ছুটির দিনে হয়ে যাক ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ ভ্রমণ

বরিশালের লঞ্চ
লঞ্চের ভিআইপি এরিয়া। দুপাশে ভিআইপি কেবিন। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

পানির ওপর ভেসে যদি চাঁদ দেখা যায় তাহলে কেমন হয়? নিশ্চয়ই মন্দ না। ভেসে ভেসে চাঁদ দেখতে চাইলে কাছে কোথাও নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে বসেও দেখা যায়। তবে যদি দূরে কোথাও ভ্রমণের সময় পুরো চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সূর্যোদয় দেখতে চান এবং সেইসঙ্গে পেতে চান সুস্বাদু খাবারের স্বাদ তাহলে অবশ্যই প্রিয় বাহন হবে লঞ্চ।

নৌকা, বাস বা ট্রেন ভ্রমণের মতো দীর্ঘ সময়ের যাত্রাতে আপনাকে লঞ্চ ক্লান্তিতে ফেলবে না। উল্টো বরং প্রশান্তির সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, তা চাঁদ থাকুক আর না থাকুক!

আজ জানাব ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল যাওয়ার খুঁটিনাঁটি।

বরিশালের লঞ্চ
লঞ্চের ভিআইপি ডাইনিং এরিয়া। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

লঞ্চে বরিশাল যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। বরিশালের লঞ্চ সব রাত ৯টায় ছাড়লেও আপনি যদি কয়েক ঘণ্টা আগে আসেন তাহলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

যাত্রার দিন লঞ্চের ভালো টিকেট কাটতে চাইলে ৪-৫টার মধ্যেই লঞ্চ টার্মিনালে থাকা ভালো। এতে টিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

লঞ্চে ৩০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার ভেতরে বরিশাল যাওয়া যায়। উন্নতমানের সবচেয়ে ভালো লঞ্চগুলোর মধ্য রয়েছে সুন্দরবন-১৫, ১৬, প্রিন্স আওলাদ-১০, পারাবত-১২, ১৮, এডভেঞ্চার-১, মানামী, সুরভী-৭, পটুয়াখালী-২, এমভি ফারহান। সব লঞ্চ ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ৯টায় এবং বরিশাল পৌঁছায় ভোর ৫টায়।

বরিশালের লঞ্চ
বরিশালের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো বাইরে থেকে দেখতে যেমন। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

লঞ্চে ডেকের ভাড়া সবচেয়ে কম, ৩০০ টাকার মতো। ডেক বসে বা শুয়ে যাতায়াত করা যায়। এটি লঞ্চের একদম নিচ তলায়। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া সাধারণত ১ হাজার টাকা, ১ জন যেতে পারবেন। ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা, ২ জন যেতে পারবেন। এগুলোতে ফ্যান ও এসি সার্ভিস রয়েছে। লকার রয়েছে এবং টেলিভিশন ও মোবাইল চার্জ দেওয়ার পোর্ট রয়েছে।

বরিশালের লঞ্চ
ভিআইপি কেবিনের ভেতরটা সাজানো থাকে এভাবে। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। ফ্যামিলি কেবিনে টিকিট দুইটা দিলেও ভ্রমণ করা যায় তিন জন। সেমি ভিআইপি কেবিনের ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। এখানে সিঙ্গেল বেড একটা ও ডাবল বেড রয়েছে একটি। সিঙ্গেল কেবিনে টিকেট তিন জনের দেয়। ভ্রমণ করা যায় চার জন। থাকে আলাদা ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা।

ভিআইপি কেবিনগুলোতেও আবার তিনভাগ রয়েছে। এসবের ভাড়া ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। একটি বড় মাস্টারবেডসহ চারটি বেড থাকে। ৬ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকার কেবিনে পাঁচ-ছয় জন ভ্রমণ করতে পারেন। আর ১০ হাজার টাকার কেবিনে অনায়াসে ১০ জন ভ্রমণ করতে পারবেন।

বরিশালের লঞ্চ
ব্যালকনিসহ ভিআইপি কেবিন। ছবি: স্টার/ টিটু দাস

আপনার প্রয়োজন ও সাধ্য অনুযায়ী কেবিন বুক দেওয়ার পর ৫টার মধ্যেই রুমের চাবি পাবেন। রুম সার্ভিস দেওয়ার পর লঞ্চ থেকেই সরবরাহ করা হবে টুথপেস্ট, টুথব্রাশ ও চিরুনি।

এরপর রাত ৯টায় বিকট শব্দে সাইরেন বাজিয়ে বরিশালের দিকে যাত্রা শুরু করবে লঞ্চ। তারপর ছাদে অথবা বেলকনিতে বসে উপভোগ করতে পারবেন চাঁদের দৃশ্য, নদীর কলকাকলি আর হাওয়া।

বরিশালের লঞ্চ
লঞ্চের করিডোর। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

খাবার

রাত ৯টার পরেই ডিনারে কী খাবেন তা জানার জন্য আসবেন কেবিন বয়। লঞ্চ ভ্রমণের অন্যরকম আনন্দ দেবে লঞ্চের সুস্বাদু খাবার। লঞ্চের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবারগুলোর একটি হলো ডাল চচ্চড়ি।

বরিশালের লঞ্চ
বিখ্যাত ডাল চচ্চড়িসহ লঞ্চের খাবার। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

ভাত ২০ টাকা প্লেট, ডাল চচ্চড়ি ৩০ টাকা বাটি, আলু দিয়ে স্পেশাল মুরগি ৬৫০ টাকা, রুপচাঁদা মাছ ২৫০ টাকা, ইলিশ মাছ ২৫০ টাকা, পোয়া, বেলে, কোরাল, আইড়, চিংড়ি, পবদা ২০০ টাকা, চিংড়ি ভর্তা ২৫, আলু ভর্তা ১৫ টাকা, সবজি ৩০ টাকা ও খিচুড়ি ৮০ টাকায় পাবেন। সব খাবারের মানই ভালো হয় বেশিরভাগ লঞ্চে।

লঞ্চে চিকেন ফ্রাইও পাবেন হাফ ৩০০ টাকা ও ফুল ৬০০ টাকা। এ ছাড়াও নানা রকম স্ন্যাকস আইটেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় পাবেন। দাম অন্যান্য জায়গার মতোই।

বরিশালের লঞ্চ
লঞ্চের সিঁড়িতে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ছবি: টিটু দাস/ স্টার

খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবারও যেতে পারেন ছাদে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পরদিন যদি সূর্যোদয় দেখতে চান তাহলে খুব ভোরে ছাদে গিয়ে বা ব্যালকনিতে চলে যেতে হবে। ভোর ৫টায় লঞ্চ পৌঁছাবে বরিশাল। তবে চাইলে ৮টা পর্যন্ত লঞ্চে ঘুমিয়ে নিতে বা অবস্থান করতে পারবেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে নেমে যাবেন।

তাহলে আর দেরি কেন, কোনো এক ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়ুন লঞ্চে করে বরিশালের উদ্দেশে!

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago