মিরপুরের এই জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছেন কি

মিরপুর
বোটানিক্যাল গার্ডেন। ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

মেগা সিটি ঢাকাকে সাধারণভাবে কয়েকটি এলাকায় ভাগ করা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু পাড়া-মহল্লাকে একই নামের আওতায় রাখা হয়। মিরপুরের কথাই ধরা যাক। মিরপুর ১ থেকে শুরু করে ১২ পর্যন্ত, পুরোটা এলাকাই এক নামে 'মিরপুর'। জাদুর শহরের সব এলাকার মতো মিরপুরেরও নিজস্ব কিছু জাদু আছে, যা খুঁজে পাওয়া যায় এর অলিগলি-রাজপথে।

আজকের লেখায় মিরপুরবাসী এবং ঢাকার অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রইল ঘুরে বেড়ানোর কয়েকটি জায়গার খোঁজ।

স্টেডিয়াম

বাঙালির ক্রিকেট প্রেম তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই ক্রিকেট জ্বরে ভোগা বাঙালির জন্য ঢাকা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি নিঃসন্দেহে শের-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখানে যখনই কোনো ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, এর আশপাশ দেখলেই বোঝা যায় ক্রিকেট নিয়ে সবার আগ্রহ। এলাকাবাসীরা যেন আগে থেকেই মেতে ওঠেন জয়ের উল্লাসে।

তবে ক্রিকেট ছাড়াও ঘরের নতুন, পুরোনো আসবাবের খোঁজে অনেকে সময় পেলেই চলে আসেন এই স্টেডিয়াম এলাকায়। এখানে বিভিন্ন ফার্নিচারের দোকান রয়েছে এবং সংগ্রহও ভালো। ভালোমতো দামাদামি করে পছন্দমতো টেবিল, চেয়ার, সোফা বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে স্টেডিয়ামঘেঁষা ফার্নিচারের দোকানগুলোতে।

জাতীয় চিড়িয়াখানা

মিরপুরের এক প্রান্তে থাকা এই স্থানটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা, যাতে আছে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রজাতির প্রাণীর বাস। ছোট থেকে বড়, সবার জন্যই আজও তুমুল আগ্রহের জায়গা এই চিড়িয়াখানা। ঢাকার বাইরের কেউ ঘুরতে এলেও চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়াটা ঢাকাবাসীর ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে। বিশাল প্রাঙ্গণের সঙ্গে থাকা দুটি লেক যেন এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। মন-মেজাজ যেমনই হোক না কেন, খোলা আকাশের নিচে প্রাণী আর গাছগাছালির এমন বৈচিত্র্য দেখলে মনের মধ্যে প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে যাবে।

প্রকৃতির ছবি

শুধু চিড়িয়াখানা নয়, মিরপুরের আশপাশে আরও বেশ কিছু জায়গা আছে– যেখানে গেলে একঘেয়ে মেট্রোপলিস জীবনের সুরটা প্রকৃতির ছন্দে গেয়ে উঠবে নতুন গান। মিরপুরের ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদীর কাছেই আছে প্রকৃতির মেলামেশা, যা কি না নাগরিক জীবনের জন্য একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ করে দেয়। এর মধ্যে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে মিরপুর বেড়িবাঁধ। রাস্তা পার হয়ে একটু এগিয়ে গেলেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাধুর্য শুধু মনকেই শান্ত করবে না, উদ্ভিদপ্রেমীদের লেখাপড়ার জন্যও এটি অন্যতম একটি উৎস।

লাভ রোডে সতেজতায় ভরপুর আড্ডা

যেকোনো এলাকার জন্যই এর আশপাশের জায়গাগুলো কতটা আড্ডাবান্ধব, সেটি জরুরি। মিরপুরে আড্ডা দেওয়ার জায়গার অভাব নেই। এখানকার খাওয়াদাওয়া ও ভালো সময় কাটানোর অন্যতম স্থান হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে ভালোবাসার লাভ রোড। স্ট্রিট ফুড, গান এবং তারুণ্য— সব মিলে প্রতি বিকেল, সন্ধ্যাতেই ভরপুর হয়ে উঠে লাভ রোডের আঙিনা। মিরপুর ১ এর এই রাস্তাটি জুড়ে থাকা বাহারি দোকানপাটে ইচ্ছেমতো 'উইন্ডো শপ' কিংবা এক কাপ কফি নিয়ে সন্ধ্যে নামতে দেখার আনন্দটা দিনের ক্লান্তি মুছে দিতে পারে খুব সহজেই। সেইসঙ্গে সপ্তাহান্তে দেখে ফেলা যায় একটা-দুটো সিনেমাও।

বইয়ের বাজার

মিরপুরের সেকেন্ড-হ্যান্ড বুক মার্কেট ঢাকার বইপ্রেমীদের জন্য দারুণ একটি ভাণ্ডার। স্টেডিয়াম গেট থেকে শুরু করে এর বিস্তৃতি মিরপুর ১০ এর আশেপাশে। কখনো কখনো এর পরেও খুঁজে পাওয়া যায় একটা দুটো বইয়ের দোকান। অপেক্ষাকৃত কম দামে দারুণ সব বইয়ের সংগ্রহ এখানে। হাতে কিছুটা সময় নিয়ে কেউ যদি ভালোমতো চষে বেড়ান, তবে দেখা মিলে যাবে বহু পুরোনো, প্রিন্ট আউট বইয়ের খোঁজও। এছাড়া একাডেমিক বইয়ের জন্যও শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন।

এই জায়গাগুলো ছাড়াও মিরপুরে ঘুরে বেড়ানোর স্থানের অভাব নেই। আছে বেনারসি পল্লী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম, টাকা জাদুঘর ইত্যাদি মজার মজার জায়গাও। তাই মিরপুরবাসী হোক বা অন্য এলাকা থেকে ঘুরতে আসা দর্শক, বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আর উপভোগ্যতার বেলায় মিরপুর কাউকেই হতাশ করবে না। তাই কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই ঢুঁ মেরে আসুন প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Over 45 lakh cases pending in courts

Each HC judge is burdened with 6,552 cases, while Appellate Division judges are handling 4,446 cases each, and lower court judges 1,977 cases each.

1d ago