গ্রে ডিভোর্স: ৫০ পরবর্তী জীবন, ভালোবাসা ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের আদ্যোপান্ত

গ্রে ডিভোর্স

বিল ও মেলিন্ডা গেটস, হিউ ও ডেবোরা জ্যাকম্যান এবং এ আর রহমান ও সায়রা বানু- এই তিন দম্পতি সবশেষ একসঙ্গে আলোচনায় এসেছেন যখন তারা ঘোষণা দিয়েছেন আলাদা হয়ে যাওয়ার। দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটানোর পর তারা প্রত্যেকেই বিচ্ছিন্ন হয়েছেন নিজেদের তরুণ বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার পর। নির্দিষ্ট করে বললে, বয়স ৫০ এর ঘর পেরোবার পর।  

৫০ বছরের পর যে বিচ্ছেদ, তার একটা কেতাবি নাম আছে- গ্রে ডিভোর্স।

হঠাৎ করেই আশপাশে এই গ্রে ডিভোর্সের প্রবণতা বাড়ছে, শোনা যাচ্ছে দীর্ঘ বছরের সংসার ভেঙে যাওয়ার কথা। কেন বাড়ছে এই প্রবণতা?

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গ্রে ডিভোর্স ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া সামাজিক পরিবর্তনগুলোরই প্রতিফলন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। যেমন গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, বৈবাহিক সম্পর্কের প্রতি প্রত্যাশার প্রতিবর্তন এবং বয়স্কদেরও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার হার বৃদ্ধি। লম্বা দাম্পত্যের পর বিচ্ছেদ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর জন্য এক ধরনের মানসিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে, পরিবারগুলোর গতিপথ পরিবর্তন করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকেও যথেষ্ট আঘাত করে।

গ্রে ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার কারণ

অনেক দম্পতি কেবল সন্তানের জন্যই একসঙ্গে থাকেন। সেই সন্তানরা এক সময় বড় হয়, বাড়ি ছেড়ে চলে যায় নিজের জীবন গড়তে। আর ঠিক সেই সময় খালি বাড়িতে বাবা-মায়েরা এমন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েন যাকে বলা হয় 'এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম'। তারা বুঝতে পারেন যে, তাদের মধ্যে কোনো মিল আর অবশিষ্ট নেই, একসঙ্গে থাকারও আর কোনো কারণ নেই।

দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি প্রত্যাশার পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, দায়িত্ব করে গিয়ে নতুন করে স্বাধীনতা অনুভব করা এবং বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে স্বাধীন থাকা বয়স্ক দম্পতিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বাড়াচ্ছে।

নারীরা প্রায়ই এই প্রশ্ন রাখেন, 'যখন আমার পক্ষে একা স্বাধীনভাবে বাঁচা সম্ভব তখন কেন আমি একটি অসুখী দাম্পত্যে আটতে থাকব?'

আর এই প্রশ্ন তখনই মাথায় আসে যখন দম্পতিরা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যান।

সম্পর্কে অবিশ্বস্ততা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে টানাপোড়েন তৈরি হয়। তার সঙ্গে যদি আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে স্বচ্ছতা না থাকে, অবসরের পরের জীবন কেমন কাটবে সে বিষয়ে দুজনের মিল না হয় তাহলেও শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়ায়।

আবার দম্পতির যেকোনো একজনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ থাকলে তাও বিচ্ছেদে ভূমিকা রাখে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রীরা দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগে আক্রান্ত হলে সেই দম্পতিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বেশি। এটা লিঙ্গবৈষম্যকেও নির্দেশ করে।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, তরুণ দম্পতি যারা তুলনামূলক ছটফটে এবং অধৈর্য, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার কম। তাদের তুলনায় বেবি বুমার প্রজন্ম অর্থাৎ যারা ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্মেছেন তাদের বিচ্ছেদের হার বরং অনেক বেশি। বিশেষ করে ১৯৯০ এর দশকের পর এই প্রজন্মের বিচ্ছেদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

গ্রে ডিভোর্স একটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্কে ভীষণ পরিবর্তন ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিচ্ছেদের পর প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের সঙ্গে বাবার দূরত্ব বাড়তে থাকে। অন্যদিকে মায়ের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। অর্থাৎ বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবনে পারিবারিক গতিশীলতায়ও লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যায়।

সন্তানদের সঙ্গে দূরত্বও বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন বাবা। ফলে জীবনের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়, সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ কমে যাওয়ায় তারা বিষণ্নতায় ভুগতে থাকেন। সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব

বিয়ে বিচ্ছেদ দুই পক্ষের জন্যই সমান আঘাতের হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা সৃষ্টির ঘটনা বেশি ঘটে। এক্ষেত্রে নতুন সঙ্গী খুঁজে নেওয়া গেলে সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিচ্ছেদের পর যে মানসিক সংকট ও আবেগের দ্বৈরথের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা সহজে স্বাভাবিক হয় না। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা দীর্ঘদিন পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে বাস করে এসেছেন।

সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখা এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করা গেলে মানসিক সংকট থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ানো যায়। সঙ্গীর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা গেলে গ্রে ডিভোর্সের নেতিবাচক প্রভাবগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়।

সেইসঙ্গে কাজের মনোযোগ দেওয়া, নিজের যত্ন নেওয়া এবং পুরোনো শখগুলোকে নতুন করে জাগিয়ে তুলে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মানসিক চাপ সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi Migrant Workers Deaths Over The Years

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

9h ago