শখের বাজার
মানুষের শখের সংগ্রহের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। ডাকটিকিট, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, টাকার নোট, দেশলাইয়ের বাক্স, ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্মরণীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহের বিষয়টা অনেকের জন্যই বর্তমানের সঙ্গে অতীতের অবিরত চলমান এক কথোপকথন।
আর দেশে এই সংগ্রাহকদের একটি নিজস্ব সম্প্রদায় গড়ে তুলতে ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিএসবি) উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে শখের বাজার। এই মেলাটিতে বিভিন্ন বিশেষায়িত বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সম্মিলন ঘটবে, যারা এ ধরনের সামগ্রী নিজেদের কাছে রেখে থাকেন।
পিএসবির সভাপতি আখলাকুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা সংগ্রাহকদের জন্য তাদের সংগ্রহের জিনিসগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এরপর বুঝতে পারলাম যে এ বিষয়ক লজিস্টিক্যাল ঝামেলা একটু বেশিই জটিল হবে। আর সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নিলো শখের বাজার।'
তিনি আরও বলেন, '২০১৯ সাল থেকেই আমরা শখের বাজারকে একটি দ্বিবার্ষিক মেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এই প্ল্যাটফর্মটি এমন বিস্তৃত যে বহু সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের পণ্যগুলো অদল-বদল করে নিতে, ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করতে এখানে এসে থাকেন।'
এই মেলার আরেকটি সাধারণ উদ্দেশ্যও আছে। মনে করুন, বংশ পরম্পরায় আপনার কাছে বহুমূল্য কোনো অ্যান্টিক বস্তু আছে, কিন্তু আপনি জানেন না, এ নিয়ে ঠিক কী করা যায়। কিংবা আপনি হয়তো দারুণ কিছু আর্টিফ্যাক্ট কিনে ফেলেছেন কিন্তু এখন বিক্রি করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন। এমতাবস্থায় গন্তব্য একটাই— শখের বাজার!
আখলাকুর রহমান আরও বলেন, 'সংগ্রহের কাজটা আসলে সবার জন্য নয়। কেউ হয়তো বংশানুক্রমে বা এমনিতেই কিছু বস্তুর মালিকানা পেয়েছে, কিন্তু তারা তা রাখতে চায় না। শখের বাজার এই ব্যক্তিদের জন্য সমাধান নিয়ে এসেছে, এখানে এসে তারা খুব সহজেই এই বস্তুগুলো বিক্রি বা অন্য পণ্যের সঙ্গে বিনিময় করে নিতে পারেন।'
এতে করে অনেকেই বাড়তি জিনিসপাতি সরিয়ে ঘরের গোছগাছের কাজটাও করতে পারেন, আবার কারো সংগ্রহটা আরো ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে নতুন কোনো পুরোনো সামগ্রীর আগমনে। নিজে থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার খোঁজ করার ঝক্কি না নিয়েই শখের বাজার হতে পারে তাদের জন্য ওয়ান-স্টপ সল্যুশন।
সংগ্রাহকদের জন্য এই মেলাটি সবমিলিয়ে খুবই লাভজনক। ক্রমশ ছড়িয়ে যেতে থাকা ভার্চুয়াল জগতটায় নিজেদের শখের বস্তুটি খুঁজে পাওয়া সবসময় সহজ হয় না। কিন্তু শখের বাজারে এলে, দু পা হাঁটতেই হয়তো মিলে যাবে অতি আরাধ্য কিছু!
এ বিষয়ে আখলাকুর রহমান মনে করেন, 'আমরা যেহেতু বিশেষ ধরনের ব্যবসায়ী ও সংগ্রাহকদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসি, প্রদর্শকরাও সবকিছুই একসঙ্গে পেয়ে যাবেন। এ ছাড়াও এই জায়গাটা এমন কিছু হতে পারে, যেখানে সমমনা লোকজন নিজেদের আগ্রহের জায়গা নিয়ে কথা বলার, বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য অনেককেই পেয়ে যাবেন। হতে পারে, এখান থেকেই হয়ে যাবে নতুন কোনো বন্ধুত্বের সূচনা।'
আর তাই, শুধু কেনাবেচার জন্য নয়, শখের বাজার হতে পারে শখের সংগ্রাহকদের দেখা-সাক্ষাৎ ও সামাজিক মেলামেশার দারুণ উপভোগ্য একটি ক্ষেত্র। এখানে তারা নিজেদের পছন্দের সঙ্গে মিল আছে, এমন মানুষদের দেখা পাবেন।
এই মেলাটি বিভিন্ন শখের সামগ্রী কেনাবেচার জন্য লাভজনক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই এখান থেকে সাধারণত খালি হাতে ফিরে যান না।
আখলাকুর রহমান বলেন, 'ব্যবসার জন্যও এখানে সুযোগের কমতি নেই। সম্ভবত এ ধরনের বস্তু যারা সংগ্রহে রাখেন এবং বিক্রি করতে চান, তাদের জন্য নির্দিষ্ট রকমের ক্রেতা খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন। এই মেলাতে এমন আগ্রহীদের দেখা মেলে, সম্ভাব্য ক্রেতারও। আর সেইসঙ্গে দুই পক্ষের মধ্যে কথাও জমে যায়।'
শখের বাজারে আসা মানুষগুলো বয়সের তোয়াক্কা করেন না কেউই। ছেলেবুড়ো সবাইকেই উচ্ছ্বসিত আনন্দে ঘুরতে ফিরতে দেখা যায় এখানে। ছোটদের জন্য এই মেলাটি যেন সহজ যোগাযোগে ভরা এক ইতিহাসের ক্লাস, যার বহু পুরনো স্মৃতি গাঁথা আছে তাদের পূর্বজদের শেকড়ে।
আর প্রবীণদের জন্য এই মেলা একটি টাইম ট্রাভেল মেশিনের মতোই, যা তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সোনালি অতীতে। হাতের তালুতে শুধু মলিন ভাঁজ নয়, ধরা থাকে পার হয়ে আসা প্রিয় সময়। মিরপুর ১১-তে অবস্থিত ঋদ্ধি প্রকাশনের গ্যালারিতে ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলেছে এই মেলা।
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments