ঢাকায় শিশুদের ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন যেসব জায়গায়

ঢাকায় শিশুদের উন্মুক্ত খেলার স্থানের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ফলে শিশুরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বেশি সময় কাটাচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের মনোজগতে।
বাবুল্যান্ড। ছবি: বাবুল্যান্ডের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

শিশুদের মনোজগতের বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ঢাকায় শিশুদের উন্মুক্ত খেলার স্থানের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ফলে শিশুরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বেশি সময় কাটাচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের মনোজগতে।

তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও শিশুদের বিনোদনের জন্য ঢাকার ভেতরেও কিছু গেমিং জোন তৈরি হয়েছে। রয়েছে জাদুঘর, শিশুপার্ক ও উন্মুক্ত পার্কও।

 শিশুদের নিয়ে ঘুরে আসার মতো রাজধানীর কিছু স্থানের কথা জেনে নিই চলুন।

বাবুল্যান্ড

শিশুদের অভিনব ইনডোর গেমিংয়ের অভিজ্ঞতা দিতে দুজন উদ্যোক্তা ২০১৮ সালে এই ব্যবসাটি চালু করেন। বর্তমানে মিরপুর, উত্তরা, ওয়ারী ও বাড্ডায় বাবুল্যান্ডের শাখা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও একটি শাখা খোলার কথা আছে। এখানে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাবুল্যান্ডে প্রতিটি শিশু ৪০০ টাকার বিনিময়ে ২ ঘণ্টার জন্য খেলাধুলার সুযোগ পায়। সঙ্গে অভিভাবক থাকলে তার জন্য বাড়তি ১৫০ টাকা গুণতে হবে।

বাবুল্যান্ড। ছবি: বাবুল্যান্ডের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

মিরপুর শাখা বাদে ঢাকায় বাবুল্যান্ডের প্রতিটি শাখা সপ্তাহের সব দিনই খোলা থাকে। মিরপুর শাখাটি রোববার বন্ধ থাকে। সব শাখাই রবিবার-বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে আর শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ঠিকানা- মিরপুর শাখা: মিরপুর শপিং সেন্টার, মিরপুর রোড, ঢাকা

উত্তরা শাখা: নর্থ টাওয়ার, হাউজ বিল্ডিং, সোনারগাঁও জনপথ, উত্তরা, ঢাকা

ওয়ারী শাখা: ২৯, র‌্যানকিন স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, রোজ ভ্যালি শপিং মল, ওয়ারী, ঢাকা

বাড্ডা শাখা: বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজা, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম রোড, বাড্ডা

যোগাযোগ: +০৯৬৬৬৭২৩৪২৩

টগি ফান ওয়ার্ল্ড

ঢাকার পান্থপথের বসুন্ধরা সিটিতে অবস্থিত টগি ফান ওয়ার্ল্ড। বড়দের গেমিং জোনের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও বেশ কিছু রাইড ও গেমিং এক্সপেরিয়েন্সের ব্যবস্থা আছে এতে। বসুন্ধরা সিটির ৮-১৮ তলাব্যাপী টগি ফান ওয়ার্ল্ড শিশুদের চিত্তবিনোদনের অন্যতম সেরা জায়গা। টগি ফান ওয়ার্ল্ডের প্রবেশমূল্য ১৫০ টাকা। এরপর রাইড ও গেমস অনুযায়ী আলাদা আলাদা ফি পরিশোধ করতে হবে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজও আছে। চাইলে সেখান থেকেও পছন্দমতো প্যাকেজ বাছাই করতে পারবেন।

টগি ফান ওয়ার্ল্ড। ছবি: সংগৃহীত

টগি ফান ওয়ার্ল্ড সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে আর অন্যান্য দিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।

ঠিকানা- বসুন্ধরা সিটি, পূর্ব তেজতুরি বাজার, পান্থপথ, ঢাকা

যোগাযোগ: +৮৮০১৯৬৯৯০৫৬৬৬

শ্যামলী শিশু মেলা

ঢাকার শাহবাগের শিশু পার্কটি বর্তমানে বন্ধ। তবে শ্যামলী শিশু মেলা চালু আছে। এই পার্কটিতে চুক চুক ট্রেন, নাগরদোলা, হেলিকপ্টার, বাম্পার কার, মিনি ট্রেন, ভিডিও গেমস ইত্যদি খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে শিশুরা।

