জানতে চান কেন আপনার পছন্দ করা সঙ্গীকে তারা মেনে নিচ্ছেন না। অনেকেই আছেন যারা ভয় পেয়ে কোনোমতে একবার নিজের পছন্দের কথা বলেন সাহস করে। তারপর আর মুখেও আনেন না, নিজের কষ্ট মনে চাপা দিয়ে রাখেন। তা না করে কয়েকবার বলুন, হাল ছাড়বেন না।

এটিও মাথায় রাখুন যে পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে বাবা-মা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবেন এবং জীবন নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। তাদের যুক্তিগুলো যদি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় তবে আরেকটিবার সম্পর্ক নিয়ে ভাবুন। অনেক সময় কারণ ছাড়াই পরিবারের লোকজন আপনার সঙ্গীকে অপছন্দ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের যুক্তি দিয়ে বোঝান এবং আপনার অবস্থান তাদের বুঝিয়ে দিন।

অনেকেই আবার পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেরা বিয়ে করে ফেলেন। ভাবতে পারেন যে একটা সময় পরিবার তো মেনে নেবেই। তবে মধ্যবর্তী সময়টা আপনারা সামলে নিতে পারবেন কি না সেটিও চিন্তা করা উচিত।

পরিবারের সদস্যদের করণীয়

পরিবারের সদস্যদের একে অন্যের চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আপনি যদি বাবা বা মা হয়ে থাকেন এবং সন্তান যদি পছন্দ অনুযায়ী সঙ্গী নির্বাচন করেন, তবে শুধু ইগোর কারণে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বাধা দেওয়া উচিত না। বাবা-মায়েরও মনে রাখতে হবে, বিয়ে সন্তানের ব্যক্তিগত ব্যাপার। দুটি মানুষ একসঙ্গে সারা জীবন পার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখানে পরিবারের সদস্য হিসেবে পরামর্শ দিতে পারেন, বোঝাতে পারেন কিন্তু কিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না।

পরিবারের সদস্য হিসেবে মনে হতে পারে যে, তিনি যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে চাচ্ছেন তিনি তার জন্য ভবিষ্যতে খুব একটা ভালোকিছু বয়ে আনবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনার জায়গা থেকে তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝান। তবে সঙ্গীর ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। এতে ফলাফল হতে পারে উল্টো। জোর করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে বা পছন্দের মানুষকে না পেলে তার মনের কী অবস্থা হবে বা ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হতে পারে কি না সেটিও ভাবা উচিত। 

 

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

14h ago