আক্কেল দাঁত কখন তুলে ফেলা উচিত, ব্যথায় কী করবেন

আক্কেল দাঁত
ছবি: সংগৃহীত

আক্কেল দাঁত ওঠার যন্ত্রণা ভয়াবহ রকমের। অনেকের আবার আক্কেল দাঁত তুলে ফেলারও প্রয়োজন হয়। আক্কেল দাঁত সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশিক আবদুল্লাহ্ ইমন।

আক্কেল দাঁত কী

ডা. আশিক আবদুল্লাহ বলেন, আক্কেল দাঁতকে ইংরেজিতে বলা হয় উইজডম টিথ। আক্কেল দাঁত সাধারণত মানুষের চোয়ালের সবচেয়ে পিছনের দাঁত, যেটি মাড়ির তৃতীয় মোলার দাঁত। সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই আক্কেল দাঁত ওঠে।

সাধারণত নিচের চোয়ালে দুটি এবং ওপরের চোয়ালে দুটি আক্কেল দাঁত ওঠে থাকে। কারো চোয়ালের ডানে-বামে দুই পাশেই আক্কেল দাঁত ওঠে, আবার অনেকের আক্কেল দাঁত ওঠে না অথবা আংশিকভাবে ওঠে থাকে।

আক্কেল দাঁত একটু একটু করে ওঠে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। যখন মাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা পায় না বা জায়গা কম থাকে তখন আক্কেল দাঁত ওঠার ক্ষেত্রে বাধা পায়, সহজে ওঠতে পারে না।

যখন বাধা পায় তখন বারবার ব্যথা হয়, দাঁত ওঠার চেষ্টা করে বা মাড়ি ভেদ করে আংশিক ওঠে। এরপর সেখানকার পেরিকোরোনাল টিস্যুতে খাবার জমে থাকার কারণে সংক্রমণ ও ব্যথা হয়। তখন মনে হয় দাঁতের কিছু অংশ উঠল। এরপর আবার সংক্রমণ ও ব্যথা কমে গেলে ভালো থাকে কিছুদিন, এরপর আবার ব্যথা হয়। এজন্যই সবার ধারণা আক্কেল দাঁত অল্প অল্প করে ওঠছে।

সাধারণত পর্যাপ্ত জায়গা পেলে আক্কেল দাঁত ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই ওঠে যায় এবং সেসময় ব্যথা ৩ থেকে ৫ দিন থাকে।

লক্ষণ

আদিম যুগের মানুষের চোয়াল গঠনগতভাবে বড় ছিল। রান্না করে খাবার খাওয়ার কৌশল তারা জানত না, শক্ত খাবার খেত। সেজন্য তাদের চোয়াল প্রশস্ত ছিল। যে কারণে আক্কেল দাঁত ওঠার সময় কোনো সমস্যা হতো না। বর্তমানে মানুষের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এসেছে, বেশিরভাগ খাবারই রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া গঠনগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে চোয়ালগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আক্কেল দাঁত ওঠতে বাধা পায় অনেক ক্ষেত্রে। এ সময় কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যেমন-

১. দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়

২. মাড়ির যেখানে দাঁত ওঠে সে স্থানে মাড়ি ফুলে যায়

৩. মাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে আক্কেল দাঁত বাঁকা হয়ে ওঠে এবং অনেক সময় বাঁকা হয়ে ওঠার কারণে পাশের দাঁতে ধাক্কা দেয়

৪. জ্বর আসতে পারে

৫. আক্কেল দাঁত ওঠার সময় টনসিল, গলার দিকে, চোয়ালের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে

৬. মাড়িতে লালচে ভাব হয়

৭. মুখ খুলতে কষ্ট হয়, খাবার খেতে সমস্যা হয়

করণীয়

ডা. আশিক আবদুল্লাহ বলেন, আক্কেল দাঁত ওঠার সময় যদি যন্ত্রণা হয় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

১. কুসুম গরম পানির মধ্যে লবণ দিয়ে গার্গল করা।

২. ব্যথার জন্য মুখ খুলতে কষ্ট হয় বলে অনেকে দাঁত ব্রাশ করতে চান না কিন্তু এসময় মুখ ও দাঁতের পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা বজায় রাখতে হবে। নয়তো সংক্রমণ বাড়তে পারে। এজন্য নিয়মিত দুই বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।

৩. সম্ভব হলে মাউথওয়াশ দিয়ে গার্গল করতে হবে।

৪. শক্ত খাবার না খেয়ে বরং সহজে খাওয়া যায় এমন নরম খাবার খেতে হবে।

৫. খুব বেশি ব্যথা হলে প্যারাসিটামল অথবা চিকিৎসকের পরামর্শে পেইনকিলার খেতে পারেন।

৬. অবস্থা যদি বেশি গুরুতর হয়ে যায়, যেমন- মুখ খুলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, সংক্রমণ হয়েছে, গাল ফুলেছে, সংক্রমণ হয়ে দুর্ঘন্ধযুক্ত তরল বা পুঁজ বের হচ্ছে অথবা গলা, কান ফুলেছে এমন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

তবে আক্কেল দাঁত ওঠার সময় যদি গাল অনেক বেশি ফুলে যায় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে নিষেধ করা হয়। গাল অনেক ফুলে গেলে বুঝতে হবে সেখানে সংক্রমণ হয়ে পুঁজ জমে গেছে, কারণ আক্কেল দাঁত ওঠতে বাধা পাচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে উপসর্গ কমাতে চাইলে গাল শক্ত হয়ে যাবে। কারণ পুঁজ বের হওয়ার রাস্তা পাবে না এবং যে কারণে দাঁত ওঠতে বাঁধা পাচ্ছে সেটিও দূর করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়।

এছাড়া গালের বাইরে কোনো ধরনের গরম সেঁক দেওয়া যাবে না ব্যথা কমানোর জন্য। গরম সেক দিলে পুঁজ আরো বেশি পরিমাণে জমবে এবং গালও বেশি ফুলবে। প্রয়োজনে ঠান্ডা সেক দেওয়া যেতে পারে।

আক্কেল দাঁত কখন তুলে ফেলা উচিত

ডা. আশিক আবদুল্লাহ বলেন, সবসময় সব আক্কেল দাঁত তুলে ফেলা বাধ্যতামূলক এমন নয়। যে দাঁতটি আংশিকভাবে ওঠেছে, বারবার ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছে না সেটিকে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।

বারবার সংক্রমণ বা পেরিকোনাইটিস সৃষ্টি করছে, বাঁকা হয়ে ওঠছে এবং পাশের দাঁতকে চাপ দিচ্ছে, ক্ষয় সৃষ্টি করছে এমন হলে আক্কেল দাঁত তুলে ফেলতে হবে।

দাঁত ওঠতে না পারার কারণে চোয়াল ফুলে দাঁতের পাশে সিস্ট বা টিউমার হয় এবং তার ভেতর দাঁত থাকে সেক্ষেত্রে টিউমার ও দাঁত দুটিই ফেলতে হবে।

সংক্রমণের কারণে গাল ফুলে সেলুলাইটিস এবং অ্যাবসেস হলে দাঁত তুলে ফেলতে হবে। আশপাশের হাড় এবং নিচের চোয়ালের নার্ভে চাপ দিলেও আক্কেল দাঁত তুলে ফেলতে হবে। তবে এ বিষয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

32m ago