চোখের রোগ ইউভাইটিসের কারণ ও লক্ষণ, অন্ধত্বের ঝুঁকি কতটা

ইউভাইটিস
ছবি: সংগৃহীত

ইউভাইটিস চোখের প্রদাহজনিত একটি রোগ।

ইউভাইটিস সম্পর্কে জেনে নিন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. সাউদ আল ফয়সাল ইমনের কাছ থেকে।

ইউভাইটিস কী ও কেন হয়

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, চোখের মধ্য স্তরকে ইউভিয়া বলে, ইউভিয়া চোখের রক্তনালির বেশিরভাগ অংশকে ধারণ করে। আমাদের চোখের সাদা অংশকে স্ক্লেরা এবং একদম ভেতরের অংশকে রেটিনা বলে। স্ক্লেরা ও রেটিনার মাঝখানের অংশটি হচ্ছে ইউভিয়াল ট্র্যাক্ট। এই ইউভিয়াল ট্র্যাক্টের যে প্রদাহ তাকে ইউভাইটিস বলে। সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যেই ইউভাইটিস বেশি হয়।

ইউভাইটিস কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। ৫০ শতাংশ কারণ এখনও অজানা। বাকি যেসব কারণে ইউভাইটিস হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অটোইমিউন ডিজিজ। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে ইউভাইটিস হতে পারে।

কিছু অটোইমিউন ডিজিজ আছে, যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মেরুদন্ডে অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, সোরিয়াসিস আর্থ্রাইটিস। এ ছাড়া এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এইডস, হারপিস ভাইরাস, টিউবারকিউলোসিস, সিফিলিস থেকে ইউভাইটিস হতে পারে।

ট্রমা থেকে চোখে বড় কোনো ইনজুরি হলে, বিষাক্ত কোনোকিছু যদি চোখে ঢুকে যায় সে কারণেও ইউভাইটিস হতে পারে।

লক্ষণ

১. চোখ খুব লাল হয়ে যাওয়া, চোখে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।

২. আই ফ্লোটার্স অর্থাৎ চোখের ভেতরে ভাসমান কিছু জিনিস দেখতে পাওয়া।

৩. আলোর দিকে তাকাতে না পারা বা আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। লাইট সেনসেটিভ হয় যাবে চোখ।

৪. চোখে ঝাপসা দেখা, কম দেখা।

৫. পিউপিল বা তারারন্ধ্র ছোট হয়ে যাওয়া।

৬. মাথা ব্যথা হতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে।

অন্ধত্বের ঝুঁকি আছে কি

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, কারো ইউভাইটিস আছে কি না সেটি আগে থেকে বোঝা সম্ভব না। ইউভাইটিস থেকে চোখে ছানি পড়তে পারে, চোখের রেটিনাতে পানি জমতে পারে, চোখের প্রেশার বেড়ে গ্লুকোমা হতে পারে। এমনকি রেটিনা ডিটাচমেন্ট হয়ে যেতে পারে, এর ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। সঠিক সময়ে ইউভাইটিস শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অর্থাৎ অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

চিকিৎসা

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, চোখে ইউভাইটিস আছে কিনা সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে। প্রদাহ দূর করার জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ড্রপের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। চোখে প্রদাহ বেশি হলে ট্যাবলেট এমনকি ইনজেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড দিতে হতে পারে। এ ছাড়া আইরিস যাতে প্রসারিত হয় এবং প্রদাহ কমে তার জন্য কিছু ড্রপ দেওয়া হয়। পিউপিল বা তারারন্ধ্র প্রসারণে সাহায্য করে এমন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। সহজে ইউভাইটিস নিরাময় না হলে ইমিউনোসপ্রেসিভ বা সাইটোটক্সিক ড্রাগ অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।

ইউভাইটিসের কারণে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতার জন্য গাঢ় রঙের চশমা ব্যবহার করতে হবে।

যেসব অটোইমিউন ডিজিজ এবং ইনফেকশনের কারণে ইউভাইটিস হয় সেগুলো প্রতিরোধ করতে পারলে ইউভাইটিস কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। দ্রুত শনাক্ত এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে স্থায়ীভাবে অন্ধত্ব ঠেকানো যেতে পারে। তাই চোখের যেকোনো সমস্যায় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

Gold prices in Bangladesh continue to soar, leaving many to wonder why the precious metal costs more here than in neighbouring India or the global trading hub Dubai.

1h ago