মুখে দুর্গন্ধ কেন হয়, সমাধান কী

কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই মুখের দুর্গন্ধ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, বলেছেন ডা. অরূপরতন চৌধুরী।
প্রতীকী ছবি

মুখে দুর্গন্ধ থাকা বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। অনেকেই এ সমস্যায় ভুগলেও, জানেন না কেন এ সমস্যা হয় কিংবা এর সমাধানই বা কী।

ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের অধ্যাপক ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অরূপরতন চৌধুরীর কাছ থেকে চলুন সমস্যাটির কারণ, প্রতিরোধ, চিকিৎসাসহ বিস্তারিত জেনে নিই।

ডা. অরূপরতন চৌধুরীর মতে, ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যের অনেকখানিই নির্ভর করে মুখের স্বাস্থ্যগত অবস্থা তথা দুর্গন্ধমুক্ত মুখগহ্বরের ওপর। কিন্তু দুর্গন্ধ বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস অনেকসময়ই বিরক্তিকর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ হয়তো এমন অবস্থা সম্পর্কে খুব একটা অবগত থাকেন না।

মুখে দুর্গন্ধ কেন হয়

১. প্রতিবার খাওয়ার পর মুখের ভেতরে খাদ্য আবরণ দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির ভেতর জমে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি করে। পরে তা থেকে মাড়ির প্রদাহ দেখা দেয় (পেরিওডেন্টাল ডিজিজ)। এর ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।

২. মুখে যেকোনো ধরনের ঘা বা ক্ষত থাকলেও দুর্গন্ধ হয়।

৩. আঁকাবাঁকা দাঁত থাকার কারণে খাদ্যকণা ও জীবাণু অবস্থানের কারণে।

৪. দেহে সাধারণ রোগের কারণে মুখের ভেতরে ছত্রাক ও ফাঙ্গাস জাতীয় ঘা (ক্যানডিজিস) থাকলে।

৫. মুখের ক্যান্সারের কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে।

৬. ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার থাকলে।

৭. দুর্ঘটনার কারণে ক্ষত।

এ ছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে বলে ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেছেন।

যেসব রোগের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে

১. পেপটিক আলসার বা পরিপাকতন্ত্রের রোগ

২. লিভারের রোগ

৩. গর্ভাবস্থা

৪. কিডনির জটিলতা

৫. বাতজনিত রোগ

৬. ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র

৭. হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ

৮. গলা বা পাকস্থলীর ক্যানসার।

৯. এইডস

১০. হৃদরোগ

১১.  মানসিক রোগ

১২. নাক, কান ও গলার রোগ

মুখে দুর্গন্ধ হলে যা করবেন

ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই মুখের দুর্গন্ধ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন:

১. তিন বেলা খাওয়ার পর পরিষ্কার উন্নতমানের একটি ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে দাঁতের সব অংশে ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার করতে হবে।

২. অনেকেই শুধু দাঁত পরিষ্কার করেন, কিন্তু জিহ্বা পরিষ্কার করেন না। কিন্তু দাঁতের সঙ্গে জিহ্বা পরিষ্কার করাটাও অনেক জরুরি। বিশেষ টাং ক্র্যাপার বা টাং ক্লিনারের সাহায্যে এটা করা যায়। জিহ্বাতে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।

৩. যেকোনো ধরনের মাউথওয়াশ (ক্লোরহেক্সিডিন জাতীয়) দুই চামচ মুখে ৩০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিয়ে আবার অল্প গরম লবণ পানিতে কুলকুচি করা। প্রতিদিন অন্তত দুবার, সকালে ও রাতে খাবারের পর কুলকুচি করা।

৪. অবসর সময়ে মুখের ভেতরে একটি লবঙ্গ বা এলাচির দানা রাখতে পারেন।

৫. প্রতিবার খাওয়ার পর (যা কিছু খাবেন, যেমন-বিস্কুট, ফলমূলজাতীয় খাবার) সম্ভব হলে দাঁত ব্রাশ করা অথবা কুলকুচি করা।

৬. ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য জর্দা, পান ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে। ধূমপান মুখ গহ্বরকে অধিক পরিমাণে শুষ্ক করে তোলে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালাও তৈরি হয় না। দাঁত ও জিহ্বাতে নিকোটিন জমে। এছাড়া ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলও মুখের শুষ্কতার জন্য দায়ী। তাই এসব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৭. যাদের মুখগহ্বর বেশি শুষ্ক তারা মুখের দুর্গন্ধের সমস্যায় বেশি ভোগেন। তাই তাদের প্রচুর পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে অল্প অল্প করে বার বার পানি খেতে হবে।

৮. মুখের লালা নিঃসরণ বাড়াতে চিনিবিহীন গাম অথবা লজেন্স বা সুগারলেস চুইংগাম খাওয়ার কথা বলেন ড. অরূপরতন চৌধুরী।

৯. সজীব নিঃশ্বাসের জন্য টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার সময় যোগ করা যেতে পারে কয়েক ফোঁটা চা পাতার তেল অথবা পুদিনার তেল, যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে।

১০. দাঁতের ফাঁকে বা মাড়ির ভেতরে অনেক সময় খাদ্যকণা জমে পচন শুরু হয়। ডেন্টাল ফ্লস, টুথ পিকসের সাহায্যে খাদ্যকণাগুলো বের করা। এই ডেন্টাল ফ্লস বা সুতো এবং জীবাণুমুক্ত শলাকা ব্যবহারবিধি একজন ডেন্টাল সার্জনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো।

মুখে দুর্গন্ধের চিকিৎসা

ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, 'অনেক সময় ডেন্টাল ক্যারিজ বা মাড়ির রোগের কারণে দাঁতে ফাঁক হতে পারে। তাই কোনো সিদ্ধান্তের আগে ডেন্টাল এক্স-রে করিয়ে নেওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।'

যেসব কারণে দুর্গন্ধ হয়, সেগুলো দূর করার পরেও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায়, তবে দেহের অন্যান্য সাধারণ রোগের উপস্থিতির পরীক্ষাগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. অরূপরতন চৌধুরী।

Comments