ভিড় এড়াতে ঈদের ছুটিতে যেতে পারেন যেসব স্থানে

ঈদে ভ্রমণ
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। আর ঈদের ছুটি কাটানোর হাজারো জল্পনা-কল্পনা নিঃসন্দেহে এ আনন্দের অন্যতম প্রধান অংশ। কীভাবে কী করলে ছুটিটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাটানো যাবে— এ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। আর ঈদের ছুটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভ্রমণবিলাসী মনের সুতো।

তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই এখন ঈদের ছুটির কারণে এত বেশি ভিড় যে, এই সময়টায় একটু আরাম করে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। তাই তো বেছে নিতে পারেন এমন কিছু দর্শনীয় স্থান, যাতে নেই ভিড়ের আনাগোনা— তবে সৌন্দর্য আর উপভোগের উপাদানের কমতি নেই এক বিন্দু। ভিড়কে ফাঁকি দিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে বেছে নিতে পারেন এই চারটি স্থান।

চীনা মাটির পাহাড়, নেত্রকোণা

নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের বিজয়পুরে অবস্থিত এই পাহাড়। মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা এই স্থানটি আরো দূর-দূরান্তের পাহাড়ের দেখাও পাইয়ে দেবে খুব সহজে। এই পাহাড়গুলো উচ্চতায় হয়তো খুব বেশিদূর এগোয়নি, তবে এদের চূড়ায় একবার উঠে গেলে রোমাঞ্চ আর সৌন্দর্যের অদ্ভুত মেলবন্ধনের দেখা মিলবে। আশপাশেই রয়েছে বেশকিছু হ্রদ। এর মধ্যে নীল পানির হ্রদের সঙ্গে পরিচয় হলে মিলবে এক প্রশান্তিময় নীল রঙের দেখা। নামের মান রেখে ছবির মতোই সুন্দর এ হ্রদ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেশের অন্যান্য পর্যটন স্থলের মতো এ জায়গায় অত বেশি মানুষ ঘুরতে যায় না বলেই এই সময়টায় নিরিবিলিতে দেখে আসতে পারেন প্রকৃতির এক গুপ্ত সৌন্দর্যময় স্থান। চাইলে ঢাকা থেকে একদিনের সফরেও ঘুরে আসা যায়। বাস, ট্রেন দুটোই আছে। তবে ভাড়া আর আরামের দিক দিয়ে চিন্তা করলে ট্রেন বেশি ভালো হবে যাতায়াতের জন্য।

মনপুরা দ্বীপ, ভোলা

বহুদিন ধরে প্রকৃতির স্পর্শ না পেয়ে কি আপনার প্রাণও হাঁপিয়ে উঠেছে? ভাবছেন, কয়েক ঘণ্টা সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেড়ালেই ক্লান্তি দূর হবে? আর নয়তো ম্যানগ্রোভ বনের মধ্য দিয়ে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে চলা? কিন্তু এই মুহূর্তে কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন দুটোই ভিড়ে পর্যুদস্ত, ফলে প্রশান্তির বদলে মন আরো বেশি হাঁসফাঁস করবে ভিড়ের উচাটনে। তাই, বহুদিন আগে সিনেমায় দেখা সেই প্রিয় মনপুরা দ্বীপেই ঘুরে আসা যাক না কেন?

মূল ভূমি থেকে এই দ্বীপটি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, তবে ভোলা জেলারই অংশ মনপুরা। একদিকে বঙ্গোপসাগর, আর অন্য তিনদিকে মেঘনা নদীর ঢেউয়ে ঘেরা এ দ্বীপে প্রকৃতি যেন মন উজার করেই দিয়েছে। হরিণের অভয়ারণ্য, ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্রসৈকত ছাড়াও তাই আশপাশে দু চোখ ভরে দেখার দৃশ্যের অভাব হবে না।

বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বলে এ দ্বীপে যেতে হবে জলপথেই। ঢাকা সদরঘাট থেকে বেশ কিছু লঞ্চ ছেড়ে যায়। কেউ চাইলে বরিশাল দিয়ে, কিংবা সোজা ভোলার উদ্দেশে লঞ্চে উঠতে পারেন। ছুটিটা মন্দ যাবে না।

নীলাদ্রি লেক, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের জলজ অঞ্চলে দেখার মতো আছে অনেক জায়গাই। যদি কারো তাড়া থেকে থাকে, তাহলেও কম সময়ে বেড়িয়ে আসা সম্ভব। এক্ষেত্রে নীলাদ্রি লেককে প্রধান গন্তব্যস্থল ধরে এগোনো যায়, আর সেখানে যাওয়ার পথে অন্য জায়গাগুলোতেও ঢুঁ মারা যায়। এই লেকটিকে অনেকে শহীদ সিরাজ লেক নামেও চেনে। লেকটি অবস্থিত তাহিরপুর উপজেলার ট্যাঁকের ঘাট গ্রাম।

