চীনের ফরবিডেন সিটি: যেখানে যেতে আর নেই বারণ 

ফরবিডেন সিটি
ফরবিডেন সিটি। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের বৃহত্তম রাজপ্রাসাদ হিসেবে ফ্রান্সের ল্যুভ প্রাসাদের নাম বলবে অনেকে। কিন্তু এককালে চীনের প্রাসাদ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ফরবিডেন সিটি ল্যুভ প্রাসাদের চেয়েও তিনগুণ বড়, যা তৈরি করতে ১০ লাখ শ্রমিকের ১৪ বছর সময় লেগেছে। এখানে সংরক্ষিত আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন কাঠের কাঠামো। আগে যেখানে ঢোকা ছিল সবার জন্য বারণ, এখন সেখানে যান বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ পর্যটক।

ফরবিডেন সিটির যত অজানা তথ্য

ফরবিডেন সিটি ৪৯২ বছর ধরে চীন সাম্রাজ্যের প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ছিল মিং ও কিং রাজবংশের ২৪ সম্রাটের বাস। এখানকার পশ্চিম দিকের একটি হল আরবদের আদলে তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ইউডে হল। ইয়াংসি প্রাসাদে আছে লিংঝাও জুয়ান নামের ইউরোপীয় ভবন। এটি কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের সম্মুখীন হয়েছিল।

ফরবিডেন সিটি
ফরবিডেন সিটি। ছবি: রয়টার্স

ফরবিডেন সিটির আউটার কোর্টে মিলবে না কোনো গাছের দেখা। কারণ সম্রাটরা ভেবেছেন গাছের ছায়া পড়লে জায়গাটির মহিমা ঢাকা পড়ে যদি! সিদ্ধান্ত নিলেন তারা, প্রাসাদের ছাদেও যেন বসতে না পারে কোনো পক্ষী ছানা। যাবে যাবে, সব যাবে। যদি পাখিরা নোংরা করে স্বর্গতুল্য জায়গাটা!

প্রাসাদের নাম ফরবিডেন সিটি কেন

প্রাচীনকালে সম্রাটকে স্বর্গের পুত্র বলা হতো এবং সেজন্য স্বর্গের সর্বোচ্চ ক্ষমতাও তাকে দেওয়া হয়েছিল। সম্রাটদের বাসস্থানও স্বর্গীয় পার্পল প্যালেস মনে করা হতো। ঐশ্বরিক স্থান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য সেখানে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল বিধায় এটির নাম ফরবিডেন সিটি। চীনারা এটিকে ফরমার প্যালেস হিসেবে ডাকেন। 

ফরবিডেন সিটির ইতিহাস

সম্রাট ঝু দি ও ইয়ংলে দুই শাসনামলের সময়ে এই প্রাসাদ নির্মিত হয়। সম্রাট ইয়ংলে ছিলেন মিং রাজবংশের তৃতীয় সম্রাট। সাম্রাজ্যের শক্তিকে সুসংহত করার জন্য এবং নিজের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ইয়ংলে চীনের রাজধানী নানজিং থেকে বেইজিংয়ে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর তিনি কুয়াই জিয়াংকে বেইজিংয়ে ফরবিডেন সিটি নির্মাণের জন্য আদেশ দেন। তারপর এই সিটি তিনবার অগ্নিকাণ্ডের সম্মুখীন হয়। ফলে বর্তমান প্রাসাদের অধিকাংশ কিং রাজবংশের সময় পুনরায় নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের সময় ফরবিডেন সিটি অ্যাংলো-ফরাসি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যুদ্ধের শেষ অবধি তাদের দখলে ছিল। শেষ সম্রাট পুই বহিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত এখানে বাস করতেন। তারপর প্যালেস মিউজিয়াম বানানো হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ফরবিডেন সিটিতে কী কী আছে

১৮০ একরের ফরবিডেন সিটিতে আছে তিনটি অংশ: প্রতিরক্ষা (পরিখা এবং প্রাচীর), আউটার কোর্ট এবং ইনার কোর্ট।

নিরাপত্তার জন্য ফরবিডেন সিটিতে আছে ১০ মিটার উঁচু প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর, যার পরিধি ৩ হাজার ৪৩০ মিটার। প্রতিটি কোণে আছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রাসাদের প্রধান ফটকের নাম দ্য মেরিডিয়ান গেইট। গেইটটি তিন দিক থেকে খোলা যায়। মধ্য অংশটি ছিল শুধু সম্রাটদের যাতায়াতের পথ। এখানেই সম্রাট সাম্রাজ্য ও  যুদ্ধের আদেশ দিয়েছিলেন।

আউটার কোর্টে তিনটি প্রধান ভবন আছে, যেখান থেকে সম্রাটরা অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। মিং রাজবংশের যুগে, সম্রাটরা রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলো  পরিচালনা করার জন্য হল অব সুপ্রিম হারমনিতে বসতেন। এটি এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম কাঠামো। সম্রাটদের ড্রাগন থ্রোন এ হলটিতে রাখা হয়েছে। কিং রাজবংশের সময়ে এটি নানা আয়োজনে ব্যবহৃত হতো। হল অব সুপ্রিম হারমনির পেছনের দ্বিতীয় হলটি হলো হল অব সেন্ট্রাল হারমনি। বড় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে এখানে সম্রাটরা বক্তব্য ও উপস্থাপনার জন্য তৈরি হতেন এবং বিশ্রাম করতেন। ভোজসভার জন্য ছিল হল অব প্রিজারভিং হারমনি।

ইনার কোর্টে কিং রাজবংশের সম্রাটরা থাকতেন। 

ইনার কোর্টে তিনটি প্রধান ভবন রয়েছে। প্রথমটি প্যালেস অব হ্যাভেনলি পিউরিটি, যা সম্রাট ইয়ংজেংর আগে সম্রাটদের বাসভবন ছিল। পরে এটি সম্রাটের দর্শক হলে পরিণত হয়। এটির পেছনে রয়েছে প্যালেস অব ইউনিয়ন অ্যান্ড পিস, যেখানে রাজকীয় সীলমোহর সংরক্ষণ করা হয়েছে। টেরেস্ট্রিয়াল ট্রাঙ্কুইলিটি হল মিং রাজবংশের সময়ে সম্রাজ্ঞীর বাসস্থান ছিল। কিং রাজবংশের সময়ে যা শামানবাদী উপাসনালয় হয়ে ওঠে। সম্রাটের বিয়ের আয়োজনেও এটি ব্যবহার করা হতো।

 

Comments

The Daily Star  | English

4 hurt in RU clashes

The confrontations took place in four separate incidents, spanning from last night and today

5h ago