হাতের কবজি ও বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় ব্যথা কেন হয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস
ছবি: সংগৃহীত

হাতের কবজি ও বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় অনেকেরই ব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথার জন্য ব্যক্তি নিজেই দায়ী।

এই সম্পর্কে জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোস্কপি অ্যান্ড জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি ইউনিট, অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আলী ফয়সালের কাছ থেকে।

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস কী

ডা. ফয়সাল বলেন, আমাদের হাতে কবজির পাশে বৃদ্ধাঙ্গুল থাকে, এই বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় টেনডনে যে প্রদাহ বা ব্যথা হয় তাকে ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস বলে।

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস প্রদাহের কারণে বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়াচাড়া করার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় ব্যথা হয়। কোনো জিনিস হাত দিয়ে মুষ্ঠি করে ধরতে গেলেও বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় ব্যথা হয়। পুরুষ কিংবা নারী যে কারোই এটি হতে পারে। তবে নারীদের ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সে এই সমস্যা বেশি হয়।

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস কেন হয়

ডা. ফয়সাল বলেন, বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। যেমন-

১. কেউ যদি হাত দিয়ে একই রকম কাজ বার বার করে এবং তার পাশাপাশি কবজির মুভমেন্ট বেশি হয় তখন তাদের সাধারণত ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

২. কারো যদি বাতরোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকে তাদেরও হতে পারে।

৩. কেউ যদি কোনো কারণে বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ায় আঘাত পায় তাদের হতে পারে।

৪. গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।

৫. সন্তান জন্মদানের পর সন্তানের পরিচর্যা, বার বার কাপড় ধোয়া ও নিংড়ানোর কারণে মায়েদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬. বর্তমান ডিজিটাল যুগ। এই সময়ে যারা দীর্ঘসময় মুঠোফোনে ব্যস্ত থাকেন, মুঠোফোন হাতে ধরে রাখা, মুঠোফোন হাতে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুল ভাঁজ হয়ে থাকার কারণে তাদের ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস হতে পারে।

অর্থাৎ একই রকম কাজে কবজি ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ব্যবহার যাদের বেশি হয় তাদের এটি হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। যেমন- নারীদের ক্ষেত্রে যারা কাপড় নিংড়ানো, রুটি বানানোর কাজ বেশি করেন তাদের হতে পারে। পুরুষদের মধ্যে যারা মেকানিক, বিভিন্ন ধরনের মিস্ত্রি, যারা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে হাতের কবজির মাধ্যমে মোড়ানোর কাজ বেশি করেন তাদের হতে পারে।

লক্ষণ

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস হলে বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়ার দিকে ব্যথা হয়, অনেক সময় ওই জায়গা ফুলে যায়। কবজি ও হাত নাড়ানোর সময় কিংবা বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে গেলে, কোনো জিনিস মুষ্টি করে ধরতে গেলে ব্যথা হয়।

চিকিৎসা

ডা. ফয়সাল বলেন, ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস অত্যন্ত ব্যথাযুক্ত একটি রোগ। এর চিকিৎসা না করলে অনেক সময় ব্যথা বেশি হতে পারে, জয়েন্টের মুভমেন্ট কমে যেতে পারে, অনেক সময় টেনডন শিথ ছিঁড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া জটিল কোনো ঝুঁকি নেই এই রোগের।

প্রথমত চিকিৎসা হিসেবে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়। এর পাশাপাশি যে কাজগুলো করলে ব্যথা হয় সেগুলো কম করা বা বিরত থাকতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলের বেশি ব্যবহার ও কবজি ঘুরাতে হয় এমন কাজ না করাই ভালো, যেমন- রুটি বানানো, কাপড় নিংড়ানোর কাজ বেশি করলে সেসব না করা, মুঠোফোন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার না করা।

সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং একই রকম কাজের পুনরাবৃত্তি না করলে ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

কিন্তু যদি দেরি করে আসে সেক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ না করলেও রোগী সহজে ভালো হয় না। সেজন্য কর্টিকো স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে হয়। ফিজিওথেরাপি বা ব্যায়াম শিখিয়ে দিলে রোগী ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়। হ্যান্ড থেরাপিস্টের পরামর্শে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব চিকিৎসায় রোগী ভালো না হলে ছোট সার্জারি করে নিলে ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস ঠিক হয়ে যায়।

প্রতিরোধ

ডি কোয়ার্ভেইন টেনোসাইনোভাইটিস প্রতিরোধে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একই ধরনের কাজ বার বার করা যাবে না, এড়িয়ে চলতে হবে। কাজের প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে। কারো যদি ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা থাকে সেগুলোর চিকিৎসা ঠিকমতো করতে হবে। হাতে যাতে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবে হাতে আঘাত পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
soybean oil price

Soybean oil prices hiked by Tk 14 per litre

The decision came following a review meeting at the secretariat on the import and supply of edible oil.

7m ago