ঘুরে আসুন দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ের রাণী ‘উটি’

পাহাড়ে ঘেরা সবুজ উটি। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

সবুজে ঘেরা মেঘ পাহাড়ের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর উটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৩৪৭ ফুট উচ্চতায় উটি শহরের অবস্থান। নীলগিরি পর্বতমালার কোলে অবস্থিত উটির প্রতিটি ভাঁজে সৌন্দর্য ছবির মতো আঁকা।

ইউক্যালিপটাস, পাইন গাছ, কফি ও চা বাগানবেষ্টিত উটির ছোট ছোট পাহাড় আর মালভূমির দিগন্তবিস্তৃত সবুজ অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় চোখে আর মনে। নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নয়, শুধু আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে চলতে চলতেও উপভোগ করা যায় উটির নয়নাভিরাম প্রকৃতিকে।

উটি বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিশ মিলিয়ন বছরের পুরোনো গাছের কাণ্ডের জীবাশ্ম। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

উটির আসল নাম উধগমন্ডলম হলেও উটি নামেই এটি বেশি পরিচিতি। টোডা জনজাতি অধ্যুষিত উটিতে ব্রিটিশ সামাজ্যবাদের ছাপ এখনও স্পষ্ট। ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হওয়ার সুবাদে উটির জীবনযাপনে পাহাড়ি ও আধুনিকতার এক অন্যরকম মেলবন্ধন দেখা মেলে।

উটি ভ্রমণের সেরা সময় কোনটি

উটির আবহাওয়া সারাবছরই বসন্তকালের মতো। রাতে তাপমাত্রা কমতে থাকে। মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশায় ঢাকা কিংবা রৌদ্রজ্জ্বল উটির সৌন্দর্যের দেখা পাবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। জুন থেকে অক্টোবর উটিতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে যারা বৃষ্টি পছন্দ করেন তারা জুলাই ও আগস্ট মাস বেছে নিতে পারেন।

উটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

পর্যটকের জন্য উটিতে কতদিন যথেষ্ট

উটিতে প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ভ্রমণের জন্য একজন পর্যটকের কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ দিন প্রয়োজন।

কোথায় কোথায় ঘুরবেন

উটি লেক

নীলগিরি জেলার উটি লেক ১৮২৪ সালে জন সুলিভানের তৈরি। ৬৫ একর জুড়ে বিস্তৃত লেকে বোটিং করতে পারবেন পর্যটকরা। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিনোদন পার্ক ও মিনি ট্রেন।

উটি লেক। ছবি: সংগৃহীত

বোটানিক্যাল গার্ডেন

উটির সরকারি বোটানিক্যাল গার্ডেনের অন্যতম আর্কষণ হলো এখানে রয়েছে প্রায় ২০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো একটি গাছের কাণ্ডের জীবাশ্ম। আর মাঙ্কি পাজল ট্রির মতো বিরল প্রজাতির গাছ (বানররা উঠতে পারে না এই গাছে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

উটি রোজ গার্ডেন

১০ একরের বেশি জমিতে ২০ হাজারেরও বেশি জাতের গোলাপ রয়েছে এই বাগানে।

পান্না লেক

চা বাগান ও ঘূর্ণায়মান তৃণভূমিবেষ্টিত পান্না লেকের শান্ত পরিবেশ মনকে নির্মল করে দেবে। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় পান্না লেকের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায় অন্য সময়ের তুলনায়।

পান্না লেক (বামে) ও দোদাবেত্তা চূড়া (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

দোদাবেত্তা চূড়া

দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেত্তা চূড়া। বনবেষ্টিত শৃঙ্গ এটি, চূড়ার কাছাকাছি রয়েছে রডোড্রেনড্রন গাছ ও গুল্ম। টেলিস্কোপ রয়েছে উপত্যকা দেখার জন্য।

টয়ট্রেন

উটির টয়ট্রেন চড়তে ভুলবেন না। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে এটি চলাচল করে, সময় জেনে নিয়ে বুকিং দিতে হবে। শাহরুখ খানের 'ছাইয়া ছাইয়া' গানটির কথা মনে করিয়ে দেবে ট্রয়ট্রেন ভ্রমণ।

উটির টয়ট্রেন। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়াও কালহাট্টি ও পাইকারা জলপ্রপাত, মৃদুমালাই জাতীয় উদ্যান, চা জাদুঘর ও চা কারখানা, চকোলেট তৈরির কারখানা, সেন্ট স্টিফেন চার্চ, মরিয়ম্মান মন্দির ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

কীভাবে যাবেন

উটি যেতে হলে প্রথমে ভিসা করে ফেলুন ভারতের। সেখানে গিয়ে রেলপথে যেতে পারবেন। কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন নেই উটির। ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। চেন্নাইগামী ট্রেনে প্রায় ৩০ ঘণ্টার পথ। সেখান থেকে মেট্টুপালায়াম স্টেশন প্রায় ১০ ঘণ্টা লাগবে, এরপর ট্রেনে করে কুন্নুর হয়ে যেতে পারবেন উটি। এ ছাড়া উড়োজাহাজে চেন্নাই অথবা কোয়েম্বাতুর এয়ারপোর্ট গিয়ে সেখান থেকে উটি যাত্রা করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

উটির পাহাড়ে একটি আবাসিক হোটেল। ছবি: স্মৃতি মন্ডল

উটিতে থাকার জায়গার অভাব নেই। মোবাইল অ্যাপে পছন্দসই হোটেল বুক করে নিতে পারবেন।

যা মনে রাখা জরুরি

শীত কিংবা গরম, শীতের জামা-কাপড় নিতে ভুলবেন না। উটির চা, কফি ও হাতে বানানো চকোলেটের স্বাদ নেবেন অবশ্যই। উটির মশলাও বিখ্যাত। কেনাকাটার জন্য এগুলোই সেরা।

 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

6h ago