শ্যামলী শিশু মেলা। ছবি: সংগৃহীত

দুই বছরের বেশি বয়সের সবার জন্য শিশু মেলার প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। আর ভেতরের প্রতিটি রাইডের জন্য প্রতিবার ভ্রমণ মূল্য ৫০ টাকা। শিশু মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ঈদের ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ঠিকানা: শ্যামলী, ঢাকা

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

দেশের ইতিহাস জানানোর জন্য শিশুদের ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, মুদ্রা, অস্ত্রসহ অনেক বৈচিত্র্যময় এবং উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ক জ্ঞানের অনুসন্ধান কিংবা নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন বিষয়ে জানা—নতুন প্রজন্মের জন্যে নিজেদের আলোকিত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এই জাদুঘরে। আমাদের দেশের ইতিহাস কতটা সমৃদ্ধ এই জাদুঘরের প্রতিটি কোণে তার প্রমাণ মেলে।  জাতীয় জাদুঘর শনিবার-বুধবার সকাল  সাড়ে ১০টা- বিকেল সাড়ে ৪টা  পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা -রাত ৭টা পর্যন্ত খোলা তাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। জাদুঘরে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ ফি ৪০ টাকা ও ৩-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রবেশ ফি ২০ টাকা।

ঠিকানা: শাহবাগ, ঢাকা

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর ঢাকার বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের ঠিক পাশেই অবস্থিত। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্যের গল্প এবং তাদের ব্যবহৃত অসংখ্য অস্ত্রশস্ত্রের নমুনা- সবই এই জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর। ছবি: সংগৃহীত

জাদুঘরের নিচতলায় বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গ্যালারি, দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রমের নিদর্শন আছে। তৃতীয় তলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গ্যালারি, চতুর্থ তলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা গ্যালারি এবং জাদুঘরের বেসমেন্টে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গ্যালারি অবস্থিত। জাদুঘর কমপ্লেক্সের মধ্যে 'তোশাখানা জাদুঘর' নামে একটি পৃথক জাদুঘর রয়েছে, যেখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রাপ্ত উপহার এবং স্বীকৃতি প্রদর্শন করা হয়।

ঠিকানা: বিজয় সরণি, ঢাকা

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর

ঢাকার আগারগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে বিমান বাহিনী পরিচালিত এই জাদুঘরটিতে শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। আরও আছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন সময়ে ববহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার। নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করে আসেব বিমানে চড়েও দেখা যাবে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর। ছবি: সংগৃহীত

 জাদুঘরটিরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। ভেতরে শিশুদের খেলার বিভিন্ন রাইড আছে। নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে এসব রাইডও শিশুরা উপভোগ করতে পারবে। প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। আর সোমবার-বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।

ঠিকানা: আগারগাঁও, ঢাকা

জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক

জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক ঢাকার অদূরে ৩০০ ফিট এলাকায় জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের ১৩ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। এই পার্কটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মনোরোম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার কারণে পরিবার-পরিজনসহ সারাদিন কাটানোর জন্য এটি খুব সুন্দর একটি জায়গা। পার্কটিতে বিশাল উন্মুক্ত মাঠ আছে, যা শিশুদের খেলাধুলার জন্য আদর্শ।

জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক। ছবি: সংগৃহীত

পার্কটিতে শিশুদের জন্য গোলক ধাঁধা ও থ্রিডি ভিশন থিয়েটারের ব্যবস্থা আছে। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে নৌকাভ্রমণ করা যাবে। লেকের পাশ দিয়ে হাঁটার জন্য সুন্দর ওয়াকওয়ে করা হয়েছে।

প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য ২০ টাকা। পার্কটি সবার জন্য খোলা থাকে শনিবার-বৃহস্পতিবার, সকাল ৯টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত। আর শুক্রবার শুধু সামরিক বাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য খোলা থাকে।

ঠিকানা: ১৩ নম্বর সেক্টর, জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প

যোগাযোগ: +৮৮০১৭৬৯০১৭৬৩৯

 

Comments

The Daily Star  | English
Why university rankings should matter

Why university rankings should matter

While no ranking platform is entirely comprehensive or flawless, it is better to participate in reliable ones.

8h ago