যা দেখবেন মেহেরপুরে

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মেহেরপুর বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক জেলা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান দেখতে হলে আপনাকে মেহেরপুরে আসতে হবে।

একদিন সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন মেহেরপুরের সব দর্শনীয় স্থান।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন, শপথ গ্রহণসহ নানান ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি হিসেবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। স্মৃতিসৌধটিতে ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট চওড়া সিরামিকের ইট দিয়ে একটি লাল মঞ্চ করা হয়েছে। বেদিতে ১১টি সিঁড়ি রয়েছে।

লাল মঞ্চ থেকে ২৩টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। তার ফাঁকে অসংখ্য নুড়ি পাথর রয়েছে। সব মিলিয়ে স্মৃতিসৌধটি দারুণ এক দর্শনীয় স্থান। সারি সারি বিশাল আমবাগানের একদম সামনে স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

মেহেরপুর সদর থেকে এটি ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাত্র ৩০ মিনিটে ৩০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে সরাসরি আসা যায় এখানে।

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ আমবাগান ঘেঁষেই বিশাল এক জায়গা জুড়ে বানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। বৃত্তাকার এই কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল এক মানচিত্র। এতে মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে আরও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ, বৈঠক।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মেহেরপুর ভ্রমণ
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের একদম পেছনেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এর সামনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের সেই তর্জনীর ভাস্কর্য। জাদুঘরটিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সকল জাতীয় বীরদের ভাস্কর্য ও বীরত্বের ইতিহাস। এ ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপি।

স্বাধীনতা সড়ক

মেহেরপুর
স্বাধীনতা সড়ক। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

চাইলে স্মৃতি কমপ্লেক্স ঘোরা শেষ করে দেখতে পারেন এর পেছনে অবস্থিত স্বাধীনতা সড়ক। স্বাধীনতা সড়কটি মেহেরপুর থেকে ভারতের নদীয়া দিয়ে কলকাতায় প্রবেশ করবে। বর্তমানে এ সড়কের বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হয়েছে।

শোকার্ত জননীর গির্জা

শোকার্ত জননীর গির্জা
শোকার্ত জননীর গির্জা। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামেই রয়েছে শোকার্ত জননীর গির্জা। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স ঘুরে যেতে পারেন এখানে। স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরে থেকে অটোরিকশা নিয়ে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়। প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো এ গির্জা।

আমঝুপি নীলকুঠি

আমঝুপি নীলকুঠি
আমঝুপি নীলকুঠি। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

ইংরেজদের অত্যাচারের এক নিদর্শন আমঝুপি নীলকুঠি। এটি মেহেরপুর সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনপ্রতি ২০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় মেহেরপুর সদর থেকে এখানে আসা যায়।

নীলকুঠিটি কাজলা নদীর পাশে অবস্থিত। এখানে গেলে এখনো দেখা মিলবে নীল গাছের। এ ছাড়াও সারি সারি তাল গাছসহ চমৎকার বাগান আছে। নীলকুঠি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে ইংরেজ ও জমিদারদের অত্যাচারের চিত্র।

ভাটপাড়া নীলকুঠি

মেহেরপুর সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে গাংনী উপজেলায় এ নীলকুঠি অবস্থিত। জনপ্রতি ৪০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়। এ নীলকুঠিও ইংরেজদের অত্যাচারের সাক্ষী। বর্তমানে এ নীলকুঠিকে ঘিরে ডিসি ইকো পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। কৃত্রিম লেক, ঝরনা, বিভিন্ন ভাস্কর্যসহ ফুলের বাগান করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে মেহেরপুর যেভাবে যাবেন

ঢাকার কল্যাণপুর ও সায়েদাবাদ থেকে মেহেরপুর সদরে বাস নিয়মিত যাতায়াত করে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বাস এসবি, জে আর, শ্যামলী, আর কে ইত্যাদি। এসি-নন এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৬৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

মেহেরপুরে থাকার জন্য উন্নত মানের আবাসিক হোটেল না থাকলেও ভালো মানের কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া সার্কিট হাউজসহ জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ও সূর্যোদয় ডাক বাংলো রয়েছে। যেগুলোয় ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় রাতযাপন করা যায়।

যা খাবেন

মেহেরপুরের জনপ্রিয় একটি খাবার হলো সাবিত্রী মিষ্টি, যা সদরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে পাবেন। এ ছাড়া এখানকার রসকদম্ব বিখ্যাত।

 

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman warns against return of fascist forces

Tarique Rahman urges first-time voters to back BNP

'Let the first vote of the youth be for the sheaf of paddy,' he says

8m ago