টনসিলের সমস্যায় ভুগছেন?

টনসিলাইটিস সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন।
টনসিলের সমস্যা
ছবি: সংগৃহীত

টনসিলাইটিসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। বিশেষ করে শীতকালে বেশ ভুগতে হয় এটি নিয়ে। 

টনসিলাইটিস কী, এর লক্ষণ, ঝুঁকি ও কখন অস্ত্রোপচার দরকার, কখন অস্ত্রোপচার করা উচিত না সে সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন।

টনসিলের সমস্যা কী

ডা. হাসানুল হক বলেন, মানুষের শরীরে গলার ভেতর দুই পাশে থাকা দুটি গ্রন্থিই হচ্ছে টনসিল। এটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। খাবারের মাধ্যমে বা বিভিন্নভাবে শরীরে যে রোগজীবাণু প্রবেশ করে তা ধ্বংস করে দেয় টনসিল, মানবদেহে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

টনসিলের সমস্যা হচ্ছে টনসিলাইটিস অর্থাৎ টনসিলের কোনো ধরনের প্রদাহ যদি হয় তখন তাকে টনসিলাইটিস বলা হয়। কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে এটি হয়ে থাকে। টনসিলাইটিস সমস্যা সব বয়সী মানুষের হতে পারে। তবে শিশুদের ৩ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি থাকে।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ছোঁয়াচে, এটি অন্য কারো কাছ থেকে সংক্রমণ হতে পারে। বিভিন্ন নাম না জানা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে টনসিলাইটিস হতে পারে। আর ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, যার সংক্রমণের ফলে টনসিলাইটিস হয়।

টনসিলাইটিস যেকোনো ঋতুতেই হতে পারে। তবে শীতকালে এর প্রকোপ বেশি হয়। শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খেলেও টনসিলের প্রদাহ শুরু হয়ে যায় অনেকের।

টনসিলাইটিস একিউট ও ক্রনিক এই দুই ধরনের হয়।

একিউট টনসিলাইটিস: হঠাৎ করে একদিন হতে পারে। ৫ থেকে ৭ দিন পর চলে যায়।

ক্রনিক টনসিলাইটিস: এটা ঘনঘন হয়। কিছুদিন পরপরই সংক্রমণ হবে, ব্যথা হবে।

টনসিলাইটিসের লক্ষণ

১. গলা ব্যথা হয়।

২. খেতে অসুবিধা হয়। পানি খাওয়ার সময়, ভাত খেতে, এমনকি মুখের লালা গিলতে কষ্ট হয়।

৩. লালাগ্রন্থি ফুলে যায়।

৪. জ্বর হয়।

৫. শরীর ম্যাজম্যাজ করে।

৬. ঠান্ডা, কাশি, নাক দিয়ে পানি ঝড়তে থেকে।

ডা. হাসানুল হক বলেন, টনসিলের সঙ্গে যদি এডিনয়েড থাকে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সেটা দেখা হয়। এডিনয়েডে যদি সংক্রমণ হয় এবং বেশি ফুলে যায় তাহলে শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে কানে পানি চলে আসতে পারে। ফলে শিশু কানে কম শুনবে, মনোযোগ কম হবে।

টনসিলের ঝুঁকি

ডা. হাসানুল হক বলেন, যাদের একিউট টনসিলাইটিস হয় তাদের একবার হয়েই সেরে যায় ওষুধ খাওয়ার পরে। তাদের ভয় বা ঝুঁকির কিছু নেই।

কিন্তু যাদের ক্রনিক টনসিলাইটিস তাদের ঝুঁকি রয়েছে। যেমন-

১. টনসিল যদি ঘনঘন হয় তাহলে টনসিলের মধ্যে এক ধরনের পুঁজ জমে যায় (প্যারিটনসিলার অ্যাবসেস)। সেটি অত্যন্ত মারাত্মক। পুঁজ হয়ে গেলে সার্জারির মাধ্যমে পুঁজ বের করে ওষুধ দিতে হয়।

২. দীর্ঘদিন ইনফেকশন থাকলে টনসিলের মধ্যে সাদা সাদা দাগ হয়। ভাতের মতো এক ধরনের দানাদার পদার্থ টনসিল থেকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়।

৩. ক্রনিক ইনফেকশন হলে টনসিলের মধ্যে পাথরও হতে পারে।

৪. টনসিলার ক্যারাটোসিস নামক রোগও হতে পারে।

৫. বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে ৫৫ বছরের পরে যদি কারো হঠাৎ করে একটা টনসিল ফুলে যায়, ব্যথা হয় তাহলে তাদের দ্রুত চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা থেকে যায়।

কখন টনসিলের অস্ত্রোপচার দরকার

ডা. হাসানুল হক বলেন, একিউট নাকি ক্রনিক টনসিলাইটিস সেটি চিহ্নিত করতে হবে প্রথমে। অস্ত্রোপচারের কিছু শর্ত আছে। যেমন-

১. যদি কারো বছরে ৭ বার বা তার বেশি টনসিলের ইনফেকশন হয়।

২. যদি ২ বছরে কারো ১০ বার টনসিলের ইনফেকশন হয়।

৩.  প্রতি বছরে ৫ বার বা তারও বেশি হয়।

৪. ৩ বছরের মধ্যে প্রত্যেক বছর ৩ বার করে হয়। 

৫. টনসিল যদি বেশি বড় হয়ে যায়, শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, খেতে অসুবিধা হয়।

৬. টনসিলের মধ্যে পুঁজ জমে গেলে।

৭. টনসিলে পাথর হলে।

৮. শিশুদের টনসিলের সঙ্গে যদি এডিনয়েডের সমস্যা হয়। এডিনয়েডের ফলে যদি রাতের বেলা হা করে শ্বাস নেয়, দাঁত উঁচু হয়ে যায়, অমনোযোগী হয়, ঘনঘন ঠান্ডা-কাশি হয় সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করতে হবে।

কখন টনসিলের অস্ত্রোপচার করা যাবে না

একিউট টনসিল হলে অনেক সময় ওষুধও প্রয়োজন হয় না। কুসুম গরম পানি, লবণ পানি গড়গড়া করলে সমস্যা চলে যায়। তাই একিউট টনসিলাইটিস হলে কখনই অস্ত্রোপচার করা উচিত না।

ডা. হাসানুল হক বলেন, টনসিলের সমস্যা হলে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। টনসিলের অবস্থা বুঝে ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ তার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক রোগীকে ওষুধ দেবেন। ক্রনিক ইনফেকশন হলে প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করতে হয়। যদিও নিয়ম মেনে টনসিলের সমস্যা খুব একটা প্রতিরোধ করা যায় না। তারপরও কিছু নিয়ম মেনে চলা ভালো। যেমন-

১. গলায় ইনফেকশন বা টনসিলের সমস্যা যাদের আছে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা। কারণ সংক্রমিত ব্যক্তির লালা বা থুথুর মাধ্যমে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন।

২. ঠান্ডা আবহাওয়ায় সর্তকতা মেনে চলতে হবে।

৩. ঠান্ডা খাবার খাওয়ায় সর্তক হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

12h ago