আর্থ্রাইটিস কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোস্কপি অ্যান্ড জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি ইউনিট, অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আলী ফয়সালের কাছ থেকে।
প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। আর্থ্রাইটিস কী এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোস্কপি অ্যান্ড জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি ইউনিট, অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আলী ফয়সালের কাছ থেকে।

আর্থ্রাইটিস কী ও কেন হয়

ডা. ফয়সাল বলেন, মানুষের শরীরে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহকে আর্থ্রাইটিস বলে। ছোট-বড় সব জয়েন্টেই এটি হতে পারে। যেমন: হাতের জয়েন্ট, হাঁটুর জয়েন্ট কিংবা হিপ জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

বিভিন্ন কারণে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। যেমন:

১. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের জয়েন্ট, হাঁটুতে ক্ষয় হয়। সেই কারণে আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

২. কারো যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে, অতিরিক্ত ওজনের কারণে অস্থিসন্ধি, হাঁটুর ক্ষয় বেশি হয়। সেই কারণেও আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

৩. বাবা-মা বা বংশে কারো যদি আর্থ্রাইটিস থাকে, তাহলে পরবর্তীতে সন্তানদের আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৪. কোনো কারণে অস্থিসন্ধিতে আঘাত পেলে।

৫. অস্থিসন্ধিতে যদি ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল ইনফেকশন হয়, সেখান থেকে আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

৬. এ ছাড়া অটোইমিউন রোগের কারণে অনেক সময় আর্থ্রাইটিস হয়।

আর্থ্রাইটিসের ধরন

ডা. ফয়সাল জানান, আর্থ্রাইটিসের অনেক ধরন আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ধরন বেশ পরিচিত এবং ধীরে ধীরে বাড়ে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি আমাদের দেশে। হাঁটুতে যে আর্থ্রাইটিস হয়, সেটিই অস্টিওআর্থ্রাইটিস। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুতে ক্ষয় হওয়ার কারণে এটি হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে হাঁটুতে ব্যথা হবে, হাঁটু ফুলে যায়, হাঁটাচলা করতে গেলে দেখা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি আগের মতো হাঁটতে পারেন না, চলাফেরায় সমস্যা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস যদি অনেক দিন ধরে থাকে, তাহলে অনেক সময় হাঁটু বেঁকে যায়।

অন্যদিকে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি অটোইমিউন বা প্রদাহজনিত রোগ। যার ফলে জয়েন্টে ব্যথা, ফোলাভাব ও জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

আরও আছে গাউটি আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, সেপটিক আর্থ্রাইটিস যেটা অস্থিসন্ধিতে সংক্রমণ থেকে হয়, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস যাদের ত্বকে সোরিয়াসিস আছে তাদের হয়, অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস আর্থ্রাইটিস যেটা মেরুদণ্ডে বেশি হয়, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস যেটা অল্প বয়সে হয়।

আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ ও চিকিৎসা

আর্থ্রাইটিস হলে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হবে। ব্যথা অল্প হতে পারে, আবার মাঝারি বা অতিরিক্তও হতে পারে। অস্থিসন্ধি ফুলে যাবে, অস্থিসন্ধি জমে যায়, গতিশীলতা কমে যায়। আর্থ্রাইটিস এর বিভিন্ন ধরন অনুযায়ী এর লক্ষণও ভিন্ন হতে পারে। তবে সব আর্থ্রাইটিসেই ব্যথা থাকবে।

ডা. ফয়সাল বলেন, আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্য রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণ জেনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে কোন ধরনের আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত সেটি শনাক্ত করতে হবে। পরবর্তীতে আর্থ্রাইটিসের প্রকারভেদ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ দিতে হবে। যেকোনো আর্থ্রাইটিসে ব্যথা থাকে। তাই প্রথমে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। ব্যথা না কমলে অনেক সময় ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আর্থ্রাইটিস ভালো হয়ে যায় অনেকের।

তবে আর্থ্রাইটিসের কারণে যদি অস্থিসন্ধি বেঁকে যায়, অস্থিসন্ধি যেভাবে থাকার কথা যদি সেভাবে না থাকে এবং ওষুধ ও থেরাপি কাজ না করে, সেক্ষেত্রে কারো কারো ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় সার্জারির প্রয়োজন হয়। হাতের আঙ্গুল, হাঁটু বেঁকে গেলে প্রতিস্থাপনের সার্জারি করার কথাও বলেন ডা. ফয়সাল।

আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ ও খাদ্যাভ্যাস

ডা. ফয়সাল বলেন, আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে শরীরের ওজন যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির যত্ন নিতে হবে, জয়েন্টে যাতে কোনোভাবে আঘাত না লাগে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা না করা, দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটাহাঁটি না করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা, প্রতিদিন জয়েন্টের ব্যায়াম করতে হবে।

আর্থ্রাইটিসে অস্থিসন্ধি ও হাড়ের ক্ষয় রোধে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমন: দুধ ও দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার, রেড মিটের পরিবর্তে বেশি করে মাছ খেতে হবে। ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার, টক জাতীয় ফল, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, শীমের বীজ, সয়াবিন খাওয়া ভালো।

একই সঙ্গে রেড মিট অর্থাৎ গরু ও খাসির মাংস পরিহার করতে হবে, বাঁধাকপি, পালং শাক, গাজর, টমেটো, ডাল জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যে খাবার খেলে শরীরের ওজন বাড়ে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়া। কফি জয়েন্টের ক্ষতি করে, তাই কফি খাওয়া ভালো নয় আর্থ্রাইটিসের জন্য। এ ছাড়া ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Accolade for business icons

A garment business tycoon, an owner of a local conglomerate, a celebrated local steel giant, a well-known bank and a woman entrepreneur were felicitated at the 22nd Bangladesh Business Awards (BBA) for their outstanding efforts and landmark achievements in their respective business fields. 

6h ago