এখান থেকে টাঙ্গুয়ার হাওড়ও খুব একটা দূরে নেয়। অনেক পর্যটকই এক ঢিলে কয়েক পাখি মারার জন্য সুনামগঞ্জে যান। এলাকার একেকটি প্রান্ত জুড়ে যেন ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। একটু দূর থেকে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো দেখতে পেলে চোখ ও মন উভয়েই যেন বিশ্রাম খুঁজে পায়।

আর এখানে যাওয়াটাও খুব একটা কঠিন নয়। বাস থেকে সুনামগঞ্জের বাসে উঠে পরে বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো নিয়েই পৌঁছে যাওয়া যাবে নীলাদ্রি লেকের কাছে।

বগা লেক, বান্দরবান

পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবনে অবস্থিত বগা লেক আর সাঙ্গু নদী যেন প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ। শুধু দৃশ্যের আনন্দই নয়, এর দর্শনে মেলে মনের প্রশান্তিও। ঘন সবুজের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে সাঙ্গু বক্রঢেউ যেন এক দেশের সবচেয়ে রূপসী নদীর তকমা দিয়ে দেয়। এমন স্বচ্ছ পানির মধ্যদিয়ে নৌকায় ভেসে বেড়ালে মনে হবে, হয়তোবা মাটির একটু উপরে হাওয়াতেই ভাসছেন। ইচ্ছে করবে, একটু দূরে থাকা পাহাড়গুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে।

অন্যদিকে বগা লেক হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,২৪৬ ফুট উঁচুতে অবস্থিত প্রকৃতির এক আশ্চর্য সন্তান। দুর্দান্ত সব পাহাড়ের আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা বগা লেকের সঙ্গে মিশে আছে এক অদ্ভুত ড্রাগনের উপকথা। গল্পগুলো শুনে মনে হয় যেন উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা কাহিনী। আর এসব গল্পকথার জাদু বেড়ে শতগুণ হয়ে যায়, যখন এখানে যাওয়ার সময় পর্যটকরা 'চান্দের গাড়ি'তে চড়েন।

বগা লেকের আশপাশে বেশ কিছু কটেজ রয়েছে, তাই চাইলে রাতটা সেখানেই কাটাতে পারেন। নৌভ্রমণের পাশাপাশি অনেকের বাকেট লিস্টে তাই বাড়তি উদযাপনে থাকে বারবিকিউ। আর যদি সময় করা যায়, আর একটু শরীরচর্চার ইচ্ছেও থেকে থাকে— তাহলে কেওক্রাডংয়ে ট্রেকিং তো রয়েছেই।

মনে রাখা জরুরি

ঘুরে বেড়ানোর এই জায়গাগুলোর মধ্যে কোথাও কোথাও হয়তো যেতে বেশ শারীরিক ক্লান্তি আসতে পারে বা যাতায়াতের পথেও অনেক বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তাই সে অনুযায়ী ভালোমতো পরিকল্পনা করে গোছগাছ করে নেওয়াটাই ভালো। জরুরি জিনিসপাতি যেন দরকারের সময় পাওয়া যায়, সেটি মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া ঘুরতে গেলে স্থানীয় গাইড বা চেনা কাউকে সঙ্গে রাখলে পথ হারানোর ভয় থাকবে না। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে গুগল ও ইউটিউব থেকে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে এসব জায়গায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন টিপস জেনে নিন। খরচের পাশাপাশি যাতায়াত নিয়েও একটা মোটমাট ধারণা পাওয়া যাবে।

ভ্রমণের গন্তব্য যেটিই হোক, আনন্দ হোক নির্ভেজাল। এক দিনের মধ্যে একাধিক জায়গায় ঘুরবার জন্য যাতে তাড়াহুড়ার মধ্যে না থাকতে হয়, এটিও খেয়াল রাখুন। কারণ ঘোরার জায়গার চেয়েও বেশি গুরুত্ব রাখে আনন্দটাই। যাতে পরদিন সকালে ক্লান্ত না লাগে, তাই আগের দিন অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। ভ্রমণ মন ও শরীরের জন্য যেন উপভোগ্য ও স্বাস্থ্যকর হয়, সেটি নিশ্চিত করাই মূলকথা।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Funeral of Pope Francis begins at Vatican

Applause rang out as the wooden coffin, inlaid with a large cross, was brought out of St. Peter's Basilica and into the sun-filled square by white-gloved, black-suited pallbearers.

35m ago