ওহাইওর সিনসিনাটি শহরে একদিন

পুরোনো স্থাপত্য আর আধুনিকতার মিশেলে সিনসিনাটি শহরটা যেন একটা জীবন্ত চিত্রকর্ম।
ওহাইওর সিনসিনাটি
ছবি: নাদিয়া রহমান

হাতে ছিল আর মাত্র চার কি পাঁচ দিন। এরপরই বাক্স-পেটরা গুছিয়ে দুই বছরের পরিচিত ঠিকানা ছেড়ে চলে আসব দেশে। শেষ মুহূর্তে এতসব কাজ ছিল যে ইচ্ছা থাকলেও ঘুরতে পারিনি যুক্তরাষ্ট্রে পছন্দের কিছু জায়গা, কিছু স্টেট। তাই হাতের কাছের শহর ওহাইওর সিনসিনাটিই ঠিক হলো শেষ নাগাদ।

তাও কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে আমার শেষ শনিবারে হুট করেই ঠিক হলো এই ঝটিকা সফরের। একটা হঠাৎ ভাবনা, কিছুটা অবসর আর একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুর—এই তিনটি জিনিস আমাদের তিনজনকে নিয়ে গেল লেক্সিংটন থেকে সিনসিনাটি শহরে। ব্যস্ত রাস্তায় কোনো যানজটের ঝক্কি না থাকায়, আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যেই লং ড্রাইভে পৌঁছে গেলাম ওহাইওর এই প্রধান শহরে।

যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: নাদিয়া রহমান

শহরের প্রশস্ত রাস্তায় পা রাখতেই প্রথম যে জিনিসটি আমাদের চোখে পড়েছিল, তা হলো মানুষের ভিড়। একটু পরেই বুঝতে পারি, শনিবার হওয়ায় সেদিন ছিল আসলে 'গেম ডে'। রাস্তার চারপাশে লোকজনের কোলাহল, নানা রকম খাবারের ঘ্রাণ, আর গায়ে শহরের নিজস্ব টিমের জার্সি—সব মিলিয়ে এক ধরনের ভিন্ন আমেজের তৈরি করেছিল।

পুরোনো স্থাপত্য আর আধুনিকতার মিশেলে সিনসিনাটি শহরটা যেন একটা জীবন্ত চিত্রকর্ম। প্রথমে অভ্যাসবশত আমরা শহরের বিভিন্ন স্থানে খানিকটা হেঁটে বেড়াই। চোখে পড়ার মতো এই শহরে আছে রঙিন বেশ কিছু ম্যুরাল, শহরতলিতে কফিশপ, শহর ঘুরে দেখবার জন্য ট্রাম, আর ওহাইও নদীর পাশ দিয়ে হাঁটবার জন্য ট্রেইল। ট্রেইলটি আসলে স্য'ইয়ার পয়েন্ট পার্ক হিসেবেই পরিচিত। এই স্য'ইয়ার পয়েন্ট পার্ক শহরের যেকোনো বড় উৎসব, দৌড় প্রতিযোগিতা কিংবা কনসার্টসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জুলাইয়ের ফায়ারওয়ার্কস আর সামারের কনসার্ট সিরিজ।

আমরা যখন এখানে পৌঁছেছিলাম তখন ভর দুপুর। গ্রীষ্মের আর্দ্রতাবিহীন রোদ একেবারে আমাদের পুড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু ফেরার পথে যখন আসন্ন সন্ধ্যা, তখন নদীর পাশে এর পরিবেশ ছিল একেবারেই ভিন্ন। সন্ধ্যা নাগাদ শহরের আলোগুলো জ্বেলে দেওয়া হচ্ছিল, আকাশছোঁয়া অট্টালিকাগুলো আলোকিত হয়ে উঠছে আর নদীর ওপর ভেসে চলছে ক্রুজ বা প্রমোদতরী। আমাদের হাতে সময় ছিল না, নয়তো মনোরম রোব্লিং সাসপেনশন নামের যে ব্রিজ, তার নিচে বয়ে চলা নদীর আমেজ নিতে পারতাম কোনো নৌকায় চড়ে। বড় বড় ভবনগুলোকে ঘিরে ছোট ছোট পার্ক, আর সেই পার্কে বসে গল্পে মশগুল মানুষ। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, ছুটির এই দিনে কতটা নির্ভার সবাই। দেশ ও দশের নানান জটিলতায় জীবন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না!

স্য'ইয়ার পয়েন্ট পার্কের আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো 'লেবিরেন্থ' এবং 'ইনক্লুসিভ প্লেগ্রাউন্ড'। লেবিরেন্থটি একটি শিথিল এবং ধ্যানের পথ, যেখানে হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ ছাড়াও প্লেগ্রাউন্ডটি প্লেগ্রাউন্ডটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের জন্য স্লাইড, দোলনা এবং আরও অনেক খেলনার ব্যবস্থা রয়েছে। সিনসিনাটিতে এসে কেউ যদি শহরের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন অনুভব করতে চান, তবে স্য'ইয়ার পয়েন্ট পার্ক তাদের জন্যই।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে না হতেই আমরা আবার ফিরতি পথ ধরলাম। গাড়ির জানালা দিয়ে সন্ধ্যার আলো-ছায়ার খেলায় মুগ্ধ হয়ে শহরটাকে বিদায় জানালাম। হাতে এক কাপ কফি, আর সঙ্গের ব্যাগে কিছু ফল নিয়ে যখন আমরা লেক্সিংটনের দিকে ফিরে আসছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো আবার এই শহরে আসলেও আমার দুজন সঙ্গীর সঙ্গে এভাবে আসা নাও হতে পারে! এই অল্প সময়ের ভ্রমণটি আমাদের জীবনের একটি ছোট্ট কিন্তু সুন্দর অধ্যায় হয়ে থাকবে।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

6h ago