বসন্তে বেড়ানোর দারুণ ৫ গন্তব্য

আরেকটি জানুয়ারি চলে গেলো, অবশেষে বিদায়ও নিচ্ছে শীত। আর এর অর্থ হলো, বসন্ত এসে গেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে প্রস্ফুটিত ফুল আর পাখির নাচন। যেহেতু কুয়াশাচ্ছন্ন সকালগুলো বিদায় নিয়েছে আবার গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপ এখনও শুরু হয়নি, তাই এখনই সময় শীতের পোশাকগুলো ফেলে রেখে প্রকৃতির মৃদু উষ্ণতাকে উপভোগ করার।
আমরা নিজেদের বলি, বসন্তের নীরব ভক্ত। সে কারণেই আপনার জন্য দেশের পাঁচটি স্থান খুঁজে বের করেছি যেখানে গেলে আপনি সত্যিকার অর্থে রঙিন বসন্ত উপভোগ করতে পারবেন। পাতা ঝরা বসন্তেরও যে আরেকটি দিক আছে, সেটিও তো দেখা প্রয়োজন। তাই না?
গদখালী ফুলের বাগান, যশোর
বসন্তকে বলা হয় ফুলের ঋতু। তাই প্রথমেই বলব যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের বাগানের কথা। সেখানে গেলে ভ্রমর কিংবা মৌমাছির মতো আপনারও ইচ্ছা হবে ফুলের জগতে ডুব দিতে।
এটা যশোরের সেই স্থান যেখানে বসন্ত তার সবচেয়ে রঙিন রূপে ধরা দেয়। গদখালীর বাগানগুলো ভরে থাকে লাখো গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধা ফুলে। যতদূর চোখ যায় শুধু নানা রঙের ফুল, পুরো দৃশ্যটাকে স্বপ্নের মতো মনে হয়। এখানে বাগানগুলোয় ১২ ধরনের ফুল চাষ করা হয়। মাতাল করা সুগন্ধ আর ফুলের দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী আর চিত্রগ্রাহকদের জন্য যেন স্বর্গরাজ্য। শিশিরভেজা ফুলের ওপর দিনের প্রথম সোনালি রশ্মির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে চাইলে যেতে হবে ভোরবেলা। তখন এমন দৃশ্যের সৃষ্টি হয় যার সাক্ষী হলে তার স্মৃতি সারাজীবন থাকবে আপনার সঙ্গে।
শিমুল বাগান, সুনামগঞ্জ
ধরুন, শীতে আপনার শরীরের কল-কব্জা একেবারে জং ধরে গেছে। সেখান থেকে জেগে উঠতে চান আপনি। তাহলে আপনার জন্য পরামর্শ হলো, একটি বাসে চড়ে সুনামগঞ্জের পথে রওনা দিন। সেখানে নেমে স্থানীয় কোনো গাড়ি ভাড়া করে তাহিরপুর চলে যান। এরপর খুঁজে বের করুন শিমুল বাগান। বিশ্বাস করুন, শিমুল বাগানের দিকে তাকিয়ে আপনি এই পরামর্শের জন্য আমাদের ধন্যবাদ দিতে বাধ্য হবেন।
বসন্তের শিমুল বাগানের দৃশ্য কোনো চিত্রশিল্পীর মাস্টারপিস ছবির চেয়ে কম নয়। মাথার ওপর ঝকঝরে নীল আকাশ আর তার নিচে দাঁড়িয়ে হাজারো লম্বা লম্বা শিমুল গাছ, যাদের ডালে ফুটে থাকা লাখ লাখ উজ্জ্বল লাল ফুল দূর থেকে দেখলে আগুনের মতো মনে হয়। পাশেই জাদুকাটা নদীর শান্ত জল, মনকে যেন ঠান্ডা করে দেয়। দৈনন্দিন জীবনের শত বিশৃঙ্খলার ভিড় পাশ কাটিয়ে যখন আপনি এমন একটি জায়গায় বেড়াতে যাবেন, আপনার চোখ-মন দুইই শান্ত হয়ে যাবে। প্রস্ফুটিত শিমুল গাছের নিচে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন, উপভোগ করুন বাতাসের সঙ্গে শিমুলের লাল পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ার মুহূর্তটুকু।
গোলাপ গ্রাম, সাদুল্লাপুর, সাভার
