মেনোপজের লক্ষণ, শারীরিক-মানসিক প্রভাব এবং করণীয়

মেনোপজ
ছবি: সংগৃহীত

মেনোপজ একজন নারীর জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়। মেনোপোজ ঋতুচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। এটি শরীরের ওপর এবং মনের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে হাড়ের ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।

মেনোপজ বিষয়ে ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মোসাম্মাত রাশিদা বেগমের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

মেনোপজ কী

ডা. রাশিদা বেগম বলেন, মেনোপজ হলো প্রজনন বয়সের সমাপ্তি। যখন একজন নারীর প্রজনন জীবন শেষ হয়ে যায় সেটাই মেনোপজ। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে মেনোপজ। তবে গড়ে ৫১ বছর বয়সে মেনোপজ হয়। এ সময় ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় নারীদের।

যখন প্রথম মাসিক শুরু হয় তখন সেটাকে বলে মেনার্কি আর যখন শেষ হয়ে যায় তখন সেটাকে বলা হয় মেনোপজ। সাধারণত ১৩ বছর বয়সে একটি মেয়ের মাসিক শুরু হয় আর ৫১ বছর বয়সে তা শেষ হয়ে যায়।

মেনোপজের লক্ষণ

মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-

১. কখনও তিন মাস, চার মাস মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।

২. অনিয়মিত মাসিক হওয়া।

৩. বছরে মাসিক ১২ বার হওয়ার কথা, সেখানে বছরে তিন বার হলো- এমন হলে মেনোপজের পূর্ব লক্ষণ। এভাবে কোনো নারীর মাসিক অনিয়মিত হতে হতে যখন টানা এক বছর বন্ধ থাকে তখন ধরে নিতে হবে মেনোপজ হয়ে গেছে।

৪. এ সময় রিপ্রোডাক্টিভ ফাংশন বন্ধ হয়ে যায়, হরমোনাল পরিবর্তন হয়, ডিম্বাশয় থেকে আসা হরমোন ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরোন মেনোপজে বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে পিটুইটারি হরমোন বেড়ে যায়। তখন কারো কারো ক্ষেত্রে শরীরে হঠাৎ হটফ্লাশ করে অর্থাৎ শরীরে গরম অনুভূত হয়। মাথা গরম হয়ে যায়।

৬. রাতের বেলায় ঘাম হয়।

৭. ঘুম হয় না।

৮. মুড পাল্টাতে থাকে।

মেনোপজের পর আবারও মাসিক শুরু হয় কি?

ডা. রাশিদা বেগম বলেন, টানা এক বছর বন্ধ থাকার পর যদি কোন নারীর আবার মাসিক হয় তবে সেটি অস্বাভাবিক। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এরকম হতে পারে। মেনোপজের এক বছর পর আবার ব্লিডিং হওয়া পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং। এটা এক ধরনের ডিজঅর্ডার। কোনো ক্যানসারের জন্য হতে পারে, রক্তের ব্যাধি কিংবা জরায়ুর কোনো সমস্যার কারণে ব্লিডিং হতে পারে বলে জানান ডা. রাশিদা বেগম।

সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ব্লিডিং কেনো হচ্ছে তার কারণ শনাক্ত করে চিকিৎসা নিতে হবে।

মেনোপজের শারীরিক প্রভাব

ডিম্বাশয় থেকে আসা হরমোন ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরোন শরীরকে নিরাপত্তা দেয়, সেটি মেনোপজের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই হরমোনের অভাবে হাড়ক্ষয় রোগ অস্টিওপোরোসিস দেখা দেয়। এতে পিঠে, হাঁটুতে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথাসহ বিভিন্ন জায়গায় হাড়ের ব্যথা হয়।

অস্টিওপরোসিসে ভুগলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে ঝাঁঝড়া হয়ে যায়, একদম ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। কোনোরকম আঘাত লাগলে হাড় গ্লাসের মত ভেঙে যেতে পারে। কোনোভাবে পড়ে গেলেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। এ ছাড়া মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, সামনের দিকে শরীর ঝুঁকে পড়ে। বাঁকা হয়ে হাঁটতে দেখা যায় অনেক নারীকে। হৃদপিণ্ডের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে এতে।

মেনোপজের মানসিক প্রভাব

অনেকে মেনোপজ মেনে নিতে পারেন না, বিশেষ করে যাদের তাড়াতাড়ি মেনোপজ হয়। সাধারণত ৪৫ বছর বয়স থেকে মেনোপজ হলেও অনেকের ক্ষেত্রে ৪০ এর পরেই মেনোপজ হয়ে যায়। সে কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন অনেকে। যাদের সন্তান নেই, বিশেষ করে সেই নারীদের ওপর মারাত্মক মানসিক প্রভাব পড়তে দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস হয়, যে কারণে যৌনজীবনে প্রভাব পড়ে।

মেনোপজে খাদ্যাভাস

ডা. রাশিদা বেগম বলেন, মেনোপজে হাড় ও হৃদপিণ্ডের সুরক্ষায় ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, শাকসবজি, ফল, মাছ, দুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

আর যদি শরীরে লিপিড কনেন্ট বেশি থাকে, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা অন্য জটিল কোনো রোগ থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। একইসঙ্গে মানসিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেনোপজে।

মেনোপজে করণীয়

১. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে।

২. নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।

৩. যোগব্যায়াম করতে হবে।

৪. বসে বসে না কাটিয়ে শারীরিক চলাফেরা সচল রাখতে হবে।

৫. ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

৬. হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিতে হবে।

৭. অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা

মেনোপজের কারণে দীর্ঘমেয়াদে নারীদের হাড়ক্ষয় ও হৃদপিণ্ডের ওপর প্রভাব পড়ে। হাড়ের সুরক্ষায় হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি দেওয়ার কথা বলেন ডা. রাশিদা বেগম। যে হরমোন ডিম্বাশয় থেকে আসে যেমন- ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরোন, সেই হরমোন দিতে হবে। যদি কারো জরায়ু থাকে তাহলে তাদের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরোন দুটোই দিতে হবে। কারো যদি কোনো কারণে জরায়ু না থাকে তাদের শুধু ইস্ট্রোজেন দিতে হবে। যতদিন তার দরকার হয় ততদিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোনাল থেরাপি দিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

EU lists Bangladesh among 7 'safe' countries, tightening asylum rules

The move, criticised by rights groups, is set to allow EU governments to process asylum applications filed from citizens of those countries more quickly

10h ago