এবার বসন্তের আরেকটি ফুলেল গল্প বলব। কারণ বসন্ত মানেই তো ফুল, এরা একে অন্যের সমার্থক। বসন্তে ঘুরে আসতে পারেন গোলাপ গ্রাম থেকে, এটি যেন সুগন্ধি এক আশ্চর্যভূমি। ঢাকা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তুরাগ নদের তীরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে এর অবস্থান। সাদুল্লাপুরের এই গোলাপ গ্রামটি দারুণ মনোমুগ্ধকর। পুরো গ্রামটিই গোলাপের সৌন্দর্য আর সৌরভে মাতোয়ারা।
গোলাপ গ্রামে কেবল গোলাপ ফুলেরই চাষ হয়। ফুলের খেতগুলো যেন লাল রঙে ফেটে পড়ছে। আর লালের এই উৎসব কেবল সাদুল্লাপুরেই নয়, আশপাশের গ্রাম যেমন কামালপুর, শ্যামপুর এবং বাগনিবাড়ির মাঠগুলোতেও ফুটে রয়েছে লাখো গোলাপ, যা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। গোলাপ গ্রামের বাতাসে ভেসে বেড়ায় তাজা ফুলের ঘ্রাণ, যা গোটা এলাকায় এক স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফুলের খেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যদি এর চাষীদের সঙ্গে কিছুসময় গল্প করেন, দেখবেন মনে হবে যেন বসন্তের পুনর্জীবন অনুভব করছেন।
মিরিঞ্জা ভ্যালি, বান্দরবান
আপনি তেমন একটা ফুল পছন্দ করেন না? কোনো সমস্যা নেই, আমরা আপনার জন্যও গন্তব্যের খোঁজ এনেছি। আর সেটি হলো, মিরিঞ্জা ভ্যালি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট উচ্চতায় বান্দরবানের লাসা-চকরিয়া সড়কের কাছে এর অবস্থান। এই স্থানটি থেকে একই সঙ্গে দেখা মেলে সুউচ্চ পাহাড়, আঁকাবাঁকা নদী আর কুয়াশাচ্ছন্ন দিগন্ত। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টিই দারুণ মনোরম।
বসন্তে গোটা পাহাড়ি এলাকার গাছগুলোয় দেখা মেলে তাজা সবুজ পাতার, বিক্ষিপ্তভাবে ফুটে থাকে বন্য ফুল। সুউচ্চ পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এই উপত্যকাটি যেকোনো নিরবতাপ্রেমী পর্যটকের জন্য যথাযথ গন্তব্য হতে পারে। সর্বোচ্চ চূড়া থেকে সূর্যোদয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার সুযোগ কারোরই হারানো উচিত নয়।
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
আপনি যদি জনমানবহীন কোনো স্থানে ক্যাম্পিং করতে চান, সেইসঙ্গে পেতে চান উপকূলের স্বাদ; তাহলে ভোলার মনপুরা দ্বীপ আপনারই জন্য। বসন্তে স্বাভাবিকভাবেই দ্বীপের প্রকৃতি উজ্জ্বল সবুজে সাজে, সেইসঙ্গে চোখ মেললেই দেখতে পাবেন মনোমুগ্ধকর বঙ্গোপসাগর।
মনপুরা দ্বীপের তিন দিকে মেঘনা নদী এবং আরেকদিকে বঙ্গোপসাগর। আপনি যদি রাতে সদরঘাট থেকে বেতুয়া বা হাতিয়াগামী লঞ্চে ওঠেন তাহলে সূর্য ওঠার আগেই মনপুরা পৌঁছে যাবেন। এই দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ হলো ম্যানগ্রোভ বন, যা মাইলের পর মাইল বিস্তৃত। যেহেতু বনের চারদিক নদীবেষ্টিত তাই আপনি চাইলেই নদীর ধারে তাঁবু খাটিয়ে রাতযাপন করতে পারেন। দ্বীপের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে হরিণের ঝাঁক এবং সূর্য ওঠা ভোরে নদীতে জেলেদের জাল ফেলার দৃশ্য।
কেন বসন্তেই মন পুরা যাবেন? কারণ এটাই সঠিক সময়, না খুব গরম না খুব ঠান্ডা আবহাওয়া। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই সময় বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকে, যা বেড়ানোর জন্য ভালো।